You dont have javascript enabled! Please enable it!

মুজিবনগর আম্রকুঞ্জে আনুষ্ঠানিক ঘোষণা
নতুন রাষ্ট্র নতুন জাতি জন্ম নিল

মুজিবনগর, ১৭ এপ্রিল-একটি রাষ্ট্র আজ সকালে আনুষ্ঠানিকভাবে নিল এই নতুন নগরে-সে রাষ্ট্রের নাম গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ প্রজাতন্ত্র। সাড়ে সাত কোটি বাঙালীর স্বাধীন সার্বভৌম দেশ। তার লগ্নে আকাশে থোকা থোকা মেঘ ছিল। তার লগ্নে চারটি ছেলে প্রাণ ঢেলে “আমার সোনার বাংলা, আমি তোমায় ভালবাসি” গানটি গাইল। তার লগ্নে পবিত্র কোরাণ থেকে তেলাওয়াৎ করা হল। তার লগ্নে সহস্র কণ্ঠে জয়ধ্বনি উঠল ‘জয় বাংলা’।
নতুন নগরের নাম মুজিবনগর। বাংলা নাম বৈদ্যনাথতলা। কুষ্টিয়ার মেহেরপুর মহকুমার বৈদ্যনাথতলা। বিরাট বিশাল বিস্তৃত প্রাচীন আম্রকুঞ্জ। সেই আম্রকুঞ্জে নতুন রাষ্ট্রের অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম ঘোষণা করলেন : পলাশীর আম্রকাননের যুদ্ধে ১৭৫৭ সালে বাংলাদেশ তার স্বাধীনতা হারিয়েছিল। আজ সেই প্রাচীন জেলারই এক আম্রকাননের নীচে ১৯৭১ সালে সেই স্বাধীনতা ফিরে নিল, সব নিল স্বাধীন বাংলাদেশ রাষ্ট্র।
হ্যাঁ পুরোপুরি বাংলাদেশ। পুরোপুরি বাঙালী অনুষ্ঠান। বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা উড়ল। অস্থায়ী রাষ্ট্রপ্রতি সশস্ত্র বাহিনীর অভিবাদন নিয়ে জবাব দিলেন বাংলায়। নতুন রাষ্ট্রের ঘোষণাপত্র পড়া হল বাংলায়। অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি তাঁর ঐতিহাসিক ভাষণ দিলেন বাংলায়। প্রধানমন্ত্রী সকলকে স্বাগত জানালেন বাংলায়। সমবেত জনতা জয়ধ্বনি দিলেন বাংলায়।
আম্রকুঞ্জ। কচি কচি পাতা বাতাসে দুলছে। আকাশে মেঘের আনাগোনা। নিল নতুন সোনার বাংলাকে ভালবাসার উদাত্ত কণ্ঠের গান। তারই মধ্যে বাংলাদেশ। বার বার মনে পড়ছিল শান্তিনিকেতনের আম্রকুঞ্জে সমাবর্তন উৎসবের সজ্জা। সেই একই রূপ। সেই একই রুচি। শুধু আরও কিছুটা অনাড়ম্বর।
রাষ্ট্রপতি মুজিবুর রহমান আজ তাঁদের মধ্যে ছিলেন না। তাই অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম রাষ্ট্রপতির পক্ষে নতুন রাষ্ট্রের আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা করলেন। বললেন মন্ত্রীদের নাম। জানালেন প্রধান সেনাপতি পদে করনেল ওসমানির নিয়োগের সংবাদ। ঘোষণা করলেন নতুন সরকারের নীতি। নতুন রাষ্ট্রের পক্ষে বিশ্ববাসীর কাছে আবেদন জানালেন কূটনৈতিক স্বীকৃতি এবং সামরিক সাহায্যের।
মুজিব ছিলেন না। কিন্তু নতুন রাষ্ট্রের হল মুজিবনগরে। নতুন রাষ্ট্রের লগ্নে বার বার শোনা গেল মুজিবের নাম। প্রতি নেতার কণ্ঠে। প্রতি মানুষের মুখে। “জয় বাংলা” ধ্বনির সঙ্গে সঙ্গে উঠল “জয় মুজিবর” ধ্বনি।

