You dont have javascript enabled! Please enable it!

বাংলাদেশের কুমিল্লা-মিঞাবাজার-চৌদ্দগ্রাম-চিয়ড়া থেকে
পাক সামরিক জুন্টার বর্বরতার মর্মন্তদ চিত্র
গৌতম দাস

গত ১৪ ডিসেম্বর যখন বাংলাদেশের অভ্যন্তরে কুমিল্লা জেলায় প্রবেশ করি তখনও রাজধানী ঢাকাসহ অনেক গুরুত্বপূর্ণ শহর ও সেনানিবাসের পতন হয়নি। তখনও শোনা যাচ্ছিল ময়নামতি সেনানিবাসের চারদিক থেকে কামানকে ও ট্যাঙ্কের মুহুর্মুহু গর্জন ধ্বনি। অপরদিকে পাক ফ্যাসিস্ট সামরিক জুন্টার ইতিহাসের বর্বরতম নৃশংসতার হাত থেকে মুক্তিবাহিনী ও ভারতীয় বাহিনীর দুর্জয় অভিযানের ফলে যে সমস্ত অত্যাচার কবলিত অঞ্চল মুক্ত হয়েছিল সেই সমস্ত অঞ্চলে সোনার বাংলার ক্ষত-বিক্ষত চিত্র মুছে দিয়ে নতুন করে বাংলাদেশ গড়ার কাজে হাত দিয়েছেন বাংলার অসংখ্য তরুণ উজ্জীবিত প্রাণ। গত ন’মাস ধরে জঙ্গিশাহীর অত্যাচারের কাহিনী যাদের কাছ থেকে এই মুক্ত বাংলার বুকে দাঁড়িয়ে শুনছিলাম তারা কেউ বলতে বলতে বার বার দীর্ঘশ্বাস ফেলছিলেন আর তাদের-মুখ চোখ দিয়ে যেন অগ্নি স্ফুলিঙ্গের কণা ছুটে বেরুচ্ছিল। নিজের চোখে সেই অত্যাচারের চিত্র যা দেখেছি এবং ঐ অঞ্চলগুলোর অগণিত জনতার কাছ থেকে যে বিবরণ সংগ্রহ করেছি তা সংক্ষিপ্তভাবে পাঠকদের সামনে তুলে ধরছি।
১৪ ডিসেম্বর সকালে যখন বাংলাদেশের সীমান্তে মিঞাবাজারে প্রবেশ করছিলাম তখন মনে হচ্ছিল এ সোনার বাংলা না শ্মশান বাংলা? যেদিকে তাকাচ্ছিলাম শুধু ফাঁকা মাঠ। একটি বাড়ি ঘর নেই। রাস্তাগুলো মাইনের আঘাতে ক্ষত-বিক্ষত। গাছপালা পর্যন্ত পুড়ে ছারখার। মিঞাবাজারের বাজারটিকে দেখে মনে হয় না পূর্বে এখানে একটি বিরাট জনবসতিপূর্ণ বাজার ছিল। ভস্মস্তূপের ওপর দাঁড়িয়ে আছে দোকান ঘরগুলোর চিহ্নমাত্র। স্কুল ঘরটির ছাদ নেই। ডিনামাইট দিয়ে উড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। আর দেখলাম প্রতিটি বাড়ির ধ্বংসস্তূপের পাশে বিরাট বিরাট বাকার। দেখা হলো ঐ গ্রামের শিক্ষিত যুবক মিন্টুর সাথে। তিনি বললেন যে, চিনতে পারেন কিনা দেখুন তো এখানে আমাদের বাড়ি ছিল। চিনব কী করে? সেই ন’মাস পূর্বে বাড়ি-ঘর জ্বালিয়ে দিয়েছে। সেই ধ্বংসস্তূপের ওপর বনের লতাপাতা গজিয়ে একটা উপবনের মতো দেখাচ্ছিল। কী জবাব দেব মিন্টু ভাইকে এলাম সি. এন্ড বি রোডের ধারে এক দোকান ঘরের সামনে। দেখি এক বিরাট বটগাছে ছোট একটা ঘরের মতো পাক বাহিনীর ‘অবজারবেশন পোস্ট’ অগ্নিদ্বগ্ধ। নিচে দুটি গাড়ি পুড়ে ছাই হয়ে আছে। জিজ্ঞেস করলাম কী হয়েছিল? দোকান ঘর থেকে কয়েকজন বৃদ্ধ বেরিয়ে এসে বললেন, গাছের ওপরের অবজারবেশন পোস্টে ভারতীয় বাহিনীর মর্টারের সেল এসে পড়ায় দু’জন পাক সৈন্য আহত হয়ে নিচে পড়ে যায়। গাছের নিচে ছিল একটা ট্রাক আর ট্যাক্সি। ও দুটোতে আগুন ধরে যায়। সেই আগুনে নিহত হয় আহত পাক সৈন্য দু’জন। তখন চারদিকে ভিড় জমে গেছে। সবাই অনুরোধ করছেন এদিক ওদিকের গ্রামের অভ্যন্তরে অত্যাচারের চিত্র দেখে আসতে। কিন্তু দুঃখিত হয়ে জানালাম যাবো অনেক দূর। তাই সমস্ত অঞ্চলের চিত্র সংগ্রহ করা সম্ভব হবে না।
