বিদেশী সাংবাদিকের মতে
গেরিলা আক্রমণের মুখে বাংলাদেশে পাকি সেনাদের
মনোবল আর বেশী দিন অক্ষুণ্ণ রাখা যাবে না
অবরুদ্ধ ঢাকা থেকে লণ্ডনের ডেলি টেলিগ্রাফের সংবাদদাতা প্রেরিত এক খবরে বলা হয়েছে যে, ঢাকাস্থ পাক জেনারেলরা খুবই ফাঁপরে পড়েছে। সংবাদদাতা মিঃ হোলিংওয়ার্থ লিখেছেন, সপ্তাহে চারখানি সরবরাহকারী জাহাজ গেরিলারা ডুবিয়ে দেওয়ায় পশ্চিম পাকিস্তান থেকে সৈন্য ও সামরিক দ্রব্য সামগ্রী পূর্ব পাকিস্তানে নিয়ে আসার ব্যাপারে গুরুতর অসুবিধা দেখা দিয়েছে। ২৩শে- আগষ্ট সংবাদ এ‘ডেলি টেলিগ্রাফে’ প্রকাশিত হয়েছে। খবরে বলা হয়েছে, আট দিন আগে চট্টগ্রাম বন্দরে মেয়াদী মাইনের বিস্ফোরণে দু’খানা জাহাজ বিধ্বস্ত হওয়ায় এবং গত শনিবার চাঁদপুরের কাছে ৯০০ টনের একখানি উপকূলবর্তী মালবাহী জাহাজ ও একটি বিরাট বাঁধ ক্ষতিগ্রস্থ হওয়ায় পাক জঙ্গী চক্রের সঙ্কট এখন তীব্র হয়ে দেখা দিয়েছে।
খবরে জানা গেছে, গেরিলারা সুরক্ষিত সামরিক লক্ষ্যবস্তুর ওপর আক্রমণ শুরু করেছে এবং গেরিলা তৎপরতা শুরু হওয়ার পর থেকে এ পর্যন্ত ১৫৭টি প্রধান সড়ক ও রেলসেতু বিধ্বস্থ করেছে। তা ছাড়া প্রায় এক হাজারের মত ছোট সেতু ও কালভার্ট উড়িয়ে দেওয়া হয়েছে।
খবরে আরও প্রকাশ, পাক সেনাবাহিনী গুরুত্বপূর্ণ-চট্টগ্রাম ঢাকা রেল সেতুটি এখনও পর্যন্ত মেরামত করতে পারেনি। গত শুক্রবার কুমিল্লা ও চট্টগ্রামের মধ্যবর্তী প্রধান রেল সেতুটি বিধ্বস্থ হওয়ায় বন্দর থেকে খাদ্য দ্রব্য এবং অন্যান্য জিনিষপত্র পরিবহনেও গুরুতর অসুবিধা দেখা দিয়েছে।
আরও জানা গেছে যে, পাক সেনাদেরকে গেরিলা তৎপরতা সম্পর্কে একদম অন্ধকারে রাখা হয়েছে। উদ্দেশ্য খান-সেনাদের মনোবল অটুই রাখা। কিন্তু তা সত্ত্বেও রাস্তায় পোতা গুপ্ত মাইন, সৈন্যবাহী ট্রেনের লাইনচ্যূতি ও অপ্রত্যাশিত গোলাগুলি বর্ষণে তাদের মনোবল বেশী দিন অটুট রাখা আদৌ সম্ভব হবে না।
জয়বাংলা ॥ ২: ১৭ ॥ ৩ সেপ্টেম্বর ১৯৭১
সূত্র: আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম ও মুক্তিযুদ্ধ ১৯৭১ . ১ম খণ্ড – মুনতাসীর মামুন