You dont have javascript enabled! Please enable it! 1971.02.02 | পূর্ববঙ্গের কৃষকদের কাছে পশ্চিমবঙ্গের কৃষকদের খোলা চিঠি - কৃষক হত্যাকারী ও জমিচোরদের শাস্তি দিন | কালান্তর - সংগ্রামের নোটবুক

পূর্ববঙ্গের কৃষকদের কাছে পশ্চিমবঙ্গের কৃষকদের খোলা চিঠি
কৃষক হত্যাকারী ও জমিচোরদের শাস্তি দিন
(স্টাফ রিপোর্টার)

কলকাতা ১ ফেব্রুয়ারি-বসিরহাটের কৃষক হত্যাকারী এবং জমিচোরদের একাংশ পূর্ব পাকিস্তানে আছে। এদের বিরুদ্ধে লড়াই ও শাস্তিদানের জন্য পূর্ববাংলার খুলনা জেলার কৃষকদের কাছে কমিউনিস্ট পার্টির নেতা সর্বশ্রী আবদুর রাজ্জাক খাঁ, মহম্মদ ইলিয়াস, মনোরঞ্জন শূর এবং এক হাজার কৃষক পৃথক পৃথকভাবে খোলা চিঠিতে আবেদন করেছেন।
ঘটনার বিবরণে প্রকাশ, বসিরহাট মহকুমার মোল্লপরিবার স্বনামে এবং বেনামে বহু জমি উভয় বাংলাতে রেখেছেন। মোল্লা পরিবারের কয়েকজন পশ্চিমবাংলায় এবং কয়েকজন পূর্ববাংলায় থাকেন। গত বৎসর কমিউনিস্ট পার্টি বসিরহাট মহকুমার মোল্লাদের বেআইনী জমি দখল করে এবং দখল রেখে চাষ করে। ইতিমধ্যে পূর্ব পাকিস্তানের খুলনা জেলায় মোল্লা পরিবার ওখানকার ১১টি হিন্দু পরিবারের সঙ্গে ১৩২ বিঘা জমি বিনিময় করে এবং বসিরহাটের মোল্লাদের দখলীকৃত ১৩২ বিঘা জমি ঐ ১১টি হিন্দু পরিবারকে খাতায়পত্রে দিয়ে দেয়। এই ১১টি হিন্দু পরিবার পাকিস্তান সীমানা অতিক্রম করে বসিরহাটে আসেন। এই উদ্বাস্তু পরিবারগুলি কিছু নগদ টাকা, সোনার গহণাপত্র এবং অস্থাবর সম্পত্তির মূল্য বাবদ টাকা-পয়সাও পূর্ব-পাকিস্তানে মোল্লাদের কাছে জমা রাখেন। তাদের প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয় যে, বসিরহাটে আসার পর এখানকার মোল্লা পরিবারের কর্তাব্যক্তিগণ এই টাকা ফেরৎ দেবেন। বসিরহাটে আসার পর এই ১১টি উদ্বাস্তু পরিবার জানতে পারেন যে মোল্লা পরিবার তাদের বেনাম জমিই বিনিময় করতে চায়। কিন্তু এই বেনাম জমি গরীব কৃষক দখল করে নিয়েছেন। এই ১১টি পরিবার নিজেদের উদ্বাস্তু হিসাবে না দেখানোয় তারা সরকারী সাহায্যও পান না এবং কষ্টে দিন কাটান।

আবার পূর্ববঙ্গে
এরপর ঐ ১টি পরিবার ঘুরে আবার পূর্ববঙ্গে যান এবং সেখানকার অধিবাসীদের ঐকথা জানান। এরপর ঐ অঞ্চলে সভা হয়। ঐ সভায় আওয়ামী লীগের নেতা নবনির্বাচিত আইনসভার সদস্যও উপস্থিত থাকেন। ঐ সভা থেকে বলা হয় যে, ১১টি পরিবার বসিরহাটে এসে যদি এই মোল্লা পরিবারের বেনাম জমির কথা লিখিয়ে নিতে পারেন তাহলে পাকিস্তানে ঐ ১১টি পরিবারের জমি ফেরৎ দেওয়ার ব্যবস্থা করা হবে। এবং পাকিস্তানে মোল্লা পরিবারের কর্তা ব্যক্তিদের শাস্তি দেওয়ার ব্যবস্থা করা হবে। এরপর ১১টি পরিবার ঘুরে বসিরহাটে আসেন এবং এখানকার অধিবাসীদের সমস্ত ঘটনা জানান।

কমিউনিস্ট পার্টির চিঠি
এই ঘটনা জানানোর পর কমিউনিস্ট পার্টির পক্ষে সর্বশ্রী আবদুর রাজ্জাক খাঁ, মহম্মদ ইসমাইল এবং মনোরঞ্জন শূর এক দীর্ঘ চিঠিতে পূর্ববঙ্গের খুলনা জেলার অধিবাসীদের সমস্ত ঘটনা এবং মোল্লা পরিবারের ইতিবৃত্ত জানান। এই চিঠির শেষে একথা বলা হয়েছে যে, “পূর্ববাংলার সাম্প্রতিক হাওয়া বদলের দরুন এপার বাংলায় সম্প্রতি আগত ছিন্নমূল উদ্বাস্তুদের মনে নূতন বিশ্বাসের ভিত্তি রচনা করেছে।” এই চিঠিতে বলা হয়েছে যে এপার আর ওপারের বাংলাদেশের সংগ্রামী মানুষ ঐক্যবদ্ধভাবে বেনামদার জনশত্রুদের বিরুদ্ধে লড়াই করবে-সে লড়াই এ আপনারা অংশ গ্রহণ করে ধন্য হন।

কৃষকদের চিঠি
অনুরূপ মর্মে বসিরহাটের এক হাজার কৃষকের পক্ষ থেকেও চিঠি দেওয়া হয়েছে। এই চিঠিতে বলা হয়েছে যে, এক হাজার কৃষকের প্রায় চৌদ্দ হাজার বিঘা জমি মোল্লাগণ বেদখল করেছিল। কৃষক পরিবারগুলিকে উচ্ছেদ করেছে। কৃষক এখন সংগঠিতভাবে এই জমি উদ্ধার করেছে। মোল্লাদের গুরুরা সম্প্রতি দুইজন কৃষক নেতাকে হত্যা করেছে। জানা গেল… কয়েকজন এখন পাকিস্তানে পালিয়ে গেছে। চিঠিতে আশা প্রকাশ করা হয়েছে যে পাকিস্তানের সংগ্রামী কৃষকের কাছেও এই খুনী এবং বেনামদার জমিদাররা রেহাই পাবেন না।
দৈনিক কালান্তর, ২রা ফেব্রুয়ারি ১৯৭১

সূত্র: আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম ও মুক্তিযুদ্ধ ১৯৭১ . ১ম খণ্ড – মুনতাসীর মামুন