মৃত্যুপুরী ঢাকা
পাকিস্তান সৈন্যদের বীভৎস তাণ্ডব সম্পর্কে বৃটিশ মহিলা
সিঙ্গাপুর, ৩ এপ্রিল (এ.পি) “আমার বাড়ি থেকে ঢাকা বিমান-বন্দরে আসার পথে অসংখ্য মৃতদেহ মাড়িয়ে আসতে হয়েছে। যে-দিকেই চোখ যায় শুধু মৃতদেহ। রাস্তার দু’ধার জোড়া মৃতস্তূপ। অধিকাংশই শিশু আর নারী। এক কথায় গোটা শহরটা যেন কবরস্থানে পরিণত হয়েছে। একটু বাড়িয়ে বলছি না-কিছু না হলেও অন্ততঃ তিন লাখ মারা গিয়েছে।” সিঙ্গাপুরে এসে হাঁফ ছেড়ে বাঁচলেন এক বৃটিশ মহিলা। বাঙলাদেশ ছেড়ে এসেছেন। ঘর ছেড়ে আসার সময় শুধু যেটুকু চোখে দেখেছেন তাই সাংবাদিকদের কাছে ব্যক্ত ব্যকরলেন। তিনি ছাড়াও আরো একশো জন শরণার্থী সিঙ্গাপুরে এসেছেন।
“কেন আপনারা শিশুদের মারলেন, একজন বিমান বাহিনীর অফিসারকে জিজ্ঞেস করলাম”।
উত্তরে তিনি বললেন, “মাতৃপিতৃহীন শিশুদের রাখলে তারা পশ্চিম পাকিস্তান-বিরোধী হয়ে বেড়ে উঠবে। তাই প্রতিহিংসা দমনের এটাই প্রকৃষ্ট উপায়।”
বাঙলাদেশ ছেড়ে-আসা মহিলাদের অধিকাংশ কোন মন্তব্য করতে চাননি। যারা মন্তব্য করেছেন তারাও নাম প্রকাশ করতে চাননি।
সেই বৃটিশ ভদ্রমহিলা বললেন, “আমাদের নাকের ডগায় বন্দুক রেখে বলা হল পূর্ব-পাকিস্তানের কথা কোথাও প্রকাশ করবেন না। আর যদি করেন, তবে এই শেষবারের মত এ দেশ দেখে নিন।”
দৈনিক কালান্তর, ৪ এপ্রিল ১৯৭১
সূত্র: আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম ও মুক্তিযুদ্ধ ১৯৭১ . ১ম খণ্ড – মুনতাসীর মামুন