You dont have javascript enabled! Please enable it!

বাঙলাদেশে
তরুণ অফিসাররা প্রশাসন ব্যবস্থা চালু রেখেছেন

ব্রাহ্মণবাড়িয়া, ৮ এপ্রিল (ইউ এন) – পাকবাহিনীর সরকারী প্রশাসন যন্ত্রকে বানচাল করার প্রচেষ্টা ব্যর্থ করে দিয়ে দেশের মুক্ত অঞ্চলে অফিসাররা বে-সামরিক প্রশাসন ব্যবস্থা সংগঠিত করেছে।
এখানে প্রাপ্ত সংবাদে জানা যায়, বাঙলাদেশের জনগণের উপর পাকবাহিনী ঝাঁপিয়ে পড়ার পর প্রায় ৩ সপ্তাহব্যাপী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুরের কতৃত্বই প্রকৃত পক্ষে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।
চিফ সেক্রেটারি, পুলিসের জেনারেল ইন্সপেক্টর কমিশনার ডেপুটি কমিশনারের মত উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের প্রায় গ্রেপ্তারের মত অবস্থায় রাখা হয়।
পশ্চিম পাকিস্তানী অফিসাররা পাক বাহিনীর পক্ষে চলে যায়।
সামরিক কর্তৃপক্ষ মনে করেছিল উক্ত অবস্থায় বে-সামরিক প্রশাসন ভেঙে পড়বে।
কিন্তু দেশ প্রেমিক তরুণ অফিসাররা জেলায় জেলায় প্রশাসন যন্ত্রকে ভেঙ্গে যাবার হাত থেকে রক্ষা করেছেন।
কুমিল্লা জেলার এই ব্রাহ্মণবাড়িয়া মহকুমায় বাঙলাদেশের প্রজাতন্ত্র ঘোষণার পর সৈন্যবাহিনী ডেপুটি কমিশনারকে গ্রেপ্তার করে। অধিকাংশ মহকুমা শাসকই তাদের কর্মস্থল ত্যাগ করে চলে যায়। কিন্তু জনৈক তরুণ এস ডি ও কর্মস্থলেই শুধু রইলেন না, তিনি কুমিল্লা জেলার অধিকাংশ স্থানেরই দায়িত্ব কাঁধে তুলে নিলেন।
উক্ত এস-ডি এ প্রথমেই নাগরিক রক্ষার ব্যবস্থা গ্রহণ করলেন। তিনি শরণার্থীদের জন্য শিবির খুললেন। তিনি থানায় থানায় সংবাদ সরবরাহ কেন্দ্র স্থাপন করলেন। জনসাধারণ গুজবের পরিবর্তে সঠিক সংবাদ যাতে পেতে পারে তজ্জন্য উক্ত ব্যবস্থা করলেন। তাঁহার পরামর্শ অনুযায়ী জনসাধারণ একটি স্থানে খাদ্যসামগ্রী জড় করল। মুক্তিবাহিনীর জন্য সমস্ত সম্ভাব্য যানবাহন যোগাড় করা হল।
তিনি পূর্ত, চিকিৎসা, কৃষি এবং অন্যান্য বিভাগের কাজকর্মের ব্যবস্থা করলেন। তিনি কৃষকদের জন্য ট্রাক্টটারের ব্যবস্থা করলেন। তিনি দমকলবাহিনী সংগঠিত করলেন।
পুলিসের কাজ চালাবার জন্য তিনি নতুন নতুন অফিসার ও কনেস্টবল সংগ্রহ করলেন। তিনি টেলিফোন, উচ্চ বিভাগের কাজ, বিদ্যুৎ ও জল সরবরাহ পুনরুদ্ধার করলেন। যে সমস্ত মুসলমানরা পঞ্চমবাহিনীর কাজে লিপ্ত হয়ে সৈন্যবাহিনীর সাহায্যে এসে দাঁড়াল তাদের তিনি খুঁজে বের করার জন্য ব্যবস্থা গ্রহণ করলেন।
এখানে প্রাপ্ত সংবাদে জানা যায়, বাঙলা দেশের অন্যান্য স্থানেও তরুণ অফিসাররা অনুরূপ উৎসাহ উদ্দীপনা নিয়ে প্রশাসন ব্যবস্থা চালু রেখেছেন। তাঁদের অভিজ্ঞতা কম থাকলেও তাঁদের দেশপ্রেম ও স্বাধীন বাংলা গড়ার একান্ত প্রয়াসে এবং জনসাধারণের সহযোগিতায় নবজাত প্রজাতন্ত্রের বে-সামরিক শাসন ব্যবস্থা স্থাপনে তাঁরা বাধা বিঘ্ন অতিক্রম করে এগিয়ে চলেছেন।
দৈনিক কালান্তর, ১০ এপ্রিল ১৯৭১

সূত্র: আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম ও মুক্তিযুদ্ধ ১৯৭১ . ১ম খণ্ড – মুনতাসীর মামুন

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!