You dont have javascript enabled! Please enable it! 1971.09.04 | মুক্তি পরিষদের ডাকে ঢাকায় হরতাল | মুক্তিযুদ্ধ - সংগ্রামের নোটবুক

মুক্তি পরিষদের ডাকে ঢাকায় হরতাল
(নিজস্ব বার্তা পরিবেশক)

পাকিস্তানের জঙ্গী শাসক গোষ্ঠী বাঙলাদেশের মুক্তি সংগ্রামকে দমনের জন্য একদিকে তীব্র ও বর্বর অত্যাচার অব্যাহত রাখিয়াছে, অপর দিকে তথাকথিত বে- সামরিক শাসন প্রতিষ্ঠার কৌশল গ্রহণ করিয়াছে। কিন্তু এত কিছু সত্ত্বেও বাঙলাদেশের মুক্তি সংগ্রাম দিন দিন আরও জোরদার হইতেছে।

ঢাকা শহরে হরতাল
কে ভাবিতে পারে যে বাঙলাদেশের মূল রাজধানী পাক হানাদার বাহিনী অধিকৃত ঢাকা শহরে বর্তমানে হরতাল সম্ভব? কিন্তু এই অসম্ভবকেই সম্ভব করিয়াছে ঢাকার বীর জনগণ। পাকিস্তানের তথাকথিত স্বাধীনতা দিবস ১৪ই আগস্ট তারিখে ঢাকার জনগণ সফল হরতাল পালন করিয়াছেন। এই দিন অবশ্য সরকারী অফিস-আদালত বন্ধ ছিল ইয়াহিয়া সরকারের নির্দেশ মতে। কিন্তু জনগণের ব্যক্তিগত মালিকানার ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, দোকানপাট, গাড়ী- ঘোড়া প্রভৃতি বন্ধ ছিল ঢাকায় বামপন্থীদের উদ্যোগে গঠিত গোপন ‘মুক্তি পরিষদের’ আহ্বানে। মুক্তি পরিষদ প্রচারপত্র, পোস্টার প্রভৃতির মাধ্যমে শহরবাসীকে হরতাল পালনের আহ্বান জানায়।
অন্যদিকে গত মাসের মাঝামাঝি হইতে ঢাকা শহরে ইয়াহিয়া চক্রের সামরিক বাহিনীর তৎপরতা বৃদ্ধি পাইয়াছে। সামরিক বাহিনী ক্ষেপা কুকুরের মত সারা শহর চষিয়া বেড়াইতেছে। ইহাদের আশংকা হইয়াছিল যে মুক্তিফৌজ বোধহয় ঢাকা শহরে এখনই সম্মুখ সমরে লিপ্ত হইবে। উপরন্তু গেরিলা বাহিনীর আক্রমণ তৎপরতা বৃদ্ধি পাওয়ায় ইহারা আরও ভীত হইয়া পড়ে।

ধরপাকড়, তল্লাশী
তাই গত মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহ হইতে সামরিক বাহিনী ঢাকা শহরের সমগ্র দক্ষিণ- পূর্ব, পূর্ব, উত্তর এবং পশ্চিম এলাকায় বিপুল বিক্রমে ব্যাপক তল্লাশী করিয়াছে। যাত্রাবাড়িতে দুই বার ইহারা তল্লাশী করিয়াছে। ইহা ছাড়া মতিঝিল কলোনী, শাজাহানপুর, মগবাজার, বাসাবো, মাদারটেক, কমলাপুর, স্টাফ কোয়ার্টার্স, স্বামীবাগ, গোপীবাগ রেল লাইনের অপর পার, কলা বাগান, রায়ের বাজার ও ধানমণ্ডীর কোন কোন স্থানের প্রতিটি বাড়ি-ঘর তন্ন তন্ন করিয়া তল্লাশী করিয়াছে। সঙ্গে সঙ্গে কিছু কিছু গ্রেপ্তারও করিয়াছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের এগার জন অধ্যাপককে সম্প্রতি গ্রেপ্তার করা হইয়াছে। ইহা ছাড়াও শহরের পথে পথেও আকস্মিক তল্লাশী চালানো হইয়াছে।
মগবাজার চৌরাস্তার মোড়ে সারা দিনরাত্রির পাহারা বসানো হইয়াছে। ঢাকা শহরের নাগরিকদের ঘর-বাড়ি তল্লাশী করার সময় ইয়াহিয়া গোষ্ঠীর বর্বর সেনা বাহিনীর লোকেরা যে কেবলমাত্র ঘরের জিনিসপত্র নষ্ট করিয়াছে তাহাই নহে সেই সঙ্গে হাতের কাছে যাহা পাইয়াছে উহাই লুট করিয়া লইয়া গিয়াছে। তল্লাশীর সময় অনেক ক্ষেত্রে এই পিশাচেরা স্বামী পিতা বা পুত্রের সামনেই -মাবোনদের বেইজ্জত করিয়াছে, ধর্ষণ করিয়াছে।
ইয়াহিয়া খানের লেলাইয়া দেওয়া পশুগুলি সম্ভবতঃ আশা করিয়াছিল যে ব্যাপক তল্লাশী ও শহরের পথে ঘাটে চেকপোষ্ট বসাইবার ফলে ঢাকা শহরে হয়ত গেরিলা ও কমান্ডো তৎপরতা হ্রাস পাইবে।
কিন্তু বাঙলাদেশের মুক্তিযোদ্ধাদের দমন করার সাধ্য ইয়াহিয়া গোষ্ঠীর নাই। তাই এই ব্যাপক তল্লাশীর মধ্যেও ঢাকা শহরে মুক্তিযোদ্ধাদের তৎপরতা বন্ধ হয় নাই। প্রায় প্রতি রাতেই গেরিলা ও কমাণ্ডো তৎপরতা চলিয়াছে। ঢাকা শহরের জনগণ বলাবলি করিতেছেন “আমাদের গেরিলা বাহিনী বাহাদুর বটে।”
মুক্তিযুদ্ধ ॥ ১: ৯ ॥ ৪ সেপ্টেম্বর ১৯৭১

সূত্র: আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম ও মুক্তিযুদ্ধ ১৯৭১ . ১ম খণ্ড – মুনতাসীর মামুন