You dont have javascript enabled! Please enable it!

ঢাকার অদূরে জানোয়ারদের নৃশংস হামলা কয়েকটি গ্রাম নিশ্চিহ্ন: বিদেশী পত্রিকার রিপোর্ট

মার্চ-এপ্রিল নয়, নভেম্বরের শেষের দিকে ঢাকার অদূরে কয়েকটি গ্রামে কসাই ইয়াহিয়ার জানোয়ার বাহিনীর লোমহর্ষক হত্যাযজ্ঞের দু’একটি সংবাদপত্রে প্রকাশিত হয়েছে। সুইডেনের ‘এক্সপ্রেশান’ সংবাদপত্রের দূরপ্রাচ্য সংবাদদাতা হারমান লিগুভিস্ট বাংলাদেশের হাজারো মাইলাইর মধ্যে একটির আংশিক বিবরণ দিয়েছেন।
প্রকাশিত রিপোর্টে বলা হয়েছে, “যা কিছুই পোড়ানো যায়, তাই পুড়িয়ে ধ্বংস করা হয়েছে। সর্বত্রই ধ্বংসলীলার চিহ্ন। গৃহে ব্যবহাৰ্য্য তৈজসপত্র পর্যন্ত ধ্বংস করা হয়েছে। বেঁচে থাকা মানুষগুলি ধ্বংসস্তূপের মধ্যে বাঁচার উপকরণ খুঁজছিল…..।”
বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধাদের সন্ধানে দু’টি গ্রামে পাকিস্তানি দস্যু বাহিনীর হানা দেওয়ার পর সমস্ত এলাকাকে তারা জ্বালিয়ে পুড়িয়ে ছারখার করে অসংখ্য বাঙালীকে পৈশাচিক আনন্দে হত্যা করে। সংবাদদাতা লিখেছেন যে, এই ধ্বংসযজ্ঞে কত বাঙালী প্রাণ হারিয়েছে তা নির্ণয় করা দুঃসাধ্য।
দুটি ধ্বংসপ্রাপ্ত গ্রামের মধ্যে একটির নাম কালামূড়ি। গ্রামে এ জানোয়ার হানাদার বাহিনী কমপক্ষে ৭৫টি গৃহ পুড়িয়ে ছাই করে দিয়েছে এবং ৫০ থেকে ৮০ জনের মতো বাঙালীকে হত্যা করেছে।
সংবাদদাতা লিখেছেন যে, গ্রামবাসীরা তাঁকে ঘাস দ্বারা আচ্ছাদিত কয়েকটি মৃতদেহ দেখান। কিন্তু গন্ধ বেরুচ্ছে দেখে ঘাস উলটিয়ে মৃতদেহগুলো দেখতে সাহসী হননি।
সংবাদদাতা লিখেছেন যে, বাঁশ ঝাড় এবং সাদা শাপলা ফুলে আচ্ছাদিত একটি পুকুরে খান সেনারা তিন শতাধিক মৃতদেহ ফেলে দেয়।”
সংবাদদাতা বলেন, পাকিস্তানি সৈন্যরা কেন এই নারকীয় হত্যাকাণ্ড চালালো তা কেউ বলতে পারে না। কেউ বলেছেন, তারা বাঙালীদের হত্যা করে আনন্দ পায় বলেই হত্যাকাণ্ড চালিয়েছে। অন্য আর একজন বলেছেন যে, হয়তো ইয়াহিয়ার পশু সৈন্যরা মনে করেছে যে এ এলাকায় মুক্তি সেনানীরা থাকে তাই এই হত্যাযজ্ঞ চালিয়েছে। কিন্তু বিশ্বাস করুন এখানে কোন মুক্তিসেনা নেই। কোন অস্ত্র খান সেনারা পায়নি এবং তাদের বিরুদ্ধে কোন প্রতিরোধও ছিল না।
ধ্বংসপ্রাপ্ত দু’টি গ্রামের একটিতে জনৈক যুবকের সাথে কথাবার্তার বিবরণও সুইডেনের সংবাদপত্রে ছাপা হয়েছে। যুবকটি সংবাদদাতাকে বলেছেন, “নভেম্বরের গত সপ্তাহের বুধবারে সৈন্যরা আসে; পাঞ্জাবী সৈন্য। তারা গৃহে গৃহে তল্লাশী চালায় এবং টাকা পয়সা লুট করে। শুক্রবার তারা আবার ফিরে আসে। তারা কয়েক শত ছিল। তখন সন্ধ্যা ছ’টা। হঠাৎ তারা কারফিউ জারী করে এবং কয়েকটি ফাঁকা আওয়াজ করে। আমাদের মধ্যে অনেকেই ভীত সন্ত্রস্ত হয়ে পালাতে চেষ্টা করে। তারা গুলিবিদ্ধ হয়ে প্রাণ হারায়। তারপর সৈন্যরা গৃহে গৃহে তল্লাসী শুরু করে তারা হাতের কাছে যা পেয়েছে অলংকার নগদ টাকা, সব কিছু পকেটস্থ করে। তারা এ সময় আর বহু লোককে হত্যা করে। কয়েকটি গৃহে তারা হাত বোমা নিক্ষেপ করে। এ নারকীয় হত্যাযজ্ঞ সারা রাত ধরে চলে এ এক ভয়াবহ দৃশ্য। প্রাণ ভয়ে ভীত মানুষের সে সকরুণ কান্নার বিবরণ দান দুঃসাধ্য।’
জয়বাংলা ॥ ১: ৩১ ॥ ১০ ডিসেম্বর ১৯৭১

সূত্র: আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম ও মুক্তিযুদ্ধ ১৯৭১ . ১ম খণ্ড – মুনতাসীর মামুন

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!