অনুষ্ঠান
লড়াই চলছে। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর ভাষায় “পশ্চিম পাকিস্তানী হানাদাররা বর্বর আক্রমণ চালাচ্ছে। তাই এই অনুষ্ঠান সম্পর্কে গোড়া থেকেই গোপনীয়তা অবলম্বন করা হয়। ওদের ভাব ছিল, আগে ভাগে স্থান কাল জানোনো হলে পাক হানাদাররা বিমান আক্রমণ চালাবে। তাই, আগেভাগে স্থান কাল কাউকে জানানো হয়নি। শুধু কলকাতার সমবেত বিদেশী এবং ভারতীয় সাংবাদিকদের জানানো হয়েছিল। শনিবার সকাল ছটায় কলকাতা প্রেস ক্লাবে সমবেত হবেন। জরুরী সংবাদ আছে।
সেই নির্দেশ মত সকালে আমরা সওয়াশ স্বদেশী ও বিদেশী সাংবাদিক সমবেত হলাম প্রেস ক্লাবে। বাংলাদেশের একজন প্রতিনিধি এলেন এসময়ে। এসে বললেন : বন্ধুগণ, আমি আপনাদের বাংলাদেশে স্বাগত জানাতে এসেছি। ভদ্রলোক এগোলেন একখানা জীপে। আমরা চললাম তাঁর পিছনে পেছনে-যে যার নিজে নিজ গাড়িতে। তখনও জানানো হয়নি গন্তব্যস্থল তখনও বলা হল না অনুষ্ঠানের কথা।
জীপকে অনুসরণ করতে করতে আমরা গিয়ে পড়লাম কৃষ্ণনগরে। এখানে একটু থামলাম। সব গাড়িগুলো আবার সমবেত হল। তারপর সব গাড়ি আবার সেই জীপের পিছনে ছুটল উত্তরে। বেশ কয়েক মাইল গেলাম। ছাড়িয়ে গেলাম সীমান্ত। কাঁচা রাস্তা। সেই রাস্তা ধরে ধীরে ধীরে এগোতে হল। সারি দেওয়া চলতি গাড়ির ধুলোতে সব দিক ছেয়ে গেল। তারপর এল বৈদ্যনাথতলা। তারপর আম্রকুঞ্জ। বিরাট সমবেত জনতা। অতি উৎসাহী ছেলেরা সব গাছের ডালে ডালে উঠে বসেছে।
টেলিভিশনের সাহেব আর মেমসাহেবরা ছুটে গেলেন দশদিকে। এখনও নতুন রাষ্ট্রের কর্ণধাররা আসেননি। তখনও কিছু কিছু উদ্যোগ আয়োজন চলছে। সেই ছবি তুললেন তারা প্রাণভরে। ছেলেরা গুণ গুণ করে গান গাইছিল “আমার সোনার বাংলা”। ওরা গায়কদের ছবি তুললেন। গান টেপ করলেন। তোরণে বাংলায় লেখা স্বাগতম। ওরা জিজ্ঞেস করলেন : হোয়াটস দ্যাট। ব্যাপারটা বুঝে নিয়ে তারও ছবি তুললেন বেশ কয়েক ফুটে। ছেলেরা গাছে ঝুলছে, তারও ছবি উঠল। মুক্তিসেনারা রাইফেল হাতে অ্যাটেনশনে হয়ে দাঁড়িয়ে। ঘুরিয়ে ফিরিয়ে কাছে গিয়ে গিয়ে ছবি তুললেন তাঁদের।
বেলা ১১টা ১০ মিনিট। পশ্চিম দিক থেকে এলেন নেতারা। সমবেত জনতা জয়ধ্বনি দিলেন। অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম প্রথমে নিলেন সশস্ত্র বাহিনীর অভিবাদন। তারপর সবাই এলেন মঞ্চে।
ছোট্ট ছিমছাম মঞ্চ। মঞ্চের উপর পর পর ছয়খানা বড় চেয়ার পাতা। বাঁ পাশে মঞ্চের নীচে হালকা কয়েক খানা চেয়ার। সামনে লেখা “সাংবাদিক”। আর এক পাশে আরও কয়েকখানা চেয়ার। লেখা ‘অতিথি’। নেতারা মঞ্চে এসে চেয়ারে বসলেন। প্রথমে উপরাষ্ট্রপতি। তারপর প্রধানমন্ত্রী তাজুদ্দিন। তারপর মন্ত্রী খন্দকার মুসতাক আহমদ, ক্যাপটেন মনসুর আলি, জনাব কামরুজ্জামান এবং সেনাপতি কর্নেল উসমানি। স্বেচ্ছাসেবকের পুষ্পবৃষ্টি করে তাঁদের অভিবাদন জানালেন।
