সংবাদ
১৫ই মার্চ ১৯৬৯
সাংবাদিকদের নিকট শেখ মুজিব বলেন : সকল পূর্ব পাকিস্তানী প্রতিনিধি পূর্ণ সমর্থন দিলে ন্যায্য দাবী আদায় হইত
ঢাকা, ১৫ই মার্চ (পিপিআই)।— আওয়ামী লীগ প্রধান শেখ মুজিবর রহমান অদ্য রাত্রে তাঁহার ধানমণ্ডীস্থ বাসভবনে সাংবাদিকদের সহিত আলাপ- আলোচনাকালে বলেন যে, যদি গোলটেবিল বৈঠকে সকল পূর্ব পাকিস্তানী প্রতিনিধি তাঁহাকে পূর্ণ সমর্থন দিতেন, তাহা হইলে জনসাধারণের ন্যায্য দাবীসমূহ মানিয়া লওয়া ছাড়া প্রেসিডেন্ট আইয়ুবের কোন গত্যান্তর ছিল না। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশতঃ অনেক পূর্ব পাকিস্তানী প্রতিনিধিই জনগণের রায় অনুসারে কাজ করেন নাই।
শেখ মুজিব বলেন, গোল টেবিলে তাঁহার দাবীসমূহ, বিশেষতঃ পূর্ব পাকিস্তানের জনগণের পূর্ণ আঞ্চলিক স্বায়ত্তশাসন ও পশ্চিম পাকিস্তানের সংখ্যালঘু, প্রদেশসমূহের দাবীসমূহ যাঁহারা সমর্থন করিয়াছেন, তাহাদের নাম তিনি ইতিপূর্বেই উল্লেখ করিয়াছেন।
শেখ মুজিবর রহমান মন্তব্য করেন যে, তিনি আশা করিয়াছিলেন যে, স্বাধীনতার ২২ বৎসর পর এই বার জনাব হামিদুল হক চৌধুরী, জনাব আবদুস সালাম খান, মৌলভী ফরিদ আহমদ ও জনাব মাহমুদ আলীর মত নেতাদের চৈতন্যোদয় হইবে।
তিনি খোলাখুলিভাবে স্বীকার করেন যে, তিনি মওলানা ভাসানীকে গোলটেবিল বৈঠকে যোগদানের অনুরোধ জানান এবং মওলানাকে এই নিশ্চয়তা দেন যে, জনসাধারণের দাবী দাওয়া মানিয়া লওয়া না হইলে তিনি ফিরিয়া আসিবেন। কিন্তু মওলানা তাঁহার অনুরোধ প্রত্যাখ্যান করেন। কী কারণে মওলানা ইহা করেন, তাহা তাঁহার (মুজিব) নিকট অজ্ঞাত।
শেখ মুজিব মওলানার সাম্প্রতিক বিবৃতিসমূহের অসামঞ্জস্যতার জন্য মওলানার সমালোচনা করেন এবং মওলানাকে সক্রিয় রাজনীতি হইতে অবসর গ্রহণের পরামর্শ দেন। শেখ মুজিবর রহমান বলেন, শাসকচক্রে এবং চৌধুরী মোহাম্মদ আলী, নওয়াবজাদা নসরুল্লাহ খান ও মওলানা মওদুদী সমবায়ে গঠিত চক্র, যাহারা ২২ বৎসর যাবৎ দেশকে শাসন করিয়া আসিয়াছে, আজ আবার জনগণের সহিত একই খেলা শুরু করিয়াছে।
শেখ মুজিব ঘোষণা করেন যে, জনগণের ত্যাগ বৃথা যাইবে না। তাহাদের লক্ষ্য অর্জিত হইবেই। শান্তিপূর্ণ ও নিয়মতান্ত্রিক উপায়ে জনতার সংগ্রাম অব্যাহত থাকিবে।
আওয়ামী লীগ প্রধান বলেন, জাতীয় পরিষদে তাঁহার দলের সদস্যগণ প্রাপ্তবয়স্ক ভোটাধিকার ও পার্লামেন্টারী পদ্ধতির সরকার প্রশ্নে শাসনতন্ত্রের সংশোধনীর জন্য ভোট দান ছাড়াও দলের ৬ দফা, ছাত্র সমাজের ১১ দফা, জনসংখ্যার ভিত্তিতে প্রতিনিধিত্ব ও পশ্চিম পাকিস্তানের এক ইউনিট বাতিলের দাবীর ভিত্তিতে শাসনতন্ত্রের একটি পূর্ণ সংশোধনীও পেশ করিয়াছেন। এই প্রসঙ্গে তিনি উল্লেখ করেন যে, পশ্চিম পাকিস্তানী জনগণের মতামত আঞ্চলিক স্বায়ত্তশাসন কায়েম ও এক ইউনিট বাতিলের সপক্ষে। শেখ মুজিবর রহমান দেশের উভয় অংশের জনগণকে ইপ্সিত লক্ষ্য অর্জিত না হওয়া পর্যন্ত সংগ্রাম চালাইয়া যাওয়ার আহ্বান জানান।
আওয়ামী লীগ প্রধান জনগণের প্রতি শান্তিরক্ষা এবং উস্কানিদাতাদের খপ্পরে না পড়ারও আহ্বান জানান।
শেখ মুজিব গভীর আস্থা প্রকাশ করিয়া বলেন যে, জনসাধারণ, বিশেষ করিয়া ছাত্রসমাজ, শ্রমিক ও কৃষক শ্রেণী এবং বুদ্ধিজীবী সম্প্রদায় সকল প্রকার উস্কানি প্রতিহত করিবেন।
পরিশেষে শেখ মুজিব বলেন যে, গণ-আন্দোলনের আরও পরিকল্পনা ও কর্মসূচী প্রণয়নের উদ্দেশ্যে তিনি অল্প দিনের মধ্যেই তাঁহার দলের কার্যকরী কমিটির একটি সভা আহ্বান করিবেন। তিনি প্রদেশের বিভিন্ন স্থানও সফর করিবেন।
সুত্র: সংবাদপত্রে বঙ্গবন্ধু: পঞ্চম খণ্ড ॥ ষাটের দশক ॥ চতুর্থ পর্ব ॥ ১৯৬৯