পাঠকদের জেনে রাখা ভালো, ফেনী থেকে কুমিল্লা পর্যন্ত এক সময় ছিল সামন্ত প্রভাবিত অঞ্চল। গ্রামের বুক চিরে চলে গেছে ঢাকা-চট্টগ্রাম ট্রাঙ্ক রোড। এই বিস্তৃত এলাকার সামন্ত প্রভুরা এখনও পূর্ব বাংলার অর্থনীতিতে একটা বিরাট ভূমিকা নিয়ে আছেন। তারা যখন এখানে ছিলেন তৈরি করিয়েছিলেন বিরাট বিরাট দিঘি। কেন এই প্রসঙ্গের অবতারণা করলাম সে দিকে যাচ্ছি।
মিঞা বাজার থেকে চৌদ্দ গ্রামের দূরত্ব বারো মাইল। মিনিটে মিনিটে পাওয়া যেত যে কোনো যানবাহন। কিন্তু এখন ভিন্ন পরিস্থিতি। পাক বাহিনী রাস্তা কেটে বাঙ্কার করেছে। যাওয়ার সময় পুলগুলো ভেঙে দিয়েছে। এই বারো মাইল রাস্তায় এখন রিকশা ছাড়া কিছুই চলে না। মিঞা বাজার থেকে চিষড়া পর্যন্ত এই বারমাইল রাস্তায় এখনো পাঁচটা পুল ভাঙা। সুতরাং রিকশায় ভাড়া বেশিই নেবে? সকাল সাড়ে নটায় যখন সেখান থেকে চৌদ্দগ্রাম চিষড়ার পথে রওয়ানা হলাম তখন মাঠে চাষিরা ধান কাটছিলেন। লক্ষ করলাম সামন্ত যুগের সেই বড় বড় দিঘিগুলো কেটে কেটে তৈরি করা হয়েছে বিরাট বিরাট বাঙ্কার। এক একটা বাঙ্কার তৈরি হয়েছে প্রথমে ইট সিমেন্টের শক্ত গাঁথুনি দেয়াল তুলে। তার উপর মাটি। সুতরাং বুঝতেই পারা যায় কতো পোক্ত করে এরা আক্রমণের ঘাঁটি তৈরি করেছিল। এই দীর্ঘ রাস্তার দু’পাশে অন্তত হাজার দু’য়েক এমনিতর বাঙ্কার আপনাদের চোখে পড়বে। আরো চোখে পড়বে রাস্তার দু’পাশের গ্রামগুলোর ক্ষতচিহ্ন-দগ্ধ গ্রাম, দগ্ধ দোকান, বাজার, দগ্ধ গাছপালা। রাস্তার পাশের হাইড্রো ইলেকট্রিকের বড় বড় থামগুলো এবং ট্রাঙ্ক টেলিফোনের থাম উপড়ে পড়ে আছে মাঠের উপর। অবশ্য এটা করেছিলেন স্বাধীনতা সংগ্রামীরা শত্রুদের যোগাযোগ ব্যবস্থা বিচ্ছিন্ন করে দেওয়ার স্বার্থে।
চৌদ্দগ্রামের অন্য দৃশ্য। যাঁরা উইলফ্রেড বাচেটের ‘ভিয়েতনামের গেরিলা যুদ্ধ’ লড়েছিলেন তাঁরা দেখেছেন ভিয়েতনামের মুক্তি সংগ্রামীরা মার্কিনী ও পুতুল সৈন্যদের জন্য তৈরি করেছিলেন তীরের ফলার মতো করে মরণ ফাঁদ। চৌদ্দগ্রামের পাকবাহিনীর লোক যারা ছিল এরাও কম নয়। রাস্তার এবং বাঙ্কারগুলোর চারধারে এরা গেঁথে রেখেছে তীরের ফলার মতো বাঁশেরকাঠি। যাতে করে মুক্তিবাহিনী বা ভারতীয় বাহিনী ক্রলিং করে অগ্রসর হতে বা পিছিয়ে যেতে না পারে। জিজ্ঞেস করেছিলাম এই অঞ্চলের প্রখ্যাত কৃষক নেতা গেছু মিঞাকে এত পাকা বাঙ্কার আর এ ধরনের মরণ ফাঁদ তৈরি করেও কেন পাকবাহিনী মার খেল?
