You dont have javascript enabled! Please enable it!

দালাল খতম

ঢাকা থেকে প্রাপ্ত খবরে জানা যায় যে খোদ ঢাকা শহরেই মুক্তিবাহিনীর গেরিলা তৎপরতা আশাতীতভাবে বেড়ে গেছে। ফলে পাক দালালরা তো বটেই সৈন্যরাও ভীত সন্ত্রস্ত হয়ে উঠেছে। মুক্তিবাহিনীর গেরিলারা নবেম্বর মাসের ১লা থেকে ৭ তারিখের মধ্যে মোট ২৩ জন দালালকে হত্যা করেছেন। তারমধ্যে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত একজন তথাকথিত পরিষদ, সদস্যও রয়েছে। তার নাম সুলতান উদ্দিন খান। এই দালাল একজন মুসলীম লীগ পন্থী, তাকে নারায়ণগঞ্জ থেকে বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত করা হয়েছে। তাকে প্রকাশ্য দিবালোকে ঢাকা- নারায়ণগঞ্জ রাস্তায় চাষাড়ায় গুলি করে হত্যা করা হয়েছে। তারই সাথে খুলনার কুখ্যাত সবুর খানের ঘেটু হিসাবে পরিচিত কুখ্যাত আমির হোসেনকেও হত্যা করা হয়েছে। তাদের সাথী অপর এক দালাল আহত হয়েছে। রেডিও পাকিস্তানের পাঞ্জাবীী সামরিক শাসকচক্র ও তাদের দালাল পুলিশ-রাজাকাররা এখনও পর্যন্ত ‘হত্যাকারীদের’ কোন সন্ধান করতে পারেনি।
এর আগে মুক্তিবাহিনীর গেরিলারা আইয়ুবের— গর্দভ কুখ্যাত মোনেম খানকে ষ্টেনগানের গুলীতে হত্যা করে এবং পরে গোরস্তান থেকে তার লাশ তুলে নিয়ে নদীতে নিক্ষেপ করে। দালালদের মনে যে ত্রাসের সঞ্চার করেছে তারা এখনও তা কাটিয়ে উঠতে পারেনি।
এছাড়া গেরিলারা কাইয়ুম খান পন্থী কনভেনশন লীগের সাধারণ সম্পাদক খান আবদুস সবুর খানের ঢাকাস্থ বাসভবনে গত ৪ঠা নবেম্বর বোমা বিস্ফোরণ ঘটিয়েছে। দালাল সবুর অল্পের জন্য প্রাণে বেঁচে গিয়েছে। তবে ওয়াকেফহাল মহলের ধারণা সবুর খানের দিন শেষ হয়ে এসেছে।
এছাড়া গেরিলারা ৪ঠা নবেম্বর নৌ-বাহিনীর একজন পদস্থ অফিসারের ৪ পুত্রকে মেশিনগানের গুলিতে নিহত করেছে। তার পত্নী এবং একটি শিশু সন্তান আহত হয়েছে। গেরিলারা আলোচ্য নৌ-অফিসারের বাসগৃহে মেশিনগানের গুলি চালায়।
উক্ত অফিসার ও তার এক পুত্র বাঙ্গালী হয়েও নগ্নভাবে পশ্চিমাদের দালালী করছিল।
একইদিনে গেরিলারা ঢাকার একটি বিশেষ এলাকায় তিনজন দোকানদারকে গুলি করে হত্যা করেছে। এরা জোর করে বাঙ্গালীদের এই দোকানগুলো ভোগদখল করছিল।
এতো গেল দালাল হালাল করার দিক। অন্যদিকে গেরিলারা ঢাকা- নারায়ণগঞ্জ রেল যোগাযোগ বানাচাল করে দিয়েছে। তারা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়েও একটা বোমা বিস্ফোরণ ঘটায়। ফলে দালালদের যে দু’চারজন সন্তান বিশ্ববিদ্যালয়ে আসত তারাও এখন আসা বন্ধ করে দিয়েছে। তার আগে গেরিলারা ঢাকা শহরের কাছে সৈন্যবাহী একখানা নৌকা ডুবিয়ে দিয়ে ৫ জনকে হত্যা ও ৬ জনকে আহত করেছে। সৈন্যরা তেজগাঁও থেকে বেরইল হয়ে নৌকা যোগে ঢাকায় আসছিল।
ঢাকা শহরে বিদ্যুৎ সরবরাহ ব্যবস্থা অচল করে দেয়া তো নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। গেরিলারা প্রায়ই ডেমরা ও কাঞ্চনের বিদ্যুৎ সরবরাহ কেন্দ্ৰ অচল করে দেন।
অন্যদিকে সামরিক বাহিনী ও পুলিশ বাহিনীর বিক্ষোভও এতদিনে দাগ বেঁধে উঠেছে। প্রকাশ, বাংলাদেশে ‘কাফের নিধনের’ জন্য পশ্চিম পাকিস্তান থেকে আনা পুলিশ বাহিনী বাড়ী ফেরার জন্য অস্থির হয়ে উঠেছে। তারা নাকি একটা নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে দেশে ফেরৎ না পাঠালে বিদ্রোহের হুমকী দিয়েছে।
একটি বিদেশী সংবাদ সরবরাহ সংস্থার প্রতিনিধি এ প্রশ্ন পুলিশের ইন্সপেক্টর জেনারেলকে জিজ্ঞেস করলে তিনি বিদ্রোহের কথা অস্বীকার করলেও “নির্দিষ্ট ৬ মাসের সময় সীমা উত্তীর্ণ হওয়ার পর পুলিশরা ঘরে ফিরতে উদগ্রীব” বলে জানিয়েছেন।
জয়বাংলা ॥ ১ :২৭ ॥ নভেম্বর, ১৯৭১

সূত্র: আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম ও মুক্তিযুদ্ধ ১৯৭১ . ১ম খণ্ড – মুনতাসীর মামুন

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!