দৈনিক পাকিস্তান
১৫ই মার্চ ১৯৬৯
বিমান বন্দরে শেখ মুজিবের বিপুল সম্বর্ধনা জ্ঞাপন
(ষ্টাফ রিপোর্টার)
গোলটেবিল বৈঠকে যোগদানের পর আওয়ামী লীগ নেতা শেখ মুজিবর রহমান গতকাল শুক্রবার সন্ধ্যায় লাহোর থেকে ঢাকা আগমন করলে বিশাল জনতা তাঁকে বিপুল সম্বর্ধনা জ্ঞাপন করে।
পিআইএ বিমানটি বিমান বন্দরে আগমনের বহু আগে থেকেই বহু সংখ্যক খণ্ড খণ্ড মিছিল পতাকা ও ব্যানার সহকারে বিভিন্ন ধরনের ধ্বনি দিতে দিতে বিমান বন্দরের ভিতরে প্রবেশ করে অপেক্ষা করতে থাকে। বিমান বন্দরের টার্মিনাল ভবনের প্রশস্ত বারান্দা ও ছাদের ওপর বহু আগে থেকেই জনতা ভীড়ে পূর্ণ হয়ে যায়। লাহোর থেকে বিমানটি এসে পৌঁছানোর কিছু আগে পর পর দুটি ফোকার ফ্রেন্ডশীপ বিমানবন্দরে অবতরণ করার সময় জনতা সেই বিমানে শেখ সাহেব আসছে মনে করে ধ্বনী দিতে দিতে ছুটে এগিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে। বহু কষ্টে তাদের নিবৃত্ত করা হয়।
লাহোর থেকে বিমানটি যথা সময়ে অর্থাৎ ৫-৫০ মিনিটে বিমান বন্দরে অবতরণ করে। বিমানটিকে অবতরণ করতে দেখে উপস্থিত জনতা ছুটে বিমানের দিকে এগিয়ে যায়। এই অবস্থায় বিমান চালিয়ে টার্মিনাল ভবনের কাছে নিয়ে যাওয়া বিপজ্জনক মনে করে বিমানের ক্যাপ্টেন বিমান থামিয়ে দেন। এই সময় জনতা মুহুর্মুহু শেখ মুজিব জিন্দাবাদ বঙ্গবন্ধু জিন্দাবাদ, ১১- দফা জিন্দাবাদ, সংগ্রাম চলবেই, দালালী করা চলবে না, প্রভৃতি শ্লোগানে আকাশ মুখরিত হ’য়ে ওঠে।
বিমানটিকে এই সময়ে জন সমুদ্রে একটি ক্ষুদ্রাকার দ্বীপের মত মনে হচ্ছিল। এই সময়ে একটি খোলা ট্রাকে শেখ মুজিবকে নামিয়ে আনা হলে জনতা নতুন করে পূর্ণোদ্যমে শ্লোগান দিতে শুরু করে। মাল্যভূষিত অবস্থায় স্মিত হাস্যে শেখ মুজিবর রহমান হাত তুলে উপস্থিত জনতার অভিনন্দন গ্রহণ করেন। ট্রাকটি সম্ভুক গতিতে টার্মিনাল ভবনের দিকে এগিয়ে আসার সময় জনতার মধ্য থেকে ফুলের মালা ও পুষ্পস্তবক ছুড়ে ছুড়ে তার দিকে দেওয়া হয়। এর সঙ্গে সমানতালে হর্ষোৎফুল্য জনতা তাদের সঙ্গে করতালি করে নিজেদের আনন্দ প্রকাশ করেন।
ট্রাকটি ভিআইপি এনক্লোজারের সামনে আসার পর ট্রাকের মাইক থেকে ঘোষণা করা হয় যে শেখ সাহেব জনতার উদ্দেশ্যে বক্তৃতা করবেন। কিন্তু জনতার উপস্থিতিতে পিআইএ জেট বিমানটি নির্দিষ্ট স্থানে যেতে চাচ্ছে না দেখে পরে এই সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করা হয়। শেখ নিজে হাত নেড়ে নেড়ে জনতাকে বিমানের জন্য পথ করে দিতে অনুরোধ করেন। বেশ কয়েকটি ট্রাক ও স্কুটারে মাইক বসিয়ে নিয়ে আসা হয়েছিল।
সন্ধ্যা ৬-২০ মিনিটের সময় বিমান বন্দর থেকে জনপ্রিয় নেতা শেখ মুজিবকে নিয়ে একটি বিরাট শোভাযাত্রা বের করা হয়। শোভাযাত্রাটি ধীর গতিতে অগ্রসর হতে থাকে। ফার্মগেট পর্যন্ত পৌঁছতে সওয়া সাতটা বেজে যায়। প্রশস্ত এয়ারপোর্ট রোডের দুই পাশে জনসাধারণ সারিবদ্ধভাবে দাঁড়িয়ে শেখ সাহেবকে অভিনন্দিত করতে থাকে। অতঃপর শোভাযাত্রাটি মরহুম শহীদ সোহরাওয়ার্দির মাজার, শহীদ মীনার হয়ে শেখ মুজিবর রহমানের বাসভবনে গিয়ে শেষ হয়।
এই একই বিমানে আওয়ামী লীগ নেতা খোন্দকার মোশতাক আহমদ, জনাব কামরুজ্জামান এম এন এ, জনাব ইউসুফ আলী এম এন এ, সহ আরো ৮ জন আওয়ামী লীগ নেতা রাওয়ালপিণ্ডি থেকে ঢাকা আগমন করেন।
রিকুইজিশনপন্থী ন্যাপ নেতা জনাব মোজাফর আহমদও গতকাল ঢাকা আগমন করেন। ন্যাপ নেতাকে অভ্যর্থনা জানানোর জন্য ন্যাপ কর্মীগণ পোস্টার ফেস্টুনসহ মিছিল করে বিমান বন্দরে গমন করেন। ন্যাপকর্মীগণ ন্যাপ-আওয়ামী লীগ ঐক্য জিন্দাবাদ, ১১ দফা জিন্দাবাদ, মুজিব-মোজাফর জিন্দাবাদ প্রভৃতি ধ্বনি দিতে থাকেন।
সুত্র: সংবাদপত্রে বঙ্গবন্ধু: পঞ্চম খণ্ড ॥ ষাটের দশক ॥ চতুর্থ পর্ব ॥ ১৯৬৯