তার জবাবে তিনি জানালেন প্রথমত এরা এলাকার কোনো লোকের কাছ থেকে কোনো প্রকার সহযোগিতা পায়নি। কারণ একদিকে স্বাধীনতা পাগল মানুষ আর অপরদিকে গ্রামে গ্রামে লুটপাট, অগ্নিসংযোগ ও নির্বিচারে গণহত্যার ফলে যে পরিস্থিতির সৃষ্টি করেছিল পাকবাহিনী। পক্ষে গ্রামবাসীদের কাছ থেকে সহযোগিতার আশা করা বৃথা। দ্বিতীয়ত গ্রামের কৃষক গেরিলারা মুক্তিবাহিনীর সাথে যুক্তভাবে যে গেরিলা পদ্ধতিতে এদের বিরুদ্ধে আক্রমণ সংগঠিত করেছিল তাতে পাকবাহিনী বিপর্যস্থ হয়ে পড়েছিল।
প্রসঙ্গক্রমে তিনি দেখালেন সেনামতি ও গোলমাণিকা দিঘির পাড়ে কীভাবে গেরিলা কায়দায় আক্রমণ চালিয়ে ৬১ জনকে নিহত করে এবং আরো ৩০ জনকে আহত করেন। গেরিলারা দুটো ভাগে বিভক্ত হয়ে দু’দিক থেকে আক্রমণ চালিয়ে পাকবাহিনীর এই ঘাঁটিটিকে নিশ্চিহ্ন করে দেন। এছাড়া ছিল তাদের মধ্যে যোগাযোগ ব্যবস্থার অভাব। এরা গ্রামে লুটপাটের জন্য যখন বের হয় তাও ৫০/৬০ জনের দল ছাড়া নয়। এছাড়াও এই অঞ্চলে আরো অনেক ছোট-বড় যুদ্ধ হয়েছে। শেষ যে সংঘর্ষ হলো তা এ মাসের সাত তারিখ। গেরিলারা হাসানপুর স্টেশনের পাশে ১৫০ জনের একটি রাজাকার দলের উপর আক্রমণ চালিয়ে ১৬ জনকে নিহত করে। সেদিনের বিবরণ দিয়ে গেদু মিঞা জানালেন আমাদের গেরিলা বাহিনী যখন এই যুদ্ধে জয়লাভ করে তখন রাত শেষ। হাজার হাজার জনতা গ্রাম থেকে বেরিয়ে এসে তাঁদের অভিনন্দিত করেন। এর থেকে পরিষ্কার বোঝা যায় কত দরদী সমর্থন ছিল প্রতিটি গ্রামবাসীর এই স্বাধীনতা সংগ্রামে।
ঘুরে ফিরে দেখলাম চিয়ড়ায় পাক অত্যাচারের চিত্রগুলো। একজন গ্রামবাসী দেখালেন একটি কবরখানা। সেখানে গ্রামের ৬টি বলিষ্ঠ যুবককে হত্যা করে কবর দেয়া হয়েছে। এক দুঃখিনী মায়ের ৩টি সন্তানকেই মেরে ফেলেছে এই নাজীরা যাদের ৩টি যুবতী বধূর হাহাকারে প্রতিটি বৃদ্ধের যুব চোখে আগুন জ্বলে। চিয়ড়া বাজার থেকে যে রাস্তা হাসানপুরের দিকে গেছে সে রাস্তার পাশের মাঠের পাশে দাঁড়িয়ে যখন দেখছিলাম তখন এক বৃদ্ধ চাষি এসে বললেন, “দাদা এই যে মাঠ দেখছেন এই মাঠে ছিল বর্ষার পানি। যখন আমরা গ্রাম রক্ষী বাহিনীর কাজ থেকে নাজ্জী বাহিনী আসার খবর পেলাম তখন গ্রামের প্রতিটি যুবক-যুবতী, ছেলে-মেয়ে, স্ত্রী-পুরুষ এই পানি ভেঙে পালাতাম শুধু জীবনটুকু বাঁচাতে। কয়েক মাইল দূরে পানির মাঝে দাঁড়িয়ে দেখলাম গ্রাম থেকে লেলিহান অগ্নিশিখার চিহ্ন’ এই অত্যাচারের কাহিনী আর কতো আপনাদের জানাবো। গেলাম দাতব্য চিকিৎসালয়টি দেখতে। এতদিন ডাক্তার ছিল না। এখন ডাক্তার এসেছেন, কিন্তু কোনো ওষুধ নেই। তাই দেখলাম ১৫ তারিখে সাধারণ জ্বরের কোনো ওষুধ না পেয়ে একজন মারা গেলেন। ওষুধ এখন একান্ত প্রয়োজন।
