You dont have javascript enabled! Please enable it!

বাঙলাদেশে ১০০ বন্দী শিবিরে পাক-ফৌজের বীভৎস অত্যাচার
(স্টাফ রিপোর্টার)

কলকাতা, ২১ নভেম্বর-বাঙলাদেশের মধ্যে হানাদার পাকিস্তানী ফৌজ প্রায় ১০০ টি বন্দী শিবিরে সেখানকার লক্ষাধিক নরনারীর উপরে দিনের পর দিন যে অকল্পনীয় বীভৎস অত্যাচার চালাচ্ছে, তার কিছু সংবাদ সীমান্তপার হয়ে এখানে এসেছে।
এই সংবাদে জানা যায়, ঐ সব বন্দী শিবিরে নির্বিচারে বাঙালী স্ত্রী- পুরুষকে ধরে এনে সৈন্যদের প্রহরায় রাখা হয়েছে। তাদের দৈনিক আহার্য দেওয়া হয় মাত্র দু’খানা আটারুটি আর সামান্য ডাল। শুতে হয় মেঝেতে, সামান্যতম আচ্ছাদন ও দেওয়া হয় না-বালিশ তো দূরের কথা। প্রত্যহ তাদের দিয়ে পায়খানা ও নর্দমা পরিষ্কার করানো, মাটি কাটা, মাটি বহন করা ইত্যাদি কঠোর কায়িক শ্রম করানো হয়।
কিন্তু সব চাইতে ভয়ঙ্কর হল পাক-সৈন্যদের এই সব বন্দীদের উপর বীভৎস কায়দায় নির্যাতন, বন্দীদের উপর এই নির্যাতনের কায়দার মধ্যে রয়েছে লোহার রডে ঝুলিয়ে মারা, আঙুলের সূচ ফোটানো, নখ উপড়ে ফেলা, হাঁটুর জোড়া ঠুকে ঠুকে পেরেক গেঁথে দেওয়া, ব্লেড দিয়ে কেটে চামড়া টেনে উল্টে দেওয়া, যৌনাঙ্গে বিদ্যুৎ প্রবাহ দিয়ে ও গুহ্যদ্বারে শলাকা বিদ্ধ করে যন্ত্রণা দেওয়া, উলঙ্গ করে বরফে বসিয়ে রাখা, জলের গামলায় মাথা ডুবিয়ে দিয়ে জলে বিদ্যুৎ প্রবাহিত করে দেওয়া, মাংস কেটে কাটাস্থানে জ্বলন্ত দেশলাই কাঠি বা লাইটার চেপে ধরা এবং দিনের পর দিন এই সব বন্দীদের ঘুমোতে না দেওয়া।
নাৎসী জামার্নীর বন্দী শিবিরে অত্যাচারের বীভৎসতার ঐতিহ্যকে ইয়াহিয়ার বাহিনী অঙ্গীকার করে নিয়েছে বলে মনে হয়।
বাঙলাদেশ থেকে পাওয়া এই সংবাদে আরো জানা গেল, পাকিস্তানী সৈন্যরা বহুক্ষেত্রে অন্যদের ভয় দেখাবার জন্য বন্দীদের জীবন্তকবর দেওয়া বা তাদের মাটিতে অর্ধ প্রোথিত করে পাথরের আঘাতে তাদের খুন করার পদ্ধতি অবলম্বন করছে।
মেয়েদের দিয়েও সবরকম কঠোর শ্রম তো করানো হয়ই, তার উপরে তাদের যে কোন সময়ে হানাদার সৈন্যদের লালসা চরিতার্থ করতে বাধ্য করা হয়।
এই দুঃসহ অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে কয়েকজন বন্দিনী গলায় শাড়ীর ফাঁস জড়িয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করেছিলেন। তারপর থেকে মেয়েদের শাড়ী পরা এই সব বন্দী শিবিরে নিষিদ্ধ, তাদের প্রায় উলঙ্গ অবস্থায় রাখা হচ্ছে। বন্দী শিবিরে যে সব নারী অন্তঃস্বত্ত্বা হয়ে পড়েন, সৈন্যদের উপভোগের উপকরণ হিসেবে তাঁদের মূল্য ফুরিয়ে যাওয়ায় তাঁদের গুলি করে মারা হচ্ছে। এই সমস্তবন্দী শিবির পাক- সেনাবাহিনীর ঘাঁটিগুলির কাছেই তৈরি করা হয়েছে।
দৈনিক কালান্তর, ২২ নভেম্বর ১৯৭১

সূত্র: আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম ও মুক্তিযুদ্ধ ১৯৭১ . ১ম খণ্ড – মুনতাসীর মামুন

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!