You dont have javascript enabled! Please enable it!

৩ মার্চ ঢাকায় পাক জাতীয় পরিষদের অধিবেশন প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়ার ঘোষণা:
পাকিস্তানের রাজনীতিতে নতুন অধ্যায়ের সূচনা
(বিশেষ প্রতিনিধি)

নয়াদিল্লী, ১৩ ফেব্রুয়ারি-অবশেষে পাকিস্তানের জঙ্গী প্রেসিডেন্ট জেনারেল ইয়াহিয়া খাঁ- নির্বাচিত জাতীয় পরিষদের প্রথম অধিবেশন আহ্বান করেছেন। পূর্ব- পাকিস্তানের রাজধানী ঢাকায় প্রাদেশিক আইনসভা ভবনে আগামী ৩ মার্চ এই অধিবেশন বসবে। প্রেসিডেন্টের এই হুকুমনামা আজই জারি হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে রেডিও পাকিস্তান তা প্রচার করেছে।
পাকিস্তানের স্বাধীনতার পর এই প্রথম মাত্র দু’মাস আগে -প্রাপ্তবয়স্ক ভোটাধিকারের ভিত্তিতে সারা দেশে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। ইউ এন আই জানাচ্ছে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার আগে প্রেসিডেন্ট সাহেব ঘোষণা করেছিলেন যে, সামরিক শাসন ব্যবস্থা তুলে নিয়ে অসামরিক সরকার গঠন করার জন্য নির্বাচিত-পরিষদগণ পাকিস্তানের সংবিধান রচনা করবে। তিনি এ কথাও বলেছিলেন, নির্বাচনের পর জাতীয় পরিষদের প্রথম অধিবেশনের ১২০ দিনের মধ্যে সংবিধান রচনার কাজ শেষ করে ফেলতে হবে।
সুদীর্ঘ ১৩ বছর প্রথমে ফিল্ড মার্শাল আয়ূব খাঁ এবং পরে বর্তমান সামরিক শাসনের অধীনে দেশকে রাখার পর গণ আন্দোলনের কাছে নতি স্বীকার করে এই ঘোষণা করা হয়েছিল। আগামী ৩০ জুন সেই সময়সীমা অর্থাৎ ১২০ দিন উত্তীর্ণ হবে।
ইয়াহিয়া খাঁ অবশ্য তাঁর সেই ঘোষণায় এ কথাও বলে রেখেছেন যে, নির্দিষ্ট সময় সীমা অর্থাৎ ৩০ জুনের মধ্যে জাতীয় পরিষদ সংবিধান রচনা করতে ব্যর্থ হলে তিনি জাতীয় পরিষদই ভেঙে দেবেন।
এদিকে আজ প্রেসিডেন্ট সাহেবের হুকুমনামা জারি হওয়ার পরই পাকিস্তানের রাজনীতি এক চূড়ান্তপর্যায়ে এসে দাঁড়িয়েছে। একথা এখন স্পষ্ট যে, জাতীয় পরিষদ কোনক্রমেই সংবিধান রচনার কাজে একমতে পৌঁছতে পারবে না। এর প্রধান কারণ হল পূর্ব পাকিস্তানের আওয়ামী লীগ, জাতীয় পরিষদে যার নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা রয়েছে এবং দ্বিতীয় বৃহত্তম দল পশ্চিম পাকিস্তানের পিপলস পার্টির মধ্যে তীব্র মতভেদ।
ইতিমধ্যে পিপলস পার্টির চেয়ারম্যান জেড এ ভুট্টোর সঙ্গে আওয়ামী লীগ নেতা মুজিবর রহমানের সংবিধান প্রণয়ন সংক্রান্ত আলোচনা ব্যর্থ হয়েছে। সম্প্রতি লাহোরে ভারতীয় বিমান ধ্বংস করার ঘটনাকে কেন্দ্র করেও পাকিস্তানের এই দুই দলের মতবিরোধের পরিধি নতুন করে বেড়ে গেছে।
জনাব মুজিবুর রহমান সংবিধান রচনার কাজে তাঁর দলের ঘোষিত ৬ দফা নীতিতেই অবিচল থাকবেন বলে ঘোষণা করেছেন। এই ছ’দফা নীতির ভিত্তি হ’ল প্রদেশের জন্য চাই পূর্ণ স্বায়ত্তশাসন এবং যুক্তরাষ্ট্রীয় সরকারের হাতে থাকবে শুধুমাত্র প্রতিরক্ষা, পররাষ্ট্র এবং নোট ছাপানো ইত্যাদি। জনাব রহমান বিশ্বাস করেন, বিভিন্ন ভৌগোলিক, ভাষা এবং সংস্কৃতিগত ঐতিহ্যের মধ্যে দেশের সংহতি নির্ভর করবে পূর্ণ স্বায়ত্তশাসনের মধ্যেই। অন্যদিকে ভুট্টো সাহেবের ধারণা শক্তিশালী কেন্দ্রই পারে দেশের ঐক্য রক্ষা করতে।
মিলিটারি প্রেসিডেন্ট আবার হুকুম জারি করে বলে দিয়েছেন দু’টি মৌলিক বিষয় সংবিধান না থাকলে তিনি সংবিধান গ্রহণ করবেন না। এ দুটি মৌলিক বিষয় হল (১) প্রজাতন্ত্রের জন্য চাই ঐস্লামিক চরিত্র এবং (২) জাতীয় ঐক্যের স্বার্থ। তিনি আরও হুঁশিয়ারি দিয়েছেন যে, সংবিধান গ্রহণ করতে তিনি অক্ষম হলে- গণপরিষদ ভেঙে দেবেন। গণ-পরিষদের দলগত অবস্থা হল-আওয়ামী লীগ-১৬০, পিপলস পার্টি-৮৩, মুসলীম লীগ (কায়ুম)গ্রুপ- ৯, মুসলিম লীগ (কাউন্সিল), মারকাজী জমায়েত উল-উলেমা-ই পাকিস্তান, জামায়েত- উলেমা-ই-ইসলাম- প্রত্যেকে ৭টি করে, জাতীয় আওয়ামী পার্টি (ওয়ালী গ্রুপ)-৬, জামায়েত-ই- ইসলামী-৪, মুসলিম লীগ (কনভেনশন)- ২, পাকিস্তান ডেমোক্রেটিক পার্টি-১, এবং নির্দল-১৪; মোট ৩০০।
কালান্তর, ১৪ই ফেব্রুয়ারি ১৯৭১

সূত্র: আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম ও মুক্তিযুদ্ধ ১৯৭১ . ১ম খণ্ড – মুনতাসীর মামুন

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!