You dont have javascript enabled! Please enable it! 1969.06.23 | শেখ মুজিবের নীতি নির্ধারণী বিবৃতি : নয়া শাসনতন্ত্র প্রণয়নের জন্য আশু নির্বাচন অনুষ্ঠানের প্রস্তাব | দৈনিক পয়গাম - সংগ্রামের নোটবুক

দৈনিক পয়গাম
২৩শে জুন ১৯৬৯
শেখ মুজিবের নীতি নির্ধারণী বিবৃতি : নয়া শাসনতন্ত্র প্রণয়নের জন্য আশু নির্বাচন অনুষ্ঠানের প্রস্তাব
(ষ্টাফ রিপোর্টার)

আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ মুজিবর রহমান গতকল্য (রবিবার) সামরিক শাসনোত্তর প্রথম নীতি নির্ধারণী বিবৃতিতে ‘৫৬ সালের শাসনতন্ত্র পুনঃপ্রবর্তনের বিরোধিতা করেন এবং আওয়ামী লীগের ৬-দফা ও ছাত্রদের ১১-দফার ভিত্তিতে শাসনতন্ত্র প্রণয়নের প্রস্তাব করেন। এই প্রস্তাবিত শাসনতন্ত্র প্রণয়নের জন্য তিনি সার্বজনীন ভোটাধিকারের ভিত্তিতে অবিলম্বে নির্বাচন অনুষ্ঠানের প্রস্তাব করেন। তিনি বলেন যে, এইরূপ নির্বাচিত পার্লামেন্ট একই সঙ্গে আইন সভা ও গণপরিষদের দ্বিবিধ দায়িত্ব পালন করিবে এবং অনধিক ৬ মাসের মধ্যে শাসনতন্ত্র প্রণয়ন সমাপ্ত করিবে।
আওয়ামী লীগ অফিসে আওয়ামী লীগ কার্যনির্বাহক কমিটির সদস্যদের সহিত ঘরোয়া আলাপ-আলোচনার পর প্রদত্ত বিবৃতিতে শেখ মুজিব বলেন, শাসনতন্ত্র ও অন্যান্য প্রশ্নসহ জনগণের সকল সমস্যার গ্রহণযোগ্য ও স্থায়ী সমাধানের জন্য পাকিস্তানের জনগণ গণতান্ত্রিক সংস্থার মাধ্যমে তাহাদের সার্বভৌমত্ব অবশ্যই কার্যকরী করিবে। কেননা একমাত্র জনগণই নির্বাচিত প্রতিনিধিদের মাধ্যমে তাহাদের লক্ষ্য ও দল পছন্দ করিয়া দেশকে বর্তমান সঙ্কট হইতে উদ্ধার করিতে পারে। সুতরাং ক্ষমতা, ক্ষমতার মালিক অর্থাৎ জনগণের নিকট অবশ্যই প্রত্যর্পণ করিতে হইবে।
বর্তমান কর্তৃপক্ষের নিকট এই ক্ষমতা হস্তান্তরের উপযুক্ত পন্থা হইতেছে সার্বজনীন প্রত্যক্ষ ভোট ও জনসংখ্যার হিসাবে প্রতিনিধিত্বের ভিত্তিতে আশু নির্বাচন অনুষ্ঠানের আয়োজন করা। এই নির্বাচনের উদ্দেশ্য হইবে একটি ফেডারেল পার্লামেন্টারীর কাঠামো তৈরী করা, যাহার মাধ্যমে একটি প্রতিনিধিত্বশীল আইনসভা ও বেসামরিক সরকার প্রতিষ্ঠা করিয়া অবিলম্বে ক্ষমতা হস্তান্তর করা যায়। এই ফেডারেল আইনসভা একই সঙ্গে আইনসভা ও গণপরিষদ হিসাবে কাজ করিবে এবং গণপরিষদ হিসাবে অনধিক ৬ মাসের মধ্যে একটি শাসনতন্ত্র প্রণয়ন করিবে। জনগণের নির্বাচিত প্রতিনিধিগণ এইভাবে শাসনতান্ত্রিক প্রশ্নের সমাধান করিবেন, যাহাতে জনগণের আশা-আকাঙ্ক্ষা ও গুরুত্বপূর্ণ জাতীয় স্বার্থ প্রতিফলিত হইবে।
