You dont have javascript enabled! Please enable it! 1971.11.02 | অধিকৃত এলাকায় উপনির্বাচনের নামে দালালদের গণপ্রতিনিধি বানাইবার জল্লাদী কারসাজি | বাংলার বাণী - সংগ্রামের নোটবুক

অধিকৃত এলাকায় উপনির্বাচনের নামে
দালালদের গণপ্রতিনিধি বানাইবার জল্লাদী কারসাজি

বাংলাদেশের দখলীকৃত এলাকায় মুক্তিযোদ্ধাদের প্রচন্ড গেরিলা তৎপরতা এবং জঙ্গী শাহীর অবশ্যম্ভাবী পতনের মুখে দখলীকৃত এলাকয় জঙ্গীশাহীর উপনির্বাচন অনুষ্ঠানের স্বপ্ন ধুলিস্যাৎ হইয়া গিয়াছে। অবস্থা বেগতিক দেখিয়া জঙ্গীশাহী উপনির্বাচন অনুষ্ঠানে সাহস পাইতেছে না। তদুপরি, পিন্ডির রাজনৈতিক চক্রান্তের জারজ সন্তানদের মধ্যে যাহারা জল্লাদ ইয়াহিয়ার পা চাটিয়া কামান-মর্টার আর ট্যাংকের গোলা বারুদের ধূম্রজালের ছত্রছায়ায় থাকিয়া উপনির্বাচনে দাঁড়াইবার স্বপ্ন দেখিতেছিল— বাংলাদেশের জনগণ কর্তৃক গত নির্বাচনে ঘৃণার সহিত প্রত্যাখ্যাত হইয়া ছিল ইহারাওআর প্রাণভয়ে প্রকাশ্যে নির্বাচনী মাঠে নামিতে সাহস পায় নাই। কার, জনগণের কাছে ভোট ভিক্ষায় বাহির হইলে কেহই ঘরে ফিরিয়া আসিতে পারিবে না। তাই ইসলামাবাদ জল্লাদশাহীর সেই পদলেহী ভূঁইফোড় রাজনীতিবিদরা প্রকাশ্য নির্বাচনে নামিতে তাহাদের অক্ষমতার কথা জঙ্গী শাহীকে জানাইয়া দেয় এবং তাহাদিগকে নির্বাচন ছাড়াই নির্বাচিত বলিয়া ঘোষণা করিতে আব্দার জানায়। ইসলামাবাদের সামরিক চক্রও দেখিল প্রস্তাব একেবারে মন্দ নয়। এত ঢাক- ঢোল পিটাইয়াও যদি উনির্বিাচন না করা যায় তাহা হইরে মুখ থাকিবে না। কাজেই এই সহজ উপায় অবলম্বন করা যাইতে পারে।
জঙ্গীচক্র বাংলাদেশের দখলীকৃত এলাকায় সকল দালালকে মসনদে বসাবে। কিন্তু, অন্যান্য দাললদের মধ্যে আসন ভাগাভাগির পর ফরিদ আহমদ মিয়ার ভাগে কেবল নিজের আসনটিই পড়ে এবং কেবল একটি আসন লইয়া তাহার মন্ত্রী হইবার কোন আশা নাই। তাই সে গোস্সা করিয়া সরিয়া দাঁড়াইয়াছে।
পিন্ডি ইসলামাবাদের বাছাই করা জারজ সন্তান ফজলুল কাদের চৌধুরী, সবুর খান, ওয়াহিদুজ্জামান, মাহমুদ আলী, খাজা খায়ের উদ্দিন, মোসলেহউদ্দিন, শফিকুল ইসলাম প্রমুখ ৩৩ জনকে বিনা নির্বাচনেই নির্বাচিত বলিয়া ঘোষণা করা হইয়াছে বলিয়া জানা যায়। রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের মতে অন্ততঃ জাতীয় পরিষদের সদস্য হিসাবে এইবার এই জানোয়ারের দল ইসলামাবাদ সাম্রাজ্য পাড়ি দিয়া আত্মরক্ষা করিতে সুযোগ পাইবে। কারণ, এতদিন ইহাদিগকে ইসলামাবাদ সাম্রাজ্যে আত্মগোপন করার জন্য অনুমতি দিতেও জঙ্গীচক্র রাজী হয় নাই। ইহারা জানে যে, বাংলাদেশের মাটিতে ইহাদের আর ঠাঁই হইবে না।
এদিকে ক্ষমতালোভী ভূট্টোকে ইয়াহিয়া শেষ পর্যন্ত কাঁচকলাই দেখাইল। ভুট্টোর দল হইতে বাংলাদেশের দখলীকৃত এলাকায় দুই তিনটি বাদে আর প্রার্থী দাঁড় করাইবার সুযোগ দিল না। অথচ ভুট্টো তাহার দলের ভাইস-চেয়ারম্যান মাহমুদ আলী কাসুরীকে ঢাকায় পাঠাইয়াছিল প্রার্থী খুঁজিয়া বাহির করার জন্য। কিন্তু কাসুরী ঢাকা আসিয়া পা রাখিতেই সব আসন ভাগ বাটোয়ারা হইয়া নির্বাচন ছাড়াই শূন্যপদ পূরণ হইতে চলিয়াছে। কাসূরী ভূট্টোর মাথায় ইহা এক নিষ্ঠুর বজ্রপাত ছাড়া আর কি।
তবে জাতীয় পরিষদের শূন্য আসনে বিনা নির্বাচনে নির্বাচিত বলিয়া যাহারা নাম লিখাইয়াছে তাহাদের নামের তালিকাটি মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য জল্লাদ ইয়াহিয়াই প্রস্তুত করিয়া দিয়াছে। ইতিহাসের বিচারে একদিন ইহাই রায় হইবে এবং সেদিন খুব বেশী দূরে নয়।
বাংলার বাণী ॥ ১০ সংখ্যা ॥ ২ নভেম্বর, ১৯৭১

সূত্র: আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম ও মুক্তিযুদ্ধ ১৯৭১ . ১ম খণ্ড – মুনতাসীর মামুন