আবদুস [ল] মান্নান বলে গেলেন অনুষ্ঠানসূচী। প্রথমেই নতুন রাষ্ট্রের ঐতিহাসিক দলিল ঘোষণা-পত্র পাঠ করলেন দলের চীফ হুইপ ইউসুফ আলি। কীভাবে নতুন রাষ্ট্র চলবে, কী তার লক্ষ্য, কার কী দায়িত্ব-বিস্তারিত বলা হয়েছে এই দলিলে।
তারপর উঠে দাঁড়ালেন অস্থায়ী সভাপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম। পায়জামা আর পাঞ্জাবী পরনে। সুরুতেই তিনি বললেন : অস্থায়ী রাষ্ট্রপ্রতি হিসাবে আমি তাজুদ্দিন আহমদেকে প্রধানমন্ত্রী পদে নিয়োগ করেছি এবং তাঁর পরামর্শক্রমে আরও তিনজনকে মন্ত্রীরূপে নিয়োগ করেছি। একে একে তিনি পরিচয় করিয়ে দিলেন প্রধানমন্ত্রী এবং তাঁর তিন সহকর্মীর সঙ্গে। তারপর ঘোষণা করলেন প্রধান সেনাপতি পদে কর্নেল উসমানির নিয়োগ। আর বললেন, সেনাবাহিনীর চীফ অফ স্টাফ পদে নিয়োগ করা হয়েছে আবদুর রবকে।

মুজিবের প্রতি কৃতজ্ঞতা
তিনি বার বার মুজিবর রহমানের কথা বললেন। তাঁর প্রতিভা, ব্যক্তিত্ব, স্বার্থত্যাগ এবং বিরাট রাজনৈতিক জীবনের বর্ণনা দিলেন। বললেন : তিনি আজও আমাদের মধ্যে আছেন। তাঁর নির্দেশে আমরা কাজ করছি।
তিনি সর্বশেষে বললেন : আজ এই আম্রকাননে একটি নতুন জাতি নিল। বিগত ২৩ বছর যাবৎ বাংলার মানুষ তাঁর নিজস্ব সংস্কৃতি, নিজস্ব ঐতিহ্য, নিজ স্ব নেতাদের নিয়ে এগোতে চেয়েছেন। কিন্তু পশ্চিম পাকিস্তানী কায়েমী স্বার্থ তা ওরা দিল না। ওরা আমাদের উপর আক্রমণ চালিয়েছে। আমরা নিয়মতান্ত্রিক পথে এগোতে চেয়েছিলাম ওরা তা দিল না। ওরা আমাদের উপর বর্বর আক্রমণ চালাল। তাই আমরা আজ লড়াইয়ে নেমেছি। এ লড়াইয়ে আমাদের জয় অনিবার্য। আমরা পশ্চিম পাকিস্তানী হানাদারদের বিতাড়িত করবই। আজ না জিতি কাল জিতব। কাল না জিতি পরশু জিতবই।”
বললেন : আমরা বিশ্বের সব রাষ্ট্রের সঙ্গে শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান চাই। পরস্পরের ভাই হিসাবে বসবাস করতে চাই। মানবতার, গণতন্ত্রের এবং স্বাধীনতার জয় চাই। সমবেত জনতা দীর্ঘস্থায়ী করতালধ্বনি দিয়ে তাঁর ভাষণকে স্বাগত জানালেন।
তারপর উঠলেন প্রধানমন্ত্রী তাজুদ্দিন। প্রথমে তিনি বাংলায় বক্তৃতা দিলেন। সবাইকে স্বাগত জানালেন। অবশেষে, বিদেশী সাংবাদিকদের জন্য ইংরেজিতে লেখা এক দীর্ঘ বিবৃতি পড়লেন।
সেই দীর্ঘ বক্তৃতাই বিদেশী সাংবাদিকরা সবাই টেপ করে নিলেন। কিন্তু তাতেও তাঁরা সন্তুষ্ট নন। তাঁরা বললেন: মিঃ প্রাইমমিনিস্টার, কিছু প্রশ্ন আছে। ওদের প্রথম প্রশ্ন হল : তোমাদের দখলে এখন পূর্ব বাংলার কতটা অঞ্চল আছে?
