পাকিস্তানীদের ভাঙা মন্দির মসজিদ গিরজা
আমরা আবার গড়ব
তাজউদ্দিন
ঢাকা, ২৮ ডিসেম্বর-বাংলাদেশে পাকিস্তানী দখলদার ফৌজ যেসব মন্দির, মসজিদ ও গিরজা ভেঙেছিল সেগুলির প্রত্যেকটি আবার নতুন করে গড়া হবে। এই সব ধর্মস্থানের মধ্যে রমনার বিখ্যাত কালীবাড়িটিও বয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শ্রীতাজউদ্দিন আহমেদ আজ এক সাংবাদিক সম্মেলন এই অঙ্গীকার ঘোষণা করেন। তাজউদ্দিন সাহেব আরও বলেন যে, স্বাধীন বাংলাদেশে কারও প্রতি ধর্মগত কারণে কোন বৈষম্য করা হবে না।
আন্তর্জাতিক আইন ও প্রথা মানা হবে
তিনি আরও বলেন যে, যুদ্ধবন্দীদের প্রতি আচরণ সম্পর্কে বাংলাদেশ সরকার আন্তর্জাতিক আইন ও প্রথা মেনে চলবেন।
তিনি বলেন যে, পাকিস্তান ভারত ও বাংলাদেশ উভয়ে বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছিল। তাই পাক ফৌজ এই দুই দেশেরই শত্রু।
তাজউদ্দিন বলেন যে, যতদিন দরকার ততদিন ভারতীয় বাহিনী বাংলাদেশে থাকবে।
তিনি বলেন যে, মারকিন যুক্তরাষ্ট্র বা অন্য কোন দেশের কাছেই বাংলাদেশ আত্মমর্যাদার বিনিময়ে কোন সাহায্য নেবেন না। বাংলাদেশের জনগণ ভিখারি নন।
বাঙালী জাতির লজ্জা
এর আগে অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম বলেন যে, নুরুল আমিন ও ত্রিদিব রায় বাঙালী জাতির লজ্জার কারণ। ব্যক্তিগতভাবে ওই দুজনকে তিনি করুণা করেন, কিন্তু ওই দুজন প্রত্যেকটি বাঙালীর মাথা নীচু করে দিয়েছেন। প্রসঙ্গত স্মরণীয় যে, ওই দুজন পাক প্রেসিডেন্ট ভুট্টোর তল্পিবাহক হয়েছেন।
পাক ফৌজের টাকা আটক
বাংলাদেশ সরকার এক আদেশবলে বাংলাদেশের ব্যাঙ্কগুলিতে পাকিস্তানী ফৌজের সব টাকাকড়ি শেয়ার সিকিউরিটি ও জিনিসপত্র আটক করেছেন এবং পাক দখলদার প্রশাসন যেসব তহবিল আটক করেছিল সেগুলি মুক্ত করেছেন।
একটি মন্দির সংস্কৃত
চট্টগ্রাম থেকে বত্রিশ কিলোমিটার দূরবর্তী জয়ারা নামক স্থানে পাক ফৌজ ও তাদের অনুগামীরা মিলেমিশে একটি মন্দিরকে মসজিদে পরিণত করেছিল। পাক ফৌজ আত্মসমর্পণ করার পর আওয়ামী লীগের মুক্তি পরিষদের উদ্যোগে যথাবিহিত সংস্কারের পর মন্দিরটি পুনঃ প্রতিষ্ঠা করা হয়।
দৈনিক আনন্দবাজার, –ইউএনআই, ২৯ ডিসেম্বর ১৯৭১
সূত্র: আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম ও মুক্তিযুদ্ধ ১৯৭১ . ১ম খণ্ড – মুনতাসীর মামুন