খুনী মওদুদী কি বলছে
১৯৫৩ সালে লাহোরে মজহাবী খুনীর তালিকায় শীর্ষস্থান অধিকার দাঙ্গা বাধিয়ে ১০ সহস্র কাদিয়ানীকে হত্যা করে যে মওলানা মওদুদী বিশ্বে করেছেন সেই মওলানা মওদুদী বাংলাদেশে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর জল্লাদদের কার্যকলাপের এক ‘ইসলামী যুক্তি’ আবিষ্কার করেছেন। বাংলা দেশে পশ্চিম পাকিস্তানী জল্লাদরা যে ব্যাপক গণহত্যা চালিয়ে যাচ্ছে তার সমর্থনে বিশ্বের মুসলিম রাষ্ট্র প্রধানদের কাছে লিখিত এক পত্রে মওলানা মওদুদী বলেছেন যে বাঙালী মুসলমান ও হিন্দুতে তেমন কোন তফাৎ নেই, এবং বাঙালী মুসলমানদের হিন্দুতে ধর্মান্তর রোধ করার জন্যই পাকিস্তান সেনাবহিনী কয়েক লাখ বাঙালী মুসলমানকে হত্যা করেছে। বাঙালী মুসলমানদের নির্বিচারে হত্যা করে পশ্চিমা সৈন্যরা সওয়াবের কাজই করছে বলে মওদুদী প্রকারান্তরে মুসলীম রাষ্ট্রপ্রধানদের বুঝাতে চেয়েছেন। মওলানা মওদুদী তার পত্রে ইসলামের স্বার্থে পাক সেনাবাহিনী বাঙালী হত্যার যে কর্মসূচী নিয়েছে তার পথে কোন বাধা সৃষ্টি না করার জন্য রাষ্ট্রপ্রধানদের অনুরোধ করেছেন।
পশ্চিম পাকিস্তানের কুখ্যাত ২২ পরিবারের বেতনভোগী দালাল মওদুদী কি কারণে বাংলা দেশের বর্তমান গণহত্যার প্রশ্নে ধর্মের প্রসঙ্গ টেনে এনেছেন বা কি কারনে বাঙালী মুসলমানদের ধর্মের দিক থেকে হিন্দু বানিয়ে ছেড়েছেন তা আমাদের জানা নেই। বাংলাদেশে আজ হিন্দু-মুসলমান কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে পশ্চিমা শোসক ও জল্লাদদের বিরুদ্ধে লড়ছেন বলেই কি মওদুদী এমনটা চটে গেছেন। অথবা গত নির্বাচনে বাংলা দেশের হিন্দু-মুসলমান মওদুদীর লেবাস সর্বস্ব জামাতকে ভোট দেয়নি বলেই কি তিনি এমনভাবে ক্ষেপেছেন। কিন্তু প্রশ্ন জামাতকে ভোট না দিলে যদি মুসলমানদের ধর্ম নষ্ট হয়ে যায় তা হলে পশ্চিম পাকিস্তানের মুসলমানরাও তো কাফের হয়ে গেছে। কেননা, বাংলা দেশের মানুষের মত তারাও তো গত নির্বাচনে মওদুদীর জামাতকে ভোট দেয়নি।
তাছাড়া, হিন্দু-মুসলমান একসাথে বসবাস করলেই যদি মুসলমানের ধর্ম নষ্ট হয়, তা হলে মওদুদী নিজেও তো একজন বিধর্মা। কেননা, মওদুদীর বাপ-দাদারা পূর্ব পাঞ্জাবে হিন্দু ও শিখদের সাথে বসবাস করতেন। সে ক্ষেত্রে যদি তাদের ধর্ম নষ্ট হয়ে গিয়ে থাকে তাহলে বিধর্মীর পুত্র মওদুদীও তো একজন বিধর্মী। কই, আমরা তো কোনদিন শুনিনি যে মওদুদী পাকিস্তানে আগমনের পর নতুন করে ইসলাম ধর্মে দীক্ষিত হয়েছেন।
জয় বাংলা ॥ ১ : ২ ॥ ১৯ মে, ১৯৭১
সূত্র: আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম ও মুক্তিযুদ্ধ ১৯৭১ . ১ম খণ্ড – মুনতাসীর মামুন