প্রধানমন্ত্রী জবাব দিলেন : গোটা দেশ শুধু কয়েকটা সামরিক ঘাঁটি বাদে। সাড়ে সাত কোটি বাঙালীর এইটাই রাষ্ট্র। ওরা হানাদার। ওদের আমরা তাড়াবই।

অস্থায়ী রাষ্ট্রপতির ভাষণ
অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম (৪৮) সামনে এসে ঘোষণা করলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান আমাদের মহান নেতা। আমাদের অবিসংবাদী নেতার অনুপস্থিতির জন্য আমি অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি হিসাবে শপথ নিয়েছি। (জনতার বিপুল হর্ষধ্বনি)।
শ্রীইসলাম বলেন, যে কোন কারণেই হোক বঙ্গবন্ধু প্রত্যক্ষভাবে সরকারের দৈনন্দিন কাজ চালাতে পারছেন না। তাঁর উপদেশ ও নির্দেশ অনুযায়ী এই দায়িত্ব গ্রহণ করেছি। স্বাধীন বাংলাদেশের জনগণতান্ত্রিক সরকার পরিচালনার জন্য আমি শ্রীতাজুদ্দিন আহমেদকে প্রধানমন্ত্রিরূপে নিয়োগ করেছি এবং প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে পরামর্শ করে খোন্দকার মোসতাক আহমেদ সাহেবকে পররাষ্ট্র মন্ত্রী, শ্রীমনসুর আলি ও শ্রীকামারুজ্জামানকে মন্ত্রী পদে নিয়োগ করেছি এবং মন্ত্রিসভার সঙ্গে পরামর্শ করে মুক্তিবাহিনীর প্রধান হিসাবে কর্নেল উসমানিকে প্রধান সেনাপতি এবং কর্নেল আবদুর রবকে চীফ অব স্টাফ পদে নিয়োগ করেছি।
‘আপনারা জানেন, পশ্চিম পাকিস্তানের শোষণ এবং শাসন থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য গত ২৩ বছর ধরে বঙ্গবন্ধু সব কিছু পরিত্যাগ করে আন্দোলন করেছেন। তিনি চেয়েছিলেন, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক এবং সাংস্কৃতিক অধিকার। আমি জোর দিয়ে বলছি তিনি আমাদের মধ্যে আছেন। জাতির সঙ্কটের সময় আমরা তাঁর নেতৃত্ব পেয়েছি। তাই বলছি পৃথিবীর মানচিত্রে আজ যে নতুন রাষ্ট্রের লগ্নের সূচনা হল তা চিরদিন থাকবে। পৃথিবীর কোন শক্তি তা মুছে দিতে পারবে না।
আমরা চেয়েছিলাম শান্তিপূর্ণ ভাবে আমাদের অধিকার আদায় করতে। লজ্জার কথা, দুঃখের কথা ওই পশ্চিমীরা শের-ই বাংলাকে দেশদ্রোহী আখ্যা দিয়েছিল। শহীদ সরওয়ারদি সাহেবকে কারাগারে পাঠিয়েছিল। তাই ওদের সঙ্গে আপস নেই। নেই ক্ষমা৷
আমাদের রাষ্ট্রপতি জনাব শেখ মুজিবুর বাংলার মানুষের রাজনৈতিক অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক অধিকারের জন্য ১৯৬৬ সালে যে ৬ দফা কর্মসূচী গণ করেছিলেন, ১৯৭১ সালে নির্বাচনের মাধ্যমে সাড়ে সাত কোটি বাঙালী তা মেনে নিয়েছেন। কায়েমী স্বার্থে এতে আঘাত এল। এরা উঠে পড়ে লাগলেন আমাদের খতম করার জন্য। তা ওদের বলে দিতে চাই তোমরা তা পারবা না।
