বাংলাদেশ পুনর্গঠনে ভারত ৪০০ কোটি টাকা দেবে
সুখরঞ্জন দাশগুপ্ত
ঢাকা, ২৬ ডিসেম্বর-বাংলাদেশের পুনর্গঠনের জন্য ভারত আগামী জানুয়ারি মাস নাগাদ বাংলাদেশ সরকারকে প্রায় ৪০০ কোটি টাকা দেবে। গত তিন চারদিন ধরে বাংলাদেশ সরকার ও ভারত সরকারের প্রতিনিধিদের মধ্যে দীর্ঘ আলোচনার পর মোটামুটি ওই সিদ্ধান্তের কথা জানা যায়। এখানে একজন সরকারী মুখপাত্র বলেন ভারত আরও আর্থিক সাহায্য দিয়ে যাবে।
গত ৯-১০ মাসে পাক বাহিনী যে ব্যাপক ধ্বংস করে গিয়েছে তা মেরামতের ব্যাপারে সরকারকে পরামর্শ দেওয়ার জন্য বাংলাদেশ সরকার একটি যোজনা কমিশন নিয়োগ করেছেন। কমিশনের চেয়ারম্যান হলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞানের প্রধান অধ্যাপক মুজাফর আহমেদ চৌধুরী।
সরকারীসূত্রে আরও জানা যায় ওই কমিটি জেলাগুলির ক্ষয়ক্ষতি সম্পর্কে তদন্ত করে দেখেছেন—পুর্নগঠনের জন্য এক বছরে ৭৫০-৮০০ কোটি টাকার প্রয়োজন হবে। বাংলাদেশ সরকার নিজস্ব সম্পদের মাধ্যমে বছরে ২৫০ কোটি টাকার বেশি সংগ্রহ করতে পারবে না। সরকার আরও স্থির করেছেন, প্রতিটি গ্রাম- শহরে একই ধাঁচের বাড়ি নির্মাণ করে শরণার্থীদের পুনর্বাসন করা হবে। কত বাড়ি নির্মাণ করা হবে তা এখনই হিসাব করা হয়নি, তবে স্বরাষ্ট্র ও পুনর্বাসন মন্ত্রী বলেন ৫০ লক্ষের কম নয়।
নতুন পুলিশ বাহিনী
২৫ মার্চের আগে বাংলাদেশে নিয়মিত পুলিশ ছিল প্রায় ৪২ হাজার। ঠিক কত পুলিশ পশ্চিমী খানদের হাতে মারা গিয়েছে তা এখনও জানা যায়নি। তবে প্রতিটি থানা নতুন করে গড়ে তোলার ব্যবস্থা হচ্ছে। মুক্তি বাহিনীর কিছু কর্মীকে পুলিশ বাহিনীতে নিয়োগ করার সম্ভাবনা আছে।
কলকারখানা
বাংলাদেশে প্রায় ৩২০০ ছোট মাঝারি কলকারখানা আছে। এইগুলির মধ্যে শতকরা ৩০টি কারখানার মালিক পশ্চিম পাকিস্তানের লোক। সরকার ইতিমধ্যে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, পাকিস্তানীদের কারখানা জাতীয়করণ করে প্রশাসক নিয়োগ করবেন।
জানুয়ারি থেকে ভারত-বাংলাদেশ ব্যবসা-বাণিজ্য
জানুয়ারি মাস থেকে ভারত বাংলাদেশ ব্যবসা-বাণিজ্য শুরু হচ্ছে। আপাতত সরকারী পর্যায়ে এই ব্যবসা-বাণিজ্য চলবে। টাকা বা “বিনিময়ের ভিত্তিতে” এই ব্যবসা শুরু হচ্ছে। সম্ভবতঃ ভারত ও বাংলাদেশের বাণিজ্যিক সুবিধার জন্য মুদ্রার মান প্রায় কাছাকাছি থাকবে। এ ব্যাপারে সর্বোচ্চ স্তরে কথাবার্তা শুরু হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ দূত শ্রীদুর্গাপ্রসাদ ধর এবং ভারতের অন্যান্য অফিসারদের সঙ্গে বাংলাদেশ সরকারের প্রতিনিধিদের-আলোচনার কালে উভয় দেশই ব্যবসা- বাণিজ্য প্রতিষ্ঠার উপর গুরুত্ব আরোপ করেন। বাংলাদেশের একজন মন্ত্রী আমাকে বলেন ভারতের সঙ্গে ব্যবসা শুরু করা আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইস্তাহারে একটি দাবি ছিল।
১৯৬৫ সালের আগে উভয় বাংলায় নিয়ন্ত্রিত ব্যবসা-বাণিজ্য বজায় ছিল। সাত বছর পর পুনরায় ভারত-বাংলাদেশ বাণিজ্য শুরু হওয়ায় ঢাকার বণিক সভাগুলি খুশী। বণিক সভার একজন মুখপাত্র বলেন উভয় দেশের মধ্যে বছরে ২৫০০-৩০০০ কোটি টাকার লেনদেন হওয়ার সম্ভাবনা আছে।
চাল চাই না—অন্য জিনিস দিন
বাংলাদেশ সরকার ভারত সরকারকে জানিয়েছেন, বাংলাদেশে এবছর চালের প্রয়োজন হবে না। কিন্তু এখন প্রয়োজন লবণ, কেরোসীন পেটরোল দিয়াশলাই প্রভৃতি নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্য।
দৈনিক আনন্দবাজার, ২৭ ডিসেম্বর ১৯৭১
সূত্র: আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম ও মুক্তিযুদ্ধ ১৯৭১ . ১ম খণ্ড – মুনতাসীর মামুন