You dont have javascript enabled! Please enable it!

জয় বাংলা! স্বাধীন বাংলা! সার্বভৌম রাষ্ট্র বাংলা!

বীরের রক্তস্রোত আর তামাম দুনিয়ার ধিক্কার-নিন্দাবাদে পাক জঙ্গি সরকার দিশেহারা: পরাজয়ের মুখে ইয়াহিয়া খাঁ’র বর্বরতা ও নৃশংসতার ইতিহাস রচনা।
আগরতলা ৩১ মার্চ। পূর্ব বাংলায় সংগ্রাম চলছে আজ এক মাস যাবত। প্রথমে নাম ছিল তার জয় বাংলা। রূপ ছিল অহিংস ও অসহযোগ। একটানা চলে ২৫ দিন। জঙ্গি শাসক ও জঙ্গি আইন তাল সামলাতে না পেরে আন্দোলন দমনে হিংস্র হয়ে ওঠে। শুরু হয় নরমেধ যজ্ঞ। নির্বিচারে গণহত্যার তাণ্ডব চলে রাজধানী ঢাকা ও অন্যান্য বড় বড় শহরে। আন্দোলন রূপান্তরিত হয় স্বাধীন বাংলা ঘোষণার। ২৬ মার্চ স্বাধীন পূর্ববঙ্গ। ২৮ মার্চ গঠিত হয় স্বাধীন বাংলা সরকার। ঘোষিত হয় সার্বভৌম রাষ্ট্র বাংলা। আবেদন জানান হয় বিশ্বের সমগ্র রাষ্ট্রের নিকট স্বাধীন বাংলা সরকারের স্বীকৃতির জন্য। মাত্র পাঁচ দিনের ঘটনা। পাঁচ লক্ষাধিক বীরের তাজা রক্তস্রোতে টিক্কা খাঁ’র অক্কা ঘটিয়ে পাক জঙ্গি ফৌজ ভেসে গেল ঢাকা শহর থেকে বঙ্গোপসাগরের দিকে। পেছন পেছনে তাড়া করে চলছে মুক্তিফৌজের দল (বেঙ্গল রেজিমেন্ট)। পাক সরকারের প্রতি ধিক্কার আর নিন্দাবাদে একে একে বিশ্বের প্রায় সব কয়টি দেশ সোচ্চার হয়ে উঠল। রক্তের বিভীষিকা আর ধিক্কার-নিন্দাবাদে পাক জঙ্গি ফৌজ হন্যে কুকুরের ন্যায় মুক্তিফৌজের তাড়া খেয়ে যেখানে যাচ্ছে সেখানেই কোরবানি হচ্ছে। কোথাও আশ্রয় মিলছে না। গ্রামে ঘরের- মা বোনেরা ধেয়ে আসছে বটি নিয়ে জবাই করতে। জঙ্গি শাসক ইয়াহিয়া খাঁ আর তার উপদেষ্টাবৰ্গ (সকলেই পশ্চিমী) সকলেই ক্ষিপ্ত। সোনার বাংলাকে ছাইয়ে পরিণত করতে চায় এরা। ট্যাঙ্ক চালিয়ে প্রাচীন ঢাকা নগরীকে শ্মশানে পরিণত করেছে। মর্টার ব্যবহার করছে। বিমান থেকে বোমা নিক্ষেপ করছে। যেখানে প্যারাসুটে সৈন্য নামছে সেখানেই কোতল হচ্ছে। চট্টগ্রাম বন্দরে আগত জাহাজ থেকে সমর সম্ভার নামাতে না পেরে ডকটাকে জ্বালিয়ে দিয়েছে। এক কথায় আধুনিক যুদ্ধাস্ত্রে সজ্জিত লক্ষাধিক জঙ্গি পাক ফৌজ যেখানে কেবলমাত্র দা, কুড়াল, লাঠি ও গাদা বন্দুক সম্বল মুক্তিফৌজের সম্মুখে দাঁড়াতে পারছে না, সেখানে প্রভুত্বের ম্যাদ শেষ, আধিপত্যের আশা দুরাশা মাত্র বুঝতে পেরেই জঙ্গি পাক শাসক সভ্যযুগে বর্বরতা ও নৃশংসতার ইতিহাস সৃষ্টি করছে।
গতকাল (৩০ মার্চ) পর্যন্ত ঢাকা, চট্টগ্রাম, কুষ্টিয়া ও যশোরে তুমুল সংগ্রাম চলছে বলে স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের খবর। আজ সকালে বলা হয়েছে ঢাকা সম্পূর্ণভাবে মুক্তিফৌজের দখলে আছে। কোথাও মুখোমুখি সংগ্রামের খবর নেই, তবে পর্যুদস্ত ও পলায়নপর পাক জঙ্গি ফৌজেরা যাকে পায় তাকেই গুলি করে, সঙ্গে সঙ্গে নিজেরাও নিরস্ত্র জনতার হাতে জবাই হচ্ছে।
দৃষ্টিপাত, ৩১ মার্চ, ১৯৭১ ইং

সূত্র: আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম ও মুক্তিযুদ্ধ ১৯৭১ . ১ম খণ্ড – মুনতাসীর মামুন

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!