দেখলাম চাষিরা ধান কাটছিলেন। জিজ্ঞেস করলাম, কীভাবে এ কাজ চলছে। একজন চাষি ভাই বললেন যে, তাঁরা সভা করে সিদ্ধান্ত নিয়ে আজকে এই জমির ধান তুলছেন কাল ঐ জমির ধান তুলবেন। এভাবে একটা সমষ্টিগত প্রচেষ্টার মাধ্যমে এ কাজ চলছে। তবে যেখানে কৃষক সমিতি আছে সেখানে এ ধরনের ব্যবস্থা অন্য অঞ্চলে এ দৃশ্য চোখে পড়েনি।
পাক বাহিনীর সাথে যে সমস্ত দালালরা সহায়তা করেছিল তাদের কী শাস্তি দেয়া হচ্ছে জানতে চাইলে একজন মুক্তিবাহিনীর সদস্য জানালেন, যে সমস্ত এলাকায় এই দালালরা অত্যাচার করতে সেখানে একটা নির্দিষ্ট সময় করে সভা ডাকা হয়। তাতে গ্রামের প্রতিটি পুরুষলোক যোগ দেন। যে সমস্তলোক অত্যাচারে সাহায্য করেছে তাদের অপরাধ অনুযায়ী বিচার হচ্ছে। কাউকে খুনের অপরাধে হত্যা করার সিদ্ধান্ত হচ্ছে সর্বসম্মতিক্রমে আবার যারা লুট ও অগ্নিসংযোগ করেছে তাদের লুটের মাল ফিরিয়ে দেয়া, ঘরবাড়ি মেরামত করে দেওয়া এবং অন্যান্য স্তশাদিয়া হচ্ছে। এ কাজ খুব ভালোভাবেই চলছে।
১৫ ডিসেম্বর যখন রাস্তার দু’ধারের অত্যাচারের নমুনা দেখতে দেখতে কুমিল্লা এসে পৌঁছুলাম তখন শহর কুমিল্লা মোটামুটি স্বাভাবিক। ঘণ্টা খানিক ধরে রিকশা করে সমস্ত শহর পাক দিয়ে দেখলাম কুমিল্লার দক্ষিণ অঞ্চলের মতো এখানে সে ধরনের অত্যাচারের তেমন কিছু নেই। চক বাজারের একটা চায়ের দোকানে বসে মালিককে যখন জিজ্ঞেস করলাম কীভাবে অত্যাচার চলছে এ শহরে। তিনি জানালেন, সাধারণভাবে অগ্নিসংযোগ তেমন একটা হয়নি। তবে নির্বিচারে লুট চলেছিল। প্রতিটি দোকানঘর থেকে লুট করেছে পাকবাহিনী। তাদের সাথে যোগ দিয়েছিল শহরের গুণ্ডা-পাণ্ডারা। তাই দেখলাম দোকানগুলোতে জিনিসপত্রের নগণ্য চেহারা।
এখানেই যে সমস্ত জিনিসপত্রের অভাব দেখা দিয়েছে তার মধ্যে অন্যতম ওষুধ, কেরোসিন, পেট্রোল, ডিজেল, চিনি, চা এই সমস্তসামগ্রী। এ সমস্ত ওষুধ যদি ভারত বা অন্য কোনো বন্ধু দেশ থেকে সাহায্য না দেয়া হয় তাহলে অবস্থা ভয়াবহ হবে।
এই বিবরণ শেষ করার পূর্বে পাঠকদের জানাচ্ছি বাংলাদেশের মানুষও আজ মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে আওয়াজ তুলেছেন, যে মার্কিন সাম্রাজ্যবাদীরা বাংলাদেশে ইয়াহিয়া শাহীর গণহত্যাকে সমর্থন করেছে, যে সাম্রাজ্যবাদীরা বাংলার স্বাধীনতা সংগ্রামকে বানচাল করার জন্য চট্টগ্রাম বন্দর অভিমুখে ৭ম নৌবহর পাঠিয়েছে সেই ঘৃণিত রাষ্ট্র মার্কিন সাম্রাজ্যবাদীদের বিরুদ্ধে বাংলাদেশের জনগণও তীব্র বিক্ষোভে ফেটে পড়েছেন। চিয়ড়া চৌদ্দগ্রাম থেকে কুমিল্লা পর্যন্ত সমস্ত এলাকার মানুষ রেডিওতে সংবাদ শুনতে শুনতে মার্কিন সাম্রাজ্যবাদী চক্রেরবিরুদ্ধে তীব্র বিক্ষোভ প্রকাশ করছেন।
দেশের ডাক, ২৪ ডিসেম্বর, ১৯৭১

সূত্র: আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম ও মুক্তিযুদ্ধ ১৯৭১ . ১ম খণ্ড – মুনতাসীর মামুন

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!