বস্তুত জনগণই হচ্ছে শক্তি ও সত্যিকারভাবে জাতীয় মতামতের অনুকূল শাসনতন্ত্রই জনগণের শ্রদ্ধালাভ করিতে পারে এবং দেশের মৌলিক আইন হিসাব স্বীকৃতি লাভ করিতে পারে। স্মরণ রাখিতে হইবে যে, ইহার কোন বিকল্প বা সরল পথ নাই।
শেখ মুজিব বলেনঃ আওয়ামী লীগ পুনরায় দলের ৬-দফা কর্মসূচী ও ছাত্রদের ১১-দফা কর্মসূচীর ভিত্তিতে শাসনতন্ত্র প্রণয়নের প্রতিশ্রুতির কথা ঘোষণা করিতেছে। এই দুইটি কর্মসূচীতে পূর্ণ আঞ্চলিক স্বায়ত্তশাসন সম্বলিত ফেডারেল আইনসভা, জনসংখ্যার হিসাবে ফেডারেল আইনসভার সদস্য নির্বাচন, এক ইউনিটের বিলুপ্তি প্রভৃতি সুন্দরভাবে গ্রথিত হইয়াছে।
তিনি বলেন, জনগণ যে উদ্দেশ্যে এতবড় আত্মত্যাগ করিয়াছে, আওয়ামী লীগ উহার পরিপ্রেক্ষিতে নির্বাচনের মাধ্যমে অনুমোদনের জন্য লীগের কার্যসূচী জাতির সম্মুখে পেশ করিবে।
শেখ সাহেব বলেন, সম্প্রতি কোন কোন নেতা দেশের শাসনতান্ত্রিক সমস্যা সমাধানের জন্য ‘৫৬ সালের শাসনতন্ত্র পুনরুজ্জীবনের কথা বলিতেছেন। আওয়ামী লীগ ইহা সমর্থন করে না। কেননা, ‘৫৬ সালের শাসনতন্ত্র উভয় প্রদেশের জনগণের মৌলিক দাবির প্রতিকূল।
তিনি বলেন যে, সাম্প্রতিক আন্দোলনে ছাত্রদের ১১-দফা ও আওয়ামী লীগের ৬-দফার অন্তর্ভুক্ত এক ইউনিট বিলোপ, জনসংখ্যার হিসাবে প্রতিনিধিত্ব ও প্রাদেশিক স্বায়ত্তশাসন কায়েমের স্বপক্ষে জনগণ ব্যাপকভাবে তাহাদের মনোভাব ব্যক্ত করিয়াছে।
তিনি বলেন : বস্তুতঃ পূর্ব পাকিস্তানের অধিকাংশ সদস্য পাশ হওয়ার সময়ও ’৫৬ সালের শাসনতন্ত্র গ্রহণ করে নাই। কেননা, ইহাতে ২১-দফার মাধ্যমে জনগণের দেওয়া ম্যাণ্ডেটের অন্যতম স্বায়ত্তশাসনের বিধান নাই। সেই হইতে এত বৎসর পরে এখন আবার সেই শাসনতন্ত্র জনগণের নিকট গ্রহণযোগ্য হইতে পারে না। শুধু তাহাই নয়, ’৫৬ সালের শাসনতন্ত্রে সহজ সংশোধনের অবকাশ পর্যন্ত নাই।
বিবৃতিতে তিনি আর সময় নষ্ট না করিয়া নির্বাচন অনুষ্ঠানের দাবী জানান।

সুত্র: সংবাদপত্রে বঙ্গবন্ধু: পঞ্চম খণ্ড ॥ ষাটের দশক ॥ চতুর্থ পর্ব ॥ ১৯৬৯