You dont have javascript enabled! Please enable it! 1971.04.18 | পূর্বগগনে অরুণোদয় | আনন্দবাজার - সংগ্রামের নোটবুক

পূর্বগগনে অরুণোদয়
পার্থ চট্টোপাধ্যায়

মুজিবনগর, ১৭ এপ্রিল- আজকের মুক্তি সংগ্রামের এই অরুণোদয় না দেখলে হয়ত জীবন অসম্পূর্ণ থেকেই যেত। মাত্র কয়েক মাইল দূরে গতকাল পাক বোমারু বিমানের বোমার বারুদের গন্ধ এখনও বাতাস থেকে মিলিয়ে যায়নি। অথচ আজ এখানে শত শত মুক্তিফৌজ আর হাজার হাজার মুক্তিকামী জনতার মুখ দেখে মনে হচ্ছিল যে কোন দীর্ঘস্থায়ী সংগ্রামের জন্য তারা প্রস্তুত। এখানকার আম্রকুঞ্জ বার বার মুখরিত হয়ে উঠেছিল, জয় বাংলা ধ্বনিতে।
প্রায় ১০০ বিঘা পরিমাণ এই আম্রকুঞ্জ। ঠিক শান্তিনিকতনের মত আশ্রমিক পরিবেশ। এখানে মুক্ত অঙ্গনে তৈরি হয়েছিল মঞ্চ। ওপরে কার্পেট পাতা। তার ওপর সারি সারি চেয়ার। দড়ি দিয়ে ঘেরা সংরক্ষিত এলাকা। স্বাধীন বাংলার পতাকা দন্ডের সামনে সশস্ত্র মুক্তিফৌজ।
আর একটু দূরেই ইতিহাসের সেই মহাসন্ধিক্ষণে সাথী থাকবার জন্য হাজির হয়েছিলেন শত শত গ্রামবাসী। ওরা বাংলাদেশের চাষী। ওরাই স্বাধীন বাংলার নাগরিক।
একটা বিধ্বস্ত রণাঙ্গনের অতি কাছে যে দাঁড়িয়ে আছি তা মনে হচ্ছিল না। মনে হচ্ছিল আমি শান্ত বাংলাদেশেরই কোন নিভৃত গ্ধি গ্রামে বসে রয়েছি। চারিদিকে সুস্থ স্বাভাবিক জীবনযাত্রার চিহ্ন বহু মহিলাও এসে হাজির হয়েছিলেন এই অনুষ্ঠানে। আর অনাদিকালে বাংলাদেশের আদুল গায়ে সেই সব পল্লীবালকেরা সভার চারপাশে জড় হয়ে মনের সুখে ফোটোগ্রাফারদের ফেলে দেওয়া ফ্ল্যাশ বালবগুলি কুড়িয়ে বেড়াচ্ছিল।
দৈনিক আনন্দবাজার, ১৮ এপ্রিল ১৯৭১

সূত্র: আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম ও মুক্তিযুদ্ধ ১৯৭১ . ১ম খণ্ড – মুনতাসীর মামুন