মুক্তিযোদ্ধারা দালালদের খতম করে চলেছে
বাংলা দেশের রাজনৈতিক এতিম এবং পশ্চিম পাঞ্জাবী প্রভুদের পদলেহনকারী রাজনৈতিক বিশারদ খানে সবুরের দক্ষিণ হস্ত বলে পরিচিত সরোয়ার মোল্লা গত ১৩ই জুন মুক্তি বাহিনীর হাতে খতম হয়েছে।
খুলনার গুন্ডাধিপতি খান-এ সবুরের এই কুখ্যাত চেলা নিশ্চিহ্ন হওয়ায় খুলনা ও যশোরের জনসাধারণ হাঁফ ছেড়ে বেঁচেছেন।
খুলনা থেকে আমাদের বিশেষ প্রতিনিধি আরও জানিয়েছেন যে, জনৈক কিশোর মুক্তি যোদ্ধা সারোয়ার মোল্লার মুন্ডু কেটে নিয়ে মুক্তিবাহিনীর নিকটস্থ শিবিরে উপস্থিত করে। মুক্তিবাহিনী দস্যু সরদার সারোয়ার মোল্লার বাড়ী থেকে দুটি ষ্টেনগান, দুটি রাইফেল, দুটি ডবল ব্যারেল বন্দুক এবং একটি রিভলবার উদ্ধার করেন।
উল্লেখযোগ্য যে, উক্ত সারোয়ার মোল্লা মোনেমী আমলে প্রাদেশিক পরিষদের একজন সদস্য ছিলেন। খুলনায় তিনি অনেক অঘটনের নায়ক।
সাম্প্রতিককালে তিনি আদাজল খেয়ে পাক দস্যু বাহিনীকে খুলনার বাঙ্গালী নিধনে সক্রিয় ভাবে সাহায্য করেন এবং সাঙ্গপাঙ্গদের নিয়ে খুলনা যশোরে বেপরোয়া লুঠতরাজ চালান।
খুলনা থানার অন্তর্গত দামোদর গ্রামে নিজ বাড়ীতেই তাকে সকাল ৭ টায় মুক্তি বাহিনী হত্যা করেন। তাঁরা এই কুখ্যাত দস্যু সরদারকে বহু দিন থেকে খুঁজতে ছিল। প্রকাশ, তার নিরাপত্তার জন্য অবাঙ্গালী টাউটদের নিয়ে গঠিত একটি রাজাকার বাহিনী ছিল। ঘটনার দিন উক্ত রাজাকার বাহিনী কিছুক্ষণ গোলাগুলী চালিয়ে মুক্তি বাহিনীর প্রবল আক্রমণের মুখে টিকে থাকতে না পেরে শেষে “চাচা আপন পরান বাঁচা’ পথ অবলম্বন করে সরে পড়ে। সারোয়ার মোল্লাও নিজ ভবনের দোতলা থেকে মুক্তিযোদ্ধাদের দিকে গুলী ছুঁড়তে থাকে।
মুক্তিযোদ্ধাদের গুলীতে সে মাটিতে ঢলে পড়ে। এ সময় জনৈক কিশোর মুক্তি যোদ্ধা তার মুন্ডু কেটে নেয়।
প্রকাশ, সরোয়ার মোল্লার স্ত্রী মুক্তিযোদ্ধাদেরকে টাকার একটা বিরাট পুটলা দেয় এবং তাঁর স্বামীকে হত্যা না করার অনুরোধ জানায়। কিন্তু মুক্তিযোদ্ধারা ঘৃণা ভরে টাকার পুটলী প্রত্যাখান করে বলেন যে, আমরা টাকা লুঠ করতে আসিনি, আমরা বাংলার মীরজাফরদের খতম করতে এসেছি।
এ ঘটনার পর পাক দস্যু বাহিনীর কর্ণেল শমসের নেতৃত্বে পশ্চিম পাঞ্জাবী দস্যুরা গান বোটে এসে গ্রামের উপর ব্যাপক গোলা বর্ষণ করে। তারা ফুলতলা থানার ও-সি জনাব হাবিবুর রহমানকে গ্রেফতার করে নিয়ে যায়।
আমাদের প্রতিনিধি আর ও জানান যে, গত জুন মাসে মুক্তি যোদ্ধারা খুলনা ও যশোর জেলার বিভিন্ন স্থানের ৭/৮ জন চেয়ারম্যান সহ মোট ১৩০ জন দালাল খতম করেছেন। তন্মধ্যে কালিয়া থানার ওসি, কালিয়ার কুখ্যাত গুন্ডা খলিল, কোতওয়ালী থানার বয়রা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান সিদ্দিক মিয়া, সবুরের পোষা গুন্ডা বয়রার টুই বিশ্বাস প্রভৃতি উল্লেখযোগ্য।
গত মাসে যশোর কোতওয়ালী থানার অন্তর্গত নড়াইল রোডের পাশে গ্রামবাসিগণ ১৩/১৪ জন দুর্বৃত্তকে হত্যা করেন। প্রকাশ, প্রায় ৪৫ জন দুর্বৃত্ত গ্রামের জনৈক মুসলমান অবিবাহিতা তরুণীকে ধরে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলে বীর গ্রামবাসিরা দুর্বৃত্তদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ান এবং তরুণীটি দুর্বৃত্তদের হাত থেকে উদ্ধার করেন।
জয়বাংলা ॥ ১ : ১০ ॥ ১৬ জুলাই, ১৯৭১
সূত্র: আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম ও মুক্তিযুদ্ধ ১৯৭১ . ১ম খণ্ড – মুনতাসীর মামুন