You dont have javascript enabled! Please enable it! 1971.09.16 | বিলেত থেকে আগত বাঙালীদের প্রত্যাগমনে দুর্ভোগের একশেষ | সাপ্তাহিক বাংলা - সংগ্রামের নোটবুক

বিলেত থেকে আগত বাঙালীদের
প্রত্যাগমনে দুর্ভোগের একশেষ
॥ আব্দুস শহীদ॥

সিলেট, ১৩ই সেপ্টেম্বর-বিলেতে বসবাসকারী যে সব বাঙালী আত্মীয়স্বজনকে দেখার জন্য বাংলাদেশে এসেছিল তারা এখন আর সহসা সেখানে ফিরে যেতে পারছেন না। অনেকে খুন হচ্ছেন রাজাকার অথবা খান সেনাদের হাতে। অনেকে সর্বস্ব হারিয়েছেন লুঠতরাজ আর অগ্নিসংযোগে। সহায় সম্পত্তির সঙ্গে অনেকের আবার ‘পাসপোর্টটি ও খোয়া গেছে। সুতরাং বিলেত থেকে আগত কয়েক হাজার সিলেটী জনসাধারণ চরম অসুবিধার মধ্যে কালাতিপাত করছেন।
প্রসঙ্গত উল্লেখযোগ্য যে, একমাত্র সিলেট জেলারই প্রায় ৮৫ হাজার মানুষ ইংল্যান্ডে বসবাস করে।
বর্তমানে সিলেট জেলার হবিগঞ্জ, বালাগঞ্জ, গোলাপগঞ্জ, বিয়ানী বাজার, ধীরাই, রাজাপুর, কোয়াঙ্গপুর, বাঘমায়না, বিশ্বনাথ, লোহরপুর, সদরগাঁও, লোহারগাঁও, রাণীগঞ্জ, ভবানীপুর, কোনার চর, ছাতক প্রভৃতি এলাকার বিলেত থেকে আগত ভদ্র লোকদের পাসপোর্ট রাজাকার বাহিনীর বর্বররা ছিনিয়ে নিয়ে যাচ্ছে বলে জানা গেছে।
এই সব পাসপোর্ট পশ্চিমাদের দালাল সিলেট শহরস্থ লতিফ ট্রাভেলস, মাসুম ট্রাভেলসও তাহের ট্রাভলস-এ জমা দেওয়া হচ্ছে। পরে এই সব পাসপোর্ট মালিকদের করাচী হয়ে ইংল্যান্ড ফিরে যাবার নির্দেশ দেওয়া হয়।

জঙ্গীশাহীর নির্দেশ
এরপর এই সব যুক্তরাজ্য প্রবাসী বাঙালীদেরকে সেনাবাহিনীর প্রহরায় করাচী নিয়ে গিয়ে এই মৰ্ম্মে শাসানো হচ্ছে যে, আগামী তিন মাসের মধ্যে তাঁরা যদি প্রত্যেকে কমপক্ষে৭০০ পাউন্ড করে পাকিস্তানে না পাঠান, তা হলে তাদের ঘর-বাড়ী, সহায় সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করে নেওয়া হবে এবং পরিবার-পরিজন ও আত্মীয়জনকে সম্পূর্ণরূপে নিশ্চিহ্ন করে দেওয়া হবে।
এছাড়া পাকিস্তানের জঙ্গীশাহীর পক্ষে প্রচার চালানোর জন্যও তাঁদের কে বিশেষ ভাবে নির্দেশ দেওয়া হচ্ছে।
চিঠি আসিল না কেন, টাকা আসিল না কেন ?
কিন্তু এখানেই কাহিনির শেষ নয়। বিলেত প্রবাসী বাঙালীদের আত্মীয়স্বজনকে রাজাকার বাহিনীর লোকেরা স্থানীয় সামরিক কর্তৃপক্ষের নিকট ধরে নিয়ে যাচ্ছে। অতঃপর তাদেরকে দিয়ে জোর করে লণ্ডন ও অন্যান্য স্থানে এই মর্মে চিঠি লিখানো হচ্ছে যে, পাকিস্তানে বর্তমানে ‘পূর্ণশান্তি’ বিরাজ করছে। পশ্চিমা সৈন্যদের আচরণ বেশ ‘মিঠে মিঠে’ লাগছে। সুতরাং তারা যেন বিদেশ থেকে পাকিস্তানে নির্দ্বিধায় টাকা পাঠায়।
পাছে চিঠিগুলি বিদেশে না পাঠানো হয়, এই সন্দেহে রাজাকার বাহিনীর লোকেরাই এগুলো পোষ্ট করছে।
চিঠি পাঠানোর দু’সপ্তাহের মধ্যে কোন জবাব কিংবা টাক-পয়সা না এলে রাজাকাররা আবার সেই প্রবাসী ভদ্রলোকদের আত্মীয়স্বজনের বাড়ী গিয়ে চড়াও হচ্ছে। হুকুম করছে— আবার চিঠি লিখ। লোলুপ প্রশ্ন ‘চিঠি আসিল না কেন, টাকা আসিল না কেন?’
সাপ্তাহিক বাংলা ॥ ১: ১ ॥ ১৬ সেপ্টেম্বর ১৯৭১

সূত্র: আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম ও মুক্তিযুদ্ধ ১৯৭১ . ১ম খণ্ড – মুনতাসীর মামুন