রাজাকারদের জন্য শেষ সুযোগ
(নিজস্ব ভাষ্যকার)
বাংলার মুক্তিযুদ্ধের ব্যাপকতা ও প্রচন্ডতা বৃদ্ধির সাথে সাথে পশ্চিম পাকিস্তানী হানাদার পশুদের মনে এক বিভীষিকাময় আতঙ্কের কালো ছায়া রেখাপাত করেছে। স্বাধীনতা মন্ত্রে দীক্ষিত মুক্তিযোদ্ধা ও গেরিলাদের অতর্কিত আক্রমণে পাক বাহিনী দিশেহারা, সদ্য শঙ্কিত। নিতান্ত প্রাণের দায়ে বা মুখ রক্ষার খাতিরে এরা আজ ভগ্নমনে লড়ে যাচ্ছে। এরা এতই শঙ্কিত যে, যেকোন অভিযানে তাবেদার রাজাকার ছাড়া একপাও এগুতে সাহস পাচ্ছে না। রাজাকার নামক এইসব ‘বকরী গুলো এতদিন খুঁটির জোরে বহু কুঁদেছে। আজ খুঁটি ভেঙ্গে পড়ার উপক্রম দেখে বহু রাজাকার দলে দলে মুক্তিবাহিনীর কাছে অস্ত্রশস্ত্র সমেত আত্মসমর্পণ করে চলেছে।
পায়ের তলা থেকে যখন মাটি সরে যাচ্ছে, পালে যখন উল্টো হাওয়া বইতে শুরু করেছে তখন ইদ্দিন যারা ধর্মীয় বিভ্রান্তি, প্রলোভন বা সাময়িক মোহের বশতি হয়ে অথবা লুটপাটের দরাজ সুযোগ লাভের জন্য সেনাবাহিনীর তল্পাবাহক হয়ে স্বাজাতি নিধন যজ্ঞে, অগ্নিসংযোগ ও লুন্ঠনে লিপ্ত ছিল তারা আজ সম্বিত ফিরে পাচ্ছে ক্রমশঃ। তাই দলে দলে এরা আত্মসমর্পন করে চলেছে। রাজাকারদের কাছে শেষ সুযোগ এসেছে। এদের ভেবে দেখা উচিত কার জন্য বা কিসের জন্য এরা আত্মবলিদান করে চলেছে। একবারও কি এরা ভাবছে না যে স্বাধীন বাংলায় এদের কি অবস্থা হবে। বাঙ্গালী হয়ে বাঙ্গালীর প্রতি এই ক্ষমাহীন আচরণের জন্য তাদের শাস্তি পেতেই হবে। আর স্বাদেশদ্রোহীতার বা স্বাধীনতা সংগ্রামের বিরোদের একমাত্র শক্তিই হলো মৃত্যুদন্ড।
এখন কিছু সময় বাকী আছে। আজও যদি এরা মুক্তাঞ্চলে চলে আসে, কৃতকর্মের অনুশোচনা করে, তবে আমরা তাদেরকে পথভোলা মানুষ বলে পরিপূর্ণ নাগরিকের মর্যাদা দেব। যার যা অস্ত্রশস্ত্র আছে তাইসমেত আত্মসমর্পণ করে আত্মপক্ষ সমর্থনের শেষ সুযোগ এসেছ রাজাকারদের কাছে।
বাংলাদেশ ॥ ১ ঃ 22 ॥ ২২ নভেম্বর, ১৯৭১
সূত্র: আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম ও মুক্তিযুদ্ধ ১৯৭১ . ১ম খণ্ড – মুনতাসীর মামুন