You dont have javascript enabled! Please enable it!

সীমান্ত অঞ্চল থেকে ২৫ লক্ষ শরণার্থী সরিয়ে নেওয়া হবে
পরিবহনের জন্য আগামীকাল সোভিয়েত বিমান আসছে

কলকাতা, ১১ জুন— সীমান্তবর্তী অঞ্চল থেকে বাঙলাদেশের পঁচিশ লক্ষ শরণার্থীকে সরকার সরিয়ে নেবেন।
সীমান্ত অঞ্চল থেকে এই শরণার্থীদের সরিয়ে নেওয়ার জন্য ট্রেন, লরী এবং বিমান ব্যবহৃত হবে। বাঙলাদেশের এই শরণার্থীদের সরিয়ে নেওয়ার কাছে ব্যবহারে জন্য সোভিয়েত ইউনিয়ন প্রেরিত ২টি জেট বিমান ১৩ জুন দমদমে এসে পৌঁছাবে এবং ১৪ তারিখ থেকে প্রত্যহ দমদম থেকে শরণার্থীদের মধ্যপ্রদেশের রায়পুরে নিয়ে যাবে। আজ মহাকরণ থেকে এই সংবাদ জানানো হয়। এই একই উদ্দেশ্যে অস্ট্রেলিয়া থেকেও ১টি বিমান পাঠানো হচ্ছে।
প্রসঙ্গ উল্লেখযোগ্য, সীমান্ত অঞ্চল থেকে শরণার্থীদের সরিয়ে নেওয়ার ব্যবস্থা করার জন্য পশ্চিমবঙ্গ সরকার কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে অনুরোধ জানিয়ে আসছেন।
ইউএনআই জানাচ্ছে, আজ লোকসভায় কমিউনিস্ট নেতা শ্রীইন্দ্রজিৎ গুপ্তের এক লিখিত প্রশ্নের উত্তরে পুর্নবাসনমন্ত্রী শ্রীবালগোবিন্দ ভার্মা জানিয়েছেন, পশ্চিমবাঙলা ও ত্রিপুরা থেকে পঁচিশ লক্ষ শরণার্থীকে সরিয়ে আনা হবে। শরণার্থীদের সরিয়ে আনার ব্যবহৃত জন্য বিমান, ট্রেন এবং লরী সবই হবে। কেন্দ্রীয় মন্ত্রী জানিয়েছেন, সীমান্তবর্তী অঞ্চল থেকে শরণার্থীদের জন্য সুনির্দিষ্ট গন্তব্যস্থল পর্যন্ত ট্রেনগুলি কোনরূপ বিরতি না দিয়ে যাবে। ট্রেনের যাত্রীদের পানীয় জল, খাদ্য প্রভৃতি বিষয়েও কোন অসুবধিা হবে না। শরণার্থীদের সরিয়ে আনার সময়ে যেন কোন দমনমূলক ব্যবস্থা না হয় তার প্রতি নজর রাখার জন্য এবং শরণার্থীদের বুঝিয়ে সরিয়ে আনতে প্রয়োজনে ‘বাঙলাদেশে’র নেতৃবৃন্দের সাহায্য গ্রহণের জন্য শ্রীইন্দ্রজিৎ গুপ্ত অনুরোধ করলে কেন্দ্রীয় পুনর্বাসন মন্ত্রী এই বিষয়ে শ্রীগুপ্ত এবং লোকসভার সদস্যদের আশ্বস্ত করেছেন।
দমদম বিমানবন্দর থেকে ত্রাণসামগ্রী সরানো হচ্ছে না বলে সংবাদপত্রে যে ছবি প্রকাশিত হয়েছে তার প্রতি শ্রী গুপ্ত কেন্দ্রীয় পুনর্বাসন মন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করলে তিনি বলেন, বর্তমানে দমদম বিমানবন্দরে ত্রাণসামগ্রী স্তূপীকৃতভাবে আর নেই, সব সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে। অন্ধ্র এবং তামিলনাড়ু সরকার বাঙলাদেশের শরণার্থীদের দায়ভার গ্রহণ করতে চাইছেন না বলে যে সংবাদ প্রকাশিত হয়েছিল কেন্দ্ৰীয় পুনর্বাসনমন্ত্রী তার সত্যতা অস্বীকার করেছেন।
‘বাঙলাদেশের’ শরণার্থীদের জন্য কেন্দ্রীয় সরকারের কর্তৃত্বধীনে ৫০টি শিবির তৈরি হচ্ছে। এই শিবিরগুলিতে ৫০ হাজার করে শরণার্থী থাকতে পারবেন। সীমান্তবর্তী অঞ্চলগুলি থেকে শরণার্থীদের সরিয়ে নিয়ে গিয়ে কেন্দ্রীয় সরকার এই সমস্ত শিবিরগুলিতেই শরণার্থীদের রাখবেন। শরণার্থীদের থাকার সর্বপ্রকার ব্যবস্থা কেন্দ্রীয় সরকার এই শিবিরগুলিতে করেছেন।

শরণার্থীদের জন্য বিদেশী সাহায্য
বাঙলাদেশের শরণার্থীদের জন্য ঔষধপত্র এবং হাসপাতালের সরঞ্জাম নিয়ে আজও ইংল্যান্ড থেকে কয়েকজন ডাক্তার এবং নার্স দমদম বিমান বন্দরে এসে পৌঁছেছেন। গণতান্ত্রিক জার্মান প্রজাতন্ত্র থেকে আগামীকাল সাহায্য এসে পৌঁছাবে বলে আজ মহাকরণ থেকে সংবাদ জানানো হয়েছে।
দৈনিক কালান্তর, ১২ জুন ১৯৭১

সূত্র: আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম ও মুক্তিযুদ্ধ ১৯৭১ . ১ম খণ্ড – মুনতাসীর মামুন

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!