You dont have javascript enabled! Please enable it! 1971.10.21 | বাংলাদেশের জন্য বিদেশ থেকে অস্ত্রশস্ত্র সংগ্রহের চেষ্টা হচ্ছে - আওয়ামী লীগের বৈঠকে যুদ্ধপরিস্থিতি পর্যালোচনা | আনন্দবাজার - সংগ্রামের নোটবুক

বাংলাদেশের জন্য বিদেশ থেকে অস্ত্রশস্ত্র সংগ্রহের চেষ্টা হচ্ছে
আওয়ামী লীগের বৈঠকে যুদ্ধপরিস্থিতি পর্যালোচনা

মুজিবনগর, ২০ অক্টোবর-বিদেশ থেকে অস্ত্রশস্ত্র সংগ্রহ করার জন্য বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ওয়ারকিং কমিটি বিদেশের কয়েকটি দেশের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন করছেন বলে নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা গেল।
বুধবার এখানে ওয়ার্কিং কমিটির বৈঠকে ওই প্রসঙ্গে নিয়ে আলোচনা হয়। বাংলাদেশের অস্থায়ী প্রেসিডেন্ট সৈয়দ নজরুল ইসলামের সভাপতিত্বে এই গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকে ৪৩ জন সদস্য উপস্থিত ছিলেন। আজ বৃহস্পতিবারও বৈঠক চলবে। বৈঠকে উপস্থিত সদস্যরা দেশের স্বাধীনতা রক্ষার দৃঢ় সংকল্প পুনরায় ঘোষণা করেন।
সকাল দশটায় দলের নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমানের প্রতিকৃতির সামনে সদস্যগণ উপস্থিত হয়ে এক শোক প্রস্তাবে জঙ্গীশাহীর বর্বর অত্যাচারে যে দেশবাসীগণ এবং দেশের স্বাধীনতার জন্য যে সব যোদ্ধা প্রাণ দিয়েছেন তাঁদের আত্মার উদ্দেশে ‘মাগফেরাত’ (প্রার্থনা) করেন।
একটানা প্রায় আটঘণ্টা বৈঠকে দলের প্রায় ১০ জন সদস্য যুদ্ধকালীন পরিস্থিতি নিয়ে বক্তৃতা দেন।
রাত্রে আওয়ামী লীগের একজন মুখপাত্র বলেন, দলের সাধারণ সম্পাদক, প্রধানমন্ত্রী শ্রী তাজুদ্দিন আমেদ এক দীর্ঘ রিপোর্ট দেন। শ্রী আমেদ তাঁর রিপোর্টে যুদ্ধের পরিস্থিতি, মুক্তিবাহিনীর অগ্রগতি, মুক্তাঞ্চলে প্রশাসনিক ব্যবস্থা প্রভৃতির উল্লেখ করেন।
তাঁর ওই রিপোর্টের উপর ভিত্তি করে সদস্যরা আলোচনায় অংশ গ্রহণ করেন। জানা যায়, বৈঠকে একাধিক প্রস্তাব আনা হয়েছে। এই প্রস্তাবগুলির উপর সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
নির্ভরযোগ্যসূত্রে জানা যায়, মুক্তিবাহিনীর গেরিলা ইউনিটগুলির সঙ্গে আওয়ামী লীগের প্রত্যক্ষ যোগাযোগের যে ব্যবস্থা আছে তা আরও জোরদার করার জন্য বৈঠকে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
সরকারিভাবে এদিন বলা হয়, মন্ত্রিসভার সদস্যগণ ছাড়া ওয়ার্কিং কমিটির দু’জন মহিলা সদস্য শ্রীমতি নুরজাহান মুরশেদ ও শ্রীমতি বদুরুন্নেসা আমেদও উপস্থিত ছিলেন।

তাজুদ্দিনের বক্তৃতা
সাধারণ সম্পাদক, প্রধানমন্ত্রী শ্রী তাজুদ্দিন আমেদ তাঁর প্রতিবেদনে দ্ব্যর্থহীন ভাষায় ঘোষণা করেন গত বছর ডিসেম্বর মাসে বাংলাদেশের নির্বাচনে সেখানকার সাড়ে সাত কোটি মানুষ তাঁর দলের উপর যে গুরুদায়িত্ব দিয়েছেন তা রক্ষা করতেই হবে। বাংলাদেশ থেকে যত তাড়াতাড়ি পাকিস্তানী হানাদারদের তাড়িয়ে দেওয়ার জন্য যে কোন সাহায্য তারা গ্রহণ করবেন। যুদ্ধে পাকিস্তানী হানাদার বাহিনীর নির্যাতনের এক বিবরণ দিয়ে তিনি প্রতিটি আওয়ামী লীগ কর্মীকে এ ব্যাপারে সক্রিয় ভূমিকা নেওয়ার দায়িত্ব স্মরণ করিয়ে দেন।
জানা যায়, ভারত-সোবিয়েত মৈত্রী চুক্তির কথা উল্লেখ করে বৈঠকে সন্তোষ প্রকাশ করা হয়৷
আজ বৃহস্পতিবার এক দীর্ঘ মূল প্রস্তাব আনা হবে। জানা গেল, এই প্রস্তাবে বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে ভারতের জনগণের ভূমিকার কথা উল্লেখ থাকবে।
দৈনিক আনন্দবাজার, ২১ অক্টোবর ১৯৭১

সূত্র: আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম ও মুক্তিযুদ্ধ ১৯৭১ . ১ম খণ্ড – মুনতাসীর মামুন