প্রচণ্ড আক্রমণের মুখে মুক্তিফৌজের গুরুত্বপূর্ণ প্রতিরোধ
আখাউড়ায় প্রচণ্ড যুদ্ধ: শালুটিকর বিমান ঘাঁটির পতন আসন্ন
বর্ষারম্ভের পূর্বেই যাহাতে বিভিন্ন শহরের এবং ক্যান্টনমেন্টে বিচ্ছিন্নভাবে যুদ্ধরত পাকিস্তানী হানাদার বাহিনী পরস্পরের সহিত স্থলপথে যোগাযোগ স্থাপন করিতে পারে, তজ্জন্য বিগত সপ্তাহে মুক্তিফৌজের গুরুত্বপূর্ণ ঘাটিগুলির উপর পাকিস্তানী সৈন্যের আক্রমণের তীব্রতা বৃদ্ধি পায়, কিন্তু মুক্তিবাহিনী তীব্র বীরত্বের সহিত যুদ্ধ করিয়া ঐ সমস্ত আক্রমণই শুধু প্রতিহত করে নাই, পাকিস্তানী হানাদারদের প্রচুর পরিমাণে ক্ষতিগ্রস্থ করিয়া বিস্তর অস্ত্রশস্ত্রও দখল করিয়াছে। গুরুত্বপূর্ণ আখাউড়া ষ্টেশনটি দখল করার জন্য সৈন্যবাহিনীর একটি শক্তিশালী দল ভারী অস্ত্রে সজ্জিত হইয়া অগ্রসর হয়, কিন্তু ৭২ ঘণ্টা ব্যাপী যুদ্ধ চলার পরও এখন পর্য্যন্ত রেল ষ্টেশনটি মুক্তিফৌজের দখলেই রহিয়াছে। উভয় তরফ হইতে এই যুদ্ধে যে প্রচণ্ড গোলাবর্ষণ চলে তাহার ফলে নিকটবর্ত্তী ভারতীয় শহর আগরতলা বার বার কাঁপিয়া উঠিতেছে বলিয়া খবর পাওয়া গিয়াছে।
শ্রীহট্ট শহরটির মধ্যে পাকিস্তানী সৈন্যবাহিনী দখল করিয়া নিয়াছিল, কিন্তু মুক্তিবাহিনী পাল্টা আক্রমণ চালাইয়া উহা পূনৰ্দ্দখল [পুনর্দখল] করে। সর্বশেষ সংবাদে প্রকাশ যে, সাতশত পাকিস্তানী সৈন্য শালুটিকর বিমান ঘাটিতে সম্পূর্ণ অবরুদ্ধ হইয়া পড়িয়াছে এবং মুক্তিবাহিনী তিন দিক হইতে উহাদের প্রচণ্ড আক্রমণ চালাইয়াছে। অদ্য শুক্রবার শালুটিকরে কোন বিমান অবতরণ করিতে পারে নাই, ফলে সরবরাহের অভাবে পাকিস্তানী বাহিনী অত্যন্ত অসুবিধায় পড়িয়াছে বলিয়া জানা গিয়াছে। সমগ্র শ্রীহট্ট জেলার মধ্যে শুধুমাত্র এই বিমান ঘাটিতেই পাকিস্তানী হানাদার সৈন্যদের তৎপরতা রহিয়াছে, বাকী প্রায় সমগ্র শ্রীহট্ট জেলাই বৰ্ত্তমানে মুক্তিবাহিনীর অধীন।
যুগশক্তি, ১৬ এপ্রিল ১৯৭১
সূত্র: আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম ও মুক্তিযুদ্ধ ১৯৭১ . ১ম খণ্ড – মুনতাসীর মামুন