পাক গোয়েবলসদের স্বাভাবিক অবস্থার নমুনা!
পাক দস্যু কবলিত বাংলা দেশে স্বাভাবিক অবস্থা ফিরে এসেছে বলে পাক বেতার থেকে জঙ্গী শাহী আদা জল খেয়ে গোয়েবলসীর কায়দায় যতই গলাবাজী করুক না কেন প্রকৃত পক্ষে স্বাভাবিক অবস্থা যে জঙ্গী শাহীর দিবাস্বপ্ন ছাড়া আর কিছুই নয় একথা বিশ্বের বিভিন্ন পত্র পত্রিকাসহ বিভিন্ন সময়ে বাংলা দেশের অধিকৃত এলাকা সফরকারী বিদেশী প্রতিনিধিগণও স্বীকার করেছেন।
ঢাকা থেকে প্রাপ্ত খবরে জানা যায় যে, ঢাকার বিভিন্ন সরকারী আধা সরকারী প্রতিষ্ঠানে কিছু সংখ্যক বাঙালী কর্মচারী যোগ দিলেও প্রকৃত পক্ষে অফিসে কোন কাজকর্মই হয় না। কিছুক্ষণ গল্প গুজব করে সময় কাটিয়ে কর্মচারিগণ পাঞ্জাবী জল্লাদদের ভয়ে প্রাণ হাতে নিয়ে ঘরে ফিরে যান। ঢাকা-নারায়ণগঞ্জের আশে পাশের কলকারখানাগুলোতেও একই অবস্থা বিরাজ করছে। তবে জল্লাদ বাহিনী কোন- কোন কলকারখানার মালিক বিশেষ করে পশ্চিম পাকিস্তানি শিল্পপতিদের কারখানাগুলোতে পূর্বের ন্যায় নিয়মিত সিটি বাজিয়ে এবং কিছুক্ষণের জন্য কারখানার ইঞ্জিন চালু করে চিমনা দিয়ে ধোয়া উদ্গীরণ করিয়ে বুঝাতে চায় যে কলকারখানায় কাজ চলছে। কিন্তু ভিতরে জল্লাদ বাহিনীর পদলেহী অবাঙালী উর্দুভাষী এক শ্রেণীর লোক কিছুক্ষণ সোরগোল করে থাকে! এরা কাজ কিছুই বুঝে না।
চা বাগানে কাজ বন্ধ
সিলেট থেকে প্রাপ্ত খবরে জানা গেছে যে, সিলেট জেলার চা বাগানগুলোতে কোন কাজই হচ্ছে না। চা বাগানের শ্রমিকগণ পশ্চিমা জল্লাদ বাহিনীর আক্রমণ থেকে আত্মরক্ষার জন্য শ্রমিক পল্লী ছেড়ে দিয়ে পলায়ন করেছে। অপর দিকে উন্মত্ত জল্লাদ বাহিনী অভুক্ত কুকুর কর্তৃক পরিত্যক্ত ছেড়া জুতা কামড়ানোর মতো চা বাগান শ্রমিকদের পরিত্যাক্ত জীর্ণ কুটীরগুলো জ্বালিয়ে দিয়ে বীরত্বের ছাপ রেখেছে।
যোগাযোগ ব্যবস্থা বলতে অধিকৃত এলাকায় কিছু নেই। বাংলা দেশের প্রায় সব জায়গায় রেল লাইন উঠিয়ে ফেলায় এবং রেলওয়ের সেতু ধ্বংস করে দেয়ায় জঙ্গী শাহী এখনও রেল গাড়ী চালু করতে পারেনি। কেবল ঢাকা থেকে নিকটবর্তী নরসিংদী ব্রাহ্মণবাড়িয়ার মধ্যে দিনে একটি ট্রেন চলাচল করে। কোনদিন বা কোন ট্রেনই চলে না। অবশ্য ট্রেনে কোন বাঙালী আরোহী উঠেন না উর্দুভাষী একশ্রেণীর লোক চলাচল করে তাকে এবং এবং এরা মুক্তিবাহিনীর হাতে নিহত পাক দস্যুদের লাশ উঠা-নামা করায়ে সেনা বাহিনীকে সাহায্য করে।
ঢাকা কুমিল্লা, খুলনা, রাজশাহী, চট্টগ্রামে প্রভৃতি শহর কেবল অবাঙালী ব্যবসায়ীদের কিছু দোকানপাট খোলা হয়ে থাকে।
অধিকৃত পাক বেতার থেকে প্রত্যহ ঢালাও চেচামেচি করলেও বাংলা দেশের অধিকৃত এলাকার কোন- স্কুল কলেজের ছাত্রছাত্রী আসছেন না। কেবল উর্দুভাষী পাঞ্জাবী তাবেদারদের কতিপয় অছাত্র ছেলেমেয়ে পাঠ্য তালিকা বহির্ভূত কতিপয় বইপত্র বগল তলায় নিয়ে শহরের স্কুল কলেজগুলোতে যাতায়াত করে থাকে। অবশ্য কেবল বিদেশী প্রতিনিধিদল শহর পরিদর্শন কালেই কেবল এ দৃশ্যের অবতারণা করা হয়ে থাকে।
এ ছাড়া, বাংলার অধিকৃত এলাকায় খেলার মাঠগুলো শূন্য খাঁ খাঁ করছে। খেলা ধুলা নেই, সামাজিক আচার অনুষ্ঠানও বন্ধ। সিনেমা হল গুলোর দরজা তালাবন্ধ। ঢাকার কয়েকটি ছবি ঘরে কেবল উর্দু ছবি চলছে। এর দর্শক হচ্ছে কেবল উর্দু ভাষীরাই। এই হচ্ছে বাংলা দেশের সার্বিক পরিস্থিতি।
জয় বাংলা ॥ ১: ৯ ॥ ৯ জুলাই ১৯৭১
সূত্র: আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম ও মুক্তিযুদ্ধ ১৯৭১ . ১ম খণ্ড – মুনতাসীর মামুন