জল্লাদের স্থলে বেইমান
(নিজস্ব বার্তা পরিবেশক)
বিশ্ববাসীকে ধোঁকা দেওয়ার উদ্দেশ্যে ইয়াহিয়া-চক্র এক নূতন চাল চালিয়াছে। বাংলাদেশের অধিকত এলাকার গভর্নর পদে জেনারেল টিক্কার স্থলে শাসকচক্রের পা-চাটা, মুসলিম লীগপন্থী ডাঃ এ, এম, মালিককে নিয়োগ করা হইয়াছে। জঙ্গী শাসকেরা বোধ হয় ভাবিয়াছে, একজন বাঙালী বেসামরিক গভর্নর নিয়োগ করিলে স্বাভাবিক অবস্থা ফিরাইয়া আনা হইতেছে বলিয়া বিদেশে প্রচারের সুবিধা হইবে। বিশেষত জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের আসন্ন অধিবেশনে বাংলাদেশ প্রসঙ্গ উত্থাপিত হওয়ার সম্ভাবনার প্রেক্ষিতে ইহার উপর গুরুত্ব দেওয়া হইতেছে।
কিন্তু বেসামরিক গভর্নর নিয়োগের বিষয়টি যে, নিছক ভাওতাবাজি ছাড়া কিছু নয় তাহা বুঝিতে দেশে বা বিদেশে কাহারও অসুবিধা হইবে না। কারণ প্রথমত, সামরিক শাসন চালু থাকার ফলে প্রকৃত ক্ষমতা সামরিক বাহিনী বা মার্শাল ল’ এ্যাডমিনিস্ট্রেটরের হাতেই রহিয়া যাইবে এবং গভর্নর হইবে সাক্ষী গোপাল মাত্র।
দ্বিতীয়ত, ডাঃ মালিক জনপ্রতিনিধি বা জনগণের আস্থাভাজন নয়, সে ইয়াহিয়া চক্রের অনুগত দালাল মাত্র। জনগণের কাছে টিক্কা বা মালিকের মধ্যে কোন পার্থক্য নাই, সে বাঙালী হইলেও বেইমান। আর বেইমানকে কিভাবে সাজা দিতে হয় তাহা মুক্তিবাহিনী ভালভাবেই জানে।
ডাঃ মালিককে গভর্নর পদে নিয়োগ ইয়াহিয়া- চক্রের রাজনৈতিক চালে ব্যর্থতা ও দেউলিয়া পনারই জাজ্জ্বল্যমান প্রমাণ। ইয়াহিয়া-চক্র ইতিপূর্বে বাঙলাদেশের কিছু সংখ্যক নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি ভাগাইয়া নিয়া শিখণ্ডী সরকারি খাড়া করিতে চেষ্টা করিয়াছিল। কিন্তু উহা ব্যর্থ হওয়াতেই জঙ্গী শাসকগোষ্ঠী ডাঃ মালিকের মত পুরাতন পাপী ও মুখচেনা দালালকে গভর্নর নিযুক্ত করিতে বাধ্য হইয়াছে।
মুক্তিযুদ্ধ ॥ ১: ৯ ॥ ৪ সেপ্টেম্বর ১৯৭১
সূত্র: আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম ও মুক্তিযুদ্ধ ১৯৭১ . ১ম খণ্ড – মুনতাসীর মামুন