দুর্ভিক্ষের কবলে বাংলাদেশ
(ষ্টাফ রিপোর্টার)
মুজিবনগর, ৫ই সেপ্টেম্বর- হাজারো মাইলায়ের বাংলাদেশের প্রায় সর্বত্র দুর্ভিক্ষের করাল ছায়া নেমে এসেছে। বাংলা দেশের কোটি কোটি ভাগ্যহত মানুষ আজ চরম অর্থাভাব আর অন্নাভাবে দুর্ভিক্ষের মুখোমুখি হয়ে ধুকে ধুকে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ছে, গোটা বাংলাদেশটাই যেন আজ এক মহাশশ্মানে পরিণত হয়েছে।
দুর্ভিক্ষের ফলে ১৯০১ জনের মৃত্যু
দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আমাদের বিশেষ সংবাদদাতারা জানিয়েছেন যে, বাংলাদেশের প্রায় সর্বত্রই দুর্ভিক্ষ ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। ফলে এ পর্যন্ত ১৯১ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গিয়েছে।
দুর্ভিক্ষের ফলে যারা অকাল মৃত্যুবরণ করেছেন তাদের জেলাওয়ারী একটা প্রাথমিক হিসাব নিম্নে দেওয়া হলো: ঢাকা জেলার বিক্রমপুর, মানিকগঞ্জ, মুন্সীগঞ্জ এবং নবাবগঞ্জ এলাকায় দুর্ভিক্ষের ফলে ২১ জনে মৃত্যু হয়েছে বলে আমাদের বিশেষ সংবাদদাতা জানিয়েছেন।
সিলেট জেলার দুর্ভিক্ষাবস্থা মারাত্মক আকার ধারণ করেছে। বিয়ানীবাজার, গোলাপগঞ্জ, মৌলবীবাজার, সুনামগঞ্জ ও হবিগঞ্জ এলাকায় খাদ্যাভাবে ৩১ জনেরও বেশী লোকের মৃত্যু হয়েছে।
খাদ্যাভাবের ফলে কুমিল্লার হাজীগঞ্জ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রভৃতি এলাকা থেকে ৭ জন, দিনাজপুরের বিভিন্ন স্থান থেকে ১৬ জন, রংপুর থেকে ৬ জন, পাবনা থেকে ১৪ জন, বরিশাল, পটুয়াখালী, নোয়াখালীর বিভিন্ন দ্বীপ ও চরাঞ্চলে কমপক্ষে ২৯ জনের প্রাণ হানি ঘটেছে বলে আমাদের সংবাদদাতা জানিয়েছেন।
এছাড়া ময়মনসিংহ ও টাঙ্গাইলের বিস্তীর্ণ অঞ্চল জুড়ে দুর্ভিক্ষের ফলে কমপক্ষে ১৬ জন, ফরিদপুরের বিভিন্ন স্থানে ১৮ জন, যশোরের পরিস্থিতি ভয়ঙ্কর হওয়ায় নড়াইল ও মাগুরাতেই ২২ জন এবং খুলনায় দুর্ভিক্ষের অশুভ পদধ্বনিতে ফকিরহাট, সাতক্ষীরা প্রভৃতি এলাকাতে ১১ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গিয়েছে।
দেশের অভ্যন্তরে সমস্ত যোগাযোগ ব্যবস্থা বিচ্ছিন্ন থাকার দরুণ এবং বন্যায় ফসল ডুবে যাওয়ার ফলে অদূর ভবিষ্যতে এই দুর্ভিক্ষের অবস্থা মারাত্মক আকার ধারন করতে পারে বলে পর্যবেক্ষক মহলের ধারণা।
জন্মভূমি ॥ ১: ৭ ॥ ৬ সেপ্টেম্বর ১৯৭১
সূত্র: আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম ও মুক্তিযুদ্ধ ১৯৭১ . ১ম খণ্ড – মুনতাসীর মামুন