রংপুর, চট্টগ্রাম, সঈদপুরে সেনাদের গুলিতে নিহত ১১০
পূর্ববাংলায় সন্ত্রাস: শনিবার সাধারণ ধর্মঘট
ঢাকা ২৫ মার্চ-পশ্চিম পাকিস্তানি সেনাবাহিনী পূর্ব বাংলায় নতুন করে আবার সন্ত্রাসের রাজত্ব সৃষ্টি করেছে। পূর্ব জেলার কয়েকটি জায়গায় সেনাবাহিনী ও বিক্ষোভকারীদের মধ্যে সংঘর্ষে গত দু’দিন নিহত হয়েছেন ১১০ জন। আহত হয়েছেন দু’শর বেশি। ইসটারন নিউজ এজেনসি আজ এখানে জানিয়েছেন, রংপুরে মারা গিয়েছেন ৪০ জন, সঈদপুরে ৫০ জন এবং চট্টগ্রামে ২০ জন।
আজ রাত্রে ঢাকা বেতার কেন্দ্রর খবর: নিরস্ত্র অসামরিক ব্যক্তিদের হত্যার প্রতিবাদে আওয়ামী লীগ প্রধান শেখ মুজিবর রহমান সারা পূর্ব বাংলায় ২৭ মার্চ শনিবার সাধারণ ধর্মঘটের ডাক দিয়েছেন। তিনি ঘোষণা করেছেন, এই সন্ত্রাসজনক পরিস্থিতি মুখ বুজে সহ্য করা হবে না। প্রেঃ ইয়াহিয়া খানের কাছে তাঁর দাবি: নিরস্ত্র ব্যক্তদের ওপর গুলিবর্ষণের ঘটনা সম্পর্কে অবিলম্বে তদন্তের আদেশ দিতে হবে।
চট্টগ্রাম বন্দরে একটি জাহাজ থেকে অস্ত্রশস্ত্র ও গোলাবারুদ খালাস করতে ডক কর্মীরা অস্বীকার করেন। তাই সেনাবাহিনীর লোকেরা ওই জাহাজ থেকে মাল খালাস করতে গেলে হাজার হাজার লোক তাতে বাধা দেওয়ার চেষ্টা করেন।
জনসাধারণের দিক থেকে প্রতিরোধ এলে সেনাবাহিনীর বিনা প্ররোচনায় নিরস্ত্র লোকদের ওপর গুলি ছোঁড়ে।
রংপুরের ডেপুটি কমিশনার এই বলে অভিযোগ করেন যে, তাঁর সঙ্গে কোনরূপ পরামর্শ না করেই সেনাবাহিনী ওই এলাকার দায়িত্ব নিজেদের হাতে নিয়েছেন। এখানে অন্ততপক্ষে ৪০ জন নিহত হয়েছে। বেতারে ডেপুটি কমিশনারের উক্তি উদ্ধৃত করে এই কথা বলা হয়।
বুধবার রংপুরের রাত ৭টা থেকে ২৪ ঘণ্টার কারফু জারি করা হয়। আজ বিকালে চার ঘণ্টার জন্য কারফু শিথিল করা হয়। আজ বিকাল ৫টা থেকে আগামীকাল সকাল ৭টা পর্যন্ত কারফু পুনরায় বলবৎ করা হয়।
রংপুর জেলার সঈদপুর থেকে পাওয়া খবরে জানা যায়, এই হাঙ্গামায় সেনাবাহিনীর লোকেরাও হতাহত হয়েছে। সেনাবাহিনীর লোকেরাই বস্তুতপক্ষে এখানে ‘বিনা প্ররোচনায়’ গুলি চালায়। আরও মজার কথা এই যেখানে রাজনৈতিক সংকট নিরসনের জন্য শেখ মুজিবর রহমান এবং প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খাঁ ও অন্যান্য নেতাদের মধ্যে আলোচনা অব্যাহত, ঠিক সেই সময় এই ধরণের হাঙ্গামা ঘটেছে।
রংপুরে জনসাধারণ সামরিক বাহিনীর একটি গাড়িকে আক্রমণ করে। ফলে সেনাবাহিনীর কিছু সংখ্যক আহত হয়। বেতারে প্রচারিত খবরে বলা হয়, অন্তত ৫০টি বাড়িতে অগ্নিসংযোগ করা হয় এবং সেগুলি পুড়ে ছাই হয়ে যায়।
গভীর ষড়যন্ত্র
সঈদপুরের ঘটনাকে একটি গভীর ষড়যন্ত্র বলে উল্লেখ করে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শ্রী তাজুদ্দিন আহমেদ বলেন, আমাদের দাবি- দাওয়া সম্পর্কে শান্তি পূর্ণ মীমাংসার সমস্ত প্রয়াসকে বানচাল করে দেওয়াই এর উদ্দেশ্য।নিরস্ত্র জনতার উপর এই বর্বরোচিত আক্রমণ নিঃসন্দেহে শান্তিপূর্ণ আবহাওয়াকে ঘোলাটে করে তুলবে। শ্রী আহমদ জনগণকে শত্রুপক্ষের এই ষড়যন্ত্র সম্পর্কে সতর্ক থাকতে বলেছেন এবং যে কোন ধরণের আত্মত্যাগের জন্য প্রস্তুত থাকার আহবান জানিয়েছেন।
শ্রীআহমেদ অবিলম্বে সেনাবাহিনীকে ব্যারাকে ফিরিয়ে নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন।
সাদা পোশাকে সশস্ত্র একদল লোককে গ্রামে ঢুকতে বাধা দেওয়ার ফলেই এই ঘটনার উদ্ভব। বাধা পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সশস্ত্র ব্যক্তিরা স্থানীয় অধিবাসীদের উপর গুলি চালায়। গুলিতে আহত চারজনকে রংপুর হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়।
দৈনিক আনন্দবাজার, ২৬শে মার্চ, ১৯৭১
সূত্র: আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম ও মুক্তিযুদ্ধ ১৯৭১ . ১ম খণ্ড – মুনতাসীর মামুন