সারা বিশ্ববাসীকে আমরা বলতে চাই-২৫ মার্চ রাতের অন্ধকারে কারফু না দিয়ে সামরিক বাহিনীর ঝুনটা ঢাকা শহরে বুদ্ধিজীবীদের খুন করতে শুরু করেছে। (শেম শেম) হাজার হাজার নিরস্ত্র নাগরিককে গুলি করা হল। বাংলার নারীরা ইজ্জত হারাল। তাঁদের কি অপরাধ। বিশ্বের জনগণের কাছে এর বিচার চাই। উপস্থিতি বিদেশী সাংবাদিকদের উদ্দেশে বলেন, আপনারা বলুন আমাদের কি অপরাধ। আমরা স্বাধীনতা, ন্যায় বিচার চেয়েছিলাম। আমাদের কেন গুলি করা হল। তাই পৃথিবীর ছোট বড় সকল রাষ্ট্রের কাছে আমাদের আবেদন আপনারা আমাদের সাহায্যে এগিয়ে আসুন।’
রাষ্ট্রপতি তাঁর ৩০ মিনিটব্যাপী বক্তৃতায় আরও বলেন পশ্চিম পাকিস্তানের সামরিক বাহিনীর অত্যাচার বাংলার মানুষ গ্রহণ করেন নি। বাংলার মানুষ কাপুরুষ নয়। আমরা বাঙালীরা স্বাধীনতার জন্য লড়তে জানি। যুবক ছাত্র, তাঁরা আজ সৈনিক। সৈনিকের ভূমিকা নিয়েছে ই পি আর. আনসার. এদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে তিনি বলেন, যুদ্ধ এসে গিয়েছে। এই যুদ্ধ স্বাধীনতার অস্তিত্বের যুদ্ধ। পৃথিবীর মানচিত্রে বাঙালীর অস্তিত্বের যুদ্ধ।
শ্রীইসলাম বলেন হাটেবাজারে, নদী নালায় আমার সৈনিকরা লড়েছেন, লড়ছেন, লড়বেন। তাঁরা এই দেশের জন্য রাজনৈতিক স্বাধীনতা, অর্থনৈতিক মুক্তি ও সংস্কৃতির বেড়াজাল ভেঙে জয়লাভ করবেন।
আমরা সাড়ে সাত কোটি বাঙালী আজ আত্মনিয়ন্ত্রণের জন্য মনের দিক থেকে সঙ্ঘবদ্ধ৷
অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি দৃঢ়তার সঙ্গে বলেন, আমরা পরাজিত হওয়ার জন্য যুদ্ধে নামিনি। বাঙালী জনতা জেগে উঠেছে। জাগ্রত জাতি হিসাবে পৃথিবীর সঙ্গে সহঅবস্থান করতে চাই।
যুগ যুগ ধরে মনীষীরা মানব মুক্তির জন্য পথ দেখিয়ে গিয়েছেন। আমাদের এই জয় হবে মানবতার জয়। গণতন্ত্রের জয়।
স্বাধীনতা, গণতন্ত্র ও মানবতার সে আদর্শ সামনে রেখে আমাদের মহান নেতার নির্দেশে আমরা রাষ্ট্র পরিচালনা করতে চাই।
আবার তিনি পশ্চিম সাংবাদিকদের উদ্দেশে বলেন, আপনারা জেনে যান আমাদের রাষ্ট্র ও সরকার আছে থাকবে। আপনারা আমাদের এই সরকারকে স্বীকৃতি দিতে সাহায্য করুন।
বক্তৃতা শেষ করার আগে অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি জোর দিয়ে বলেন, স্বাধীন বাংলাদেশের এক খণ্ড জমিতেও শত্রু রাখব না। রাখব না। ইনশাহাআল্লা-জয় বাংলা।
দৈনিক আনন্দবাজার, ১৮ এপ্রিল ১৯৭১

সূত্র: আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম ও মুক্তিযুদ্ধ ১৯৭১ . ১ম খণ্ড – মুনতাসীর মামুন

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!