বাংলাদেশের সার্বভৌম সরকার প্রতিষ্ঠিত
সার্বভৌম বাংলাদেশ-আনুষ্ঠানিকভাবে এই নবীন গণতান্ত্রিক প্রজাতান্ত্রিক রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠার কথা ঘোষিত হল।
আগরতলা থেকে আমাদের প্রতিনিধি অমিয় দেব রায় জানাচ্ছেন : নব গঠিত সরকারের সদস্য সংখ্যা ছয়। সর্ব শীর্ষে শেখ মুজিবর রহমান-প্রেসিডেন্ট। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক তাজুদ্দিন আহমদ নির্বাচিত হয়েছেন প্রধানমন্ত্রী আর খোন্দকার মুস্তাক আহমদ এই প্রজাতান্ত্রিক রাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী। উপরাষ্ট্রপতির নাম সৈয়দ নজরুল ইসলাম, অন্য দুজন মন্ত্রী ক্যাপটেন মনসুর আলী এবং এ এইচ কামরুজ্জামান।
সীমান্তের ওপার থেকে বিশ্বস্ত সূত্রে পাওয়া খবর, আওয়ামী লীগের বিশিষ্ট একজন নেতা বাংলাদেশের কোন স্থান থেকে নতুন সরকার গঠনের কথা ঘোষণা করেন। জাতীয় পরিষদের সদস্যবৃন্দ এবং আওয়ামী লীগের নেতাদের মধ্যে উচ্চপর্যায়ে দীর্ঘ আলোচনার পর এই সরকার গঠিত হয়।
মন্ত্রিসভার বর্তমান কাজ হবে যুদ্ধকালীন ক্যাবিনেটের মত। নানা রণাঙ্গনে মুক্তি সংগ্রাম ও সংগ্রামী যোদ্ধাদের মধ্যে সমন্বয় সাধনই হবে এর লক্ষ্য।
এই সংবাদ কোচবিহার ও অন্যান্য সীমান্ত অঞ্চলে অবস্থিত আমাদের সংবাদদাতাদের দ্বারা সমর্থিত। পি টি আইও এই খবর দিয়েছেন।
আমাদের পাক-রাজনীতির ভাষ্যকার জানাচ্ছেন :
আওয়ামী লীগের পঞ্চ প্রধানের এক গোপন বৈঠকে সরকার গঠনের সঙ্গে সঙ্গেই যে সমস্যাগুলি উঠবে শুধু সেগুলি নিয়েই আলোচনা হয়েছে। যেমন, (ক) রাজধানী কোথায় হবে, (খ) বিভিন্ন রাষ্ট্রের স্বীকৃতি পাওয়া, (গ) নিজেদের মুদ্রা প্রচলন করা, (ঘ) সাফল্যের সঙ্গে যুদ্ধ চালিয়ে শত্রুকে পরাজিত করা এবং (ঙ) দেশের অর্থনীতিকে বাঁচিয়ে রাখা।
বৈঠকে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় যে : (ক) রাজধানী এমন এক জায়গায় হবে যা শত্রু কবলমুক্ত এবং সীমান্তবর্তী অঞ্চল, (খ) স্বীকৃতির জন্য লিখিতভাবে ও বেতারে বিভিন্ন রাষ্ট্রের কাছে আবেদন জানান হবে এবং সরকার হলে “বাংলাদেশে”র পররাষ্ট্রমন্ত্রী তাঁদের আবেদন পেশ করতে রাষ্ট্রপুঞ্জ এবং অন্যান্য কয়েকটি দেশের রাজধানীতে যাবেন। (গ) যত তাড়াতাড়ি সম্ভব নিজেদের নোট ছাপা হবে। নোটের পিছনে শক্তি জোগাতে সোনা সংগ্রহ করা হবে, (ঘ) সর্বশক্তি দিয়ে যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়া হবে এবং যে সব রাষ্ট্র “বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দেবে তাদের কাছে প্রয়োজন হলে সরকারীভাবে সামরিক সাহায্যের অনুরোধ জানান হবে, (ঙ) আপাতত পাট, মাছ ও মাছের রফতানী করে বৈদেশিক বাণিজ্য শুরু করা হবে। বৈদেশিক সাহায্য ও ঋণের জন্যেও আবেদন জানানো হবে।
স্বাধীন বাংলাদেশ সরকার গঠনের কথা ঘোষণা করার পর নেতারা প্রথমেই যা বলবেন বলে শোনা যাচ্ছে তা হলো : আমরা অবাধ নির্বাচনে জনসাধারণের ভোটে নির্বাচিত সংখ্যাগরিষ্ঠ এবং আইনসম্মত গণ-প্রতিনিধি। অতএব আমাদের দ্বারা গঠিত বাংলাদেশ সরকার সম্পূর্ণ বৈধ এবং আইনসঙ্গত স্বীকৃতি পাবার যোগ্য।
দৈনিক আনন্দবাজার, ২২ এপ্রিল ১৯৭১
সূত্র: আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম ও মুক্তিযুদ্ধ ১৯৭১ . ১ম খণ্ড – মুনতাসীর মামুন