You dont have javascript enabled! Please enable it!

বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ জয়ী হইবেই
লন্ডনে মেজর খালেদের দৃপ্ত উক্তি

গত ১৮ জুলাই লন্ডনে স্বাধীন টেলিভিসনে ওয়ার্লড ইন এ্যাকশন নামক সাপ্তাহিক এক জনপ্রিয় অনুষ্ঠানে বাংলাদেশে মুক্তিফৌজের নেতা মেজর খালেদ টেলিভিসন রিপোর্টারদের সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, বাংলাদেশের একটি লোকও জীবিত থাকা পর্যন্ত এই সংগ্রাম চলবে। বাংলাদেশে থেকে পাক সেনা ও রাজনৈতিক নেতাদের উৎখাত করে তবে থামবো।
আমেরিকায় ট্রেনিং প্রাপ্ত মেজর খালেদ গত ১৮ বছর ধরে পাক সামরিক বাহিনীতে ছিলেন। তিনি বলেছেন পাকবাহিনী হেলিকপ্টার এবং ভারী অস্ত্রশস্ত্র ব্যবহার করে আমাদের লোকদের মনোবল ভেঙ্গে দিতে চাইছে। কিন্তু আমরা নতি স্বীকার করবো না। সমগ্র বাংলাদেশকে আমরা একটি সংগ্রামী জাতীতে পরিণত করবো। পাকবাহিনী আমাদের গ্রামগুলির উপর বিরামহীন গোলাবর্ষণ করছে এবং বাংলাদেশকে শক্ত এক সামরিক ঘাঁটিতে পরিণত করেছে।
মেজর খালেদ বলেছেন পাকবাহিনী বাঙালী মেয়েদের উপর অসংখ্য অত্যাচার চালাচ্ছে এবং তাহাদের শ্লীলতাহানী করছে। ভোগের পর তারা মেয়েদের হত্যা করছে। মুক্তিফৌজের অপর একজন নেতা ক্যাপ্টেন চৌধুরী টেলিভিশন সাক্ষাৎকারে বলেছেন, পাঞ্জাবী সেনারা বাঙালী মেয়েদের অপহরণ করে নিয়ে যাচ্ছে। পশ্চিম পাকিস্তানের বেসামরিক লোকেরাও এই নষ্টামীতে যোগ দিয়েছে। ইয়াহিয়া খান এখন হিটলারী রাজনীতি অনুসরণ করছেন।
মেজর খালেদ বলেছেন আমরা হিংসাপরায়ণ নই। মহান সংস্কৃতির ধারক আমরা। দেশীয় কাব্য সাহিত্যের গর্বে গর্বিত। আমরা কোনদিন হিংসাপরায়ণ ছিলাম না। পাকবাহিনীর অত্যাচারের বদলা নেওয়ার জন্যই আমরা হিংসার আশ্রয় নিয়েছি। শান্তিপ্রিয় আমরা বাঙালীরা আজ অস্ত্র ধারণে বাধ্য হয়েছি। এই সংগ্রাম আমাদের এখন চালিয়ে যেতেই হবে। দশ লক্ষ লোক ইতিমধ্যে মারা গেছে। যুদ্ধে আরো ৫০ লক্ষ লোক হয়তো মারা যাবে। অনাহারে মারা যাবে হয়তো আরো এক কোটি লোক। তাতে আমাদের কোন ভয় নেই। আমাদের অস্ত্র নেই কিন্তু জনবল আছে। প্রয়োজন হলে খালি হাতে আমরা লড়াই চালিয়ে যাবো।
তিনি বলেছেন বিশ্বাসঘাতকদের আমরা হত্যা করবো। বাংলাদেশে আমরা ক্রীড়নক সরকার গঠন করতে দেব না। আমরা জানি ন্যায়ের দাবীতে আমরা সংগ্রাম করছি।
তার নিজের পরিবারের খবর কি জিজ্ঞেস করলে মেজর খালেদ বলেন পরিবারের খবর আমি জানি না। অন্যান্য বহু পরিবারের ভাগ্যে কি হয়েছে আমি নিজের চোখেই তা দেখেছি। তাই নিজের পরিবারের কথা চিন্তা করার অধিকার এখন আমার নেই। বাংলাদেশই আমার পরিবার।
আজাদ, ২১ জুলাই ১৯৭১

সূত্র: আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম ও মুক্তিযুদ্ধ ১৯৭১ . ১ম খণ্ড – মুনতাসীর মামুন

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!