মহামারী সৃষ্টি করতে
পাকি গুপ্তচররা কলেরার জীবাণু ছাড়াচ্ছে
(স্টাফ রিপোর্টার)
কলেরা মহামারী রূপে ছড়িয়ে পড়েছে পশ্চিমবঙ্গ, আসাম, ত্রিপুরা, মেঘালয়ে। সরকারের হাতে যে সব তথ্য এসেছে- তাতে জানা গেছে এই মহামারী সৃষ্টির কাজটি সম্পূর্ণভাবে করছে পাক গুপ্তচররা। প্রধানত জলের মধ্যে কলেরার জীবাণু মিশিয়ে দিয়ে গুপ্তচররা কাজ হাসিল করছে। ইতিমধ্যে কলেরার জীবাণু ছাড়াতে গিয়ে পশ্চিমবঙ্গ ও আসামে কয়েকজন পাক গুপ্তচর ধরাও পড়েছে। পাক সামরিক বাহিনী এই কলেরার জীবাণু ছড়াবার কাজ শুধু উদ্বাস্তুদের জন্যই করছে এমন নয়,– মহামারী যাতে সারা বাঙলাদেশে ছড়িয়ে পড়ে ও আরো কয়েক লক্ষ বাঙালি মহামারীতে মারা যায় পাকিস্তানি চক্রের এটাও লক্ষ। এই কাজের জন্য পাকিস্তান থেকে ভারতে আসবার পথে সমস্ত জলাশয়ে এই জীবাণু ছড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে এবং ভারতে এসে ভারত থেকে বাঙলাদেশমুখী নদীগুলোতে এই জীবাণু ছড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে। সম্প্রতি ভারত থেকে বাঙলাদেশের অভ্যন্তরে গেছে ; এমন দুইটি নদী— যথা টাঙন ও পূনর্ভবা নদীর মাইলের পর মাইল এলাকায় নদীর মাছ ভেসে ওঠে। অনুসন্ধান করে দেখা যায়, নদীর জল জীবাণু দিয়ে বিষাক্ত করে দেওয়া হয়েছে। ফলে এই সব মাছ মরে গেছে। পুলিশ তৎপর হয়ে মালদা জেলার রতুয়া থানাতে একটি চক্রকে হাতে নাতে ধরে ফেলে, যাঁরা এই জীবাণু ছড়াচ্ছিল। একই রকম ঘটনা আসামেও ঘটেছে।
পাকিস্তানের অন্তর্ঘাতমূলক মহামারী চালানের ফলে সত্যিই ভারত সরকারের বিশেষ করে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের অবস্থা শোচনীয় হয়ে উঠেছে। হাজার হাজার রোগীকে রাখবার স্থান বা চিকিৎসা করার কোন ব্যবস্থাই করা সম্ভব নয়। ফলে সর্বত্র শত শত রোগী বিনা টিকিৎসায় মারা যাচ্ছে। মৃতদেহগুলো সৎকার পর্যন্ত সম্ভব হচ্ছে না, রাস্তা-ঘাটে শিয়াল কুকুর খাচ্ছে। এর মধ্যে সম্ভবত সবচেয়ে শোচনীয় অবস্থা নদীয়া জেলায় বিশেষ করে কল্যাণী অঞ্চলের। কয়েক লক্ষ মানুষ এসে আশ্রয় নিয়েছে কল্যাণীরমতো ছোট একটি শহরে। কল্যাণীর জহরলাল নেহেরু হাসপাতালটি সর্ব সময়ের জন্য ভর্তি রয়েছে রোগীতে। হাসপাতালে রোগীদের ঠাঁই হবার মতো জায়গা নেই তেমনি নেই ক্তারডা ও অন্যান্য স্টাফ। রোগীদের বেশির ভাগ পড়ে থাকছে হাসপাতালের চাতালে বারান্দায় ও করিডোরে, আশপাশের গাছতলায়। অনেক রোগী হাসপাতালে পৌঁছাবার আগেই মারা যাচ্ছে। সেই মৃতদেহগুলো ফেলে রাখা হচ্ছে পথে পথে গাছতলায়। হাসপাতালে মৃতদেহ রাখবার জায়গারও সঙ্কুলান হচ্ছে না আবার হাসপাতাল থেকে মৃতদেহ অপসারণেরও যথেষ্টে সংখ্যক লোক নেই। ফলে সমগ্র হাসপাতালটি মৃতদেহের গন্ধে নরক হয়ে উঠেছে। হাসপাতালের প্রধান ডা. শিশির দেব দিনের মধ্যে সাতবার মহাকরণে স্বাস্থ্যমন্ত্রী আর স্বাস্থ্য দপ্তরকে এস ও এস পাঠাচ্ছেন। এই অবস্থা শুধু কল্যাণী নয় এই অবস্থা
কৃষ্ণনগর, করিমপুর, শিকারপুর, রাণাঘাট, বনগ্রাম, বয়রা, বসিরহাট টাকি, সন্দেশখালি সর্বত্র।
সাপ্তাহিক সপ্তাহ, ১১ জুন ১৯৭১
সূত্র: আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম ও মুক্তিযুদ্ধ ১৯৭১ . ১ম খণ্ড – মুনতাসীর মামুন