ঢাকা শহর বন্দী শিবিরে পরিণত
(নিজস্ব বার্তা পরিবেশক)
ইয়াহিয়ার দস্যু বাহিনী ঢাকা শহরকে এখন কার্যত বন্দী শিবিরে পরিণত করিয়াছে। উপর্যুপরি কম্যান্ডো ও গেরিলা আক্রমণে ভীত হইয়াই এই ব্যবস্থা লওয়া হইয়াছে। কিন্তু এতদসত্বেও মুক্তিবাহিনীর তৎপরতা বন্ধ হয় নাই। পাকিস্তানী বাহিনী শহরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা আরও কঠোর করিতেছে। বুড়িগঙ্গা নদীতে সশস্ত্র টহলদার বাহিনী গানবোট ও লঞ্চ যোগে দিবারাত্র ঘোরাফেরা করিতেছে। শহরের সহিত অন্যান্য স্থানের যোগাযোগ একেবারে নাই বললেই চলে। শহর হইতে বাহিরগামী সড়কসমূহের প্রবেশ পথে সশস্ত্রবাহিনী ও কড়া চেক পোস্ট ব্যবস্থা মোতায়েন করা হইয়াছে।
সেনাবাহিনীর কঠোর নিয়ন্ত্রণে ঢাকা ও বরিশালের মধ্যে লঞ্চ চলাচল করিতেছে। ইহাও আবার অনিয়মিত। সন্ধ্যা হইলেই স্থল ও জলপথে যানবাহন চলাচল বন্ধ হইয়া যায়। পানির ট্যাঙ্কসমূহ ও বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলিতে সেনাবাহিনীর ২৪ ঘন্টা প্রহারা মোতায়েন রহিয়াছে।
সেনাবাহিনীর লোকেরা জামাতে ইসলামী ও মুসলিম লীগের রাজাকার গুণ্ডাদেরকে লইয়া বিভিন্ন রাত্রে বিভিন্ন মহল্লা ঘেরাও করে ও তল্লাশী চালায়। সাধারণত যেসব এলাকায় বোমা বিস্ফোরণ ঘটিয়া থাকে, সেই সব এলাকাতেই এই ধরণের অভিযান চালান হয়। কিন্তু ইহাতেও শহরবাসীর মনোবল দমিয়া যায় নাই। মুখ ফুটিয়া প্রকাশ্যে হয়ত তাহারা কিছু করিতে পারিতেছে না; কিন্তু শত্রুকে চরম আঘাত হানার সঙ্কল্প তাহাদের দৃঢ়তর হইতেছে।
নতুন বাংলার ॥ ১: ৫ ́ ১৬ সেপ্টেম্বর ১৯৭১
সূত্র: আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম ও মুক্তিযুদ্ধ ১৯৭১ . ১ম খণ্ড – মুনতাসীর মামুন