You dont have javascript enabled! Please enable it! 1969.03.15 | ঢাকায় শেখ মুজিবের লক্ষাধিক লোকের সম্বৰ্দ্ধনা | আজাদ - সংগ্রামের নোটবুক

আজাদ
১৫ই মার্চ ১৯৬৯
ঢাকায় শেখ মুজিবের লক্ষাধিক লোকের সম্বৰ্দ্ধনা
(ষ্টাফ রিপোর্টার)

সংগ্রামী জননেতা শেখ মুজিবর রহমানকে গতকাল শুক্রবার ঢাকা বিমান বন্দরে লক্ষাধিক নাগরিকের শ্লোগানমুখর এক বিরাট জনতা বীরোচিত সম্বর্দ্ধনা জ্ঞাপন করিয়াছে।
আঞ্চলিক স্বায়ত্তশাসন, এক ইউনিট বাতিল ও জনসংখ্যার ভিত্তিতে প্রতিনিধিত্বের দাবীর প্রশ্নে গোলটেবিল বৈঠকে কোন প্রকার আপোষ না করায় শেখ মুজিবকে ছয়দফাপন্থী আওয়ামী লীগের পক্ষ হইতে এই সম্বর্দ্ধনার আয়োজন করা হয়।
একই বিমানে ন্যাপ (ওয়ালী খান) প্রাদেশিক কমিটির সভাপতি অধ্যাপক মোজাফফর আহমদ ঢাকা প্রত্যাবর্তন করিলে বিমান বন্দরে সম্বৰ্দ্ধনা জানান হয়। উক্ত বিমানে সৈয়দ নজরুল ইসলাম, কামরুজ্জামান ও তাজউদ্দিন আহমদসহ ‘ডাক’ ও গোলটেবিল বৈঠকে যোগদানকারী নয়জন আওয়ামী লীগ নেতা এবং ডক্টর কামাল হোসেন বার-এট-ল ঢাকা প্রত্যাবর্তন করিয়াছেন।
শেখ মুজিবকে সম্বৰ্দ্ধনা জ্ঞাপনের উদ্দেশ্যে ছাত্র, শ্রমিক, অফিস কর্মচারী ও রাজনৈতিক কৰ্ম্মীসহ বিভিন্ন শ্রেণীর নাগরিক স্বতঃস্ফূর্তভাবে বিমানবন্দরে গমন করেন।
সম্বর্দ্ধনা দানকারী বিরাট জনতা ‘১১ দফার ভিত্তিতে ঐক্য চাই, ‘জনগণের স্বাধিকার দিতে হবে, ‘সংগ্রাম সংগ্রাম- চলবে চলবে, “শেখ মুজিব, জিন্দাবাদ, মুজিব-মুজাফফর জিন্দাবাদ’ ইত্যাদি শ্লোগান দ্বারা সমগ্র বিমান বন্দর মুখরিত করিয়া তোলে।
সম্বর্দ্ধনাদানকারী উৎফুল্ল জনতার স্রোত এমন প্রবল ছিল যে, বিমান বন্দরের টার্মিনালে আসিবা পূর্ব্বেই রানওয়ের শেষপ্রান্তে পি আই এর একটি বেডলিফটার এর শেখ মুজিবকে নামাইয়া আনা হয়। লাহোর হইতে আগত বোয়িং বিমানটি রানওয়েতে নামিবার সাথে সাথে উৎফুল্ল জনতা বিমানের নিকট পৌঁছাইবার জন্য দ্রুতবেগে ধাবিত হয়। তাহাকে পিআইএ’র গাড়ী হইতে নামাইয়া একটি সজ্জিত খোলা ট্রাকের উপর আওয়ামী লীগ কৰ্ম্মী ছাত্রনেতৃবর্গ উঠাইয়া নেন।
অপরাহ্ন চারিটা হইতেই বিমানবন্দরে ছোট ছোট মিছিল সহকারে জনতা আগমন করিতে থাকে। বেলা পাঁচটার মধ্যেই সমগ্র টার্মিনাল ভবনটি পরিপূর্ণ হইয়া যায় এবং শেষ পর্য্যন্ত বন্দরের টারম্যাক ও রানওয়ের মুখে হাজার হাজার শ্লোগানমুখর নাগরিক ভিড় করে।
বেলা পাঁচটা ৫০ মিনিটে বিমানটি রানওয়েতে অবতরণ করিলেও, শেখ মুজিব ট্রাকে চড়িয়া জনতার ভিড় ঠেলিয়া বিমান বন্দরে পৌঁছেন ছয়টা ত্রিশ মিনিটের সময়। তাঁহাকে বহনকারী ট্রাকটি টারম্যাকের নিকট পৌঁছিলে, সমগ্র বিমান বন্দর “শেখ মুজিব জিন্দাবাদ” ধ্বনিতে মুখরিত হইয়া উঠে। বিপুল জনতা ট্রাকটি ঘিরিয়া ফেলে এবং জনতাকে নিয়ন্ত্রণে রাখা অসম্ভব হইয়া পড়ে।
শেখ মুজিবের ট্রাকের পিছনে পিছনে বিমানটি ধীর মন্থরগতিতে বন্দরে প্রবেশ করে। শেখ সাহেব উৎফুল্ল জনতাকে হাত ভুলিয়া অভিনন্দন জানান। অপেক্ষমাণ সাংবাদিকগণ বিমানবন্দরে শেখ সাহেবের সাথে সাক্ষাৎ করিবার সুযোগ লাভ করেন নাই।
জনতার ভীড় এত প্রবল ছিল যে, শেখ সাহেব ট্রাক হইতে নামিতে পারেন নাই। শেখ পর্যন্ত উক্ত ট্রাকে করিয়া শেখ সাহেবকে মিছিল সহকারে শহরে লইয়া আসা হয়।
বিমান বন্দর হইতে দ্বিতীয় রাজধানীর গেট পর্যন্ত একমাইল পথ অতিক্রম করিতে উক্ত মিছিলটির প্রায় এক ঘণ্টা সময় লাগিয়াছে। উক্ত গেটের নিকট প্রায় এক ঘণ্টাকাল “ট্রাফিক জ্যাম” হইয়া থাকে।
অধ্যাপক মুজাফফর আহমদকে বহনকারী অপর ট্রাকটিও শেখ মুজিবের গাড়ীর সাথে ছিল। পথের দুইপার্শ্বে অপেক্ষমান জনসাধারণ শেখ মুজিবের গাড়ীতে পুষ্প বর্ষণ করিয়া তাঁহাকে অভিনন্দন জানায়। প্রায় তিন ঘণ্টা পর শেখ মুজিব রমনাগেট সংলগ্ন নেতৃবর্গের মাজারে পৌঁছিতে সক্ষম হন। মাজারে ফাতেহা পাঠের পর তিনি কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে গমন করেন।
শহীদ মিনার হইতে তিনি মিছিল সহকারে ধানমণ্ডীস্থ স্বগৃহে প্রত্যাবৰ্ত্তন করেন।
একই বিমানে পিডিএমপন্থী আওয়ামীলীগের মওলানা তর্কবাগীশ ও জনাব জহীরুদ্দীন ঢাকা আসিয়াছেন।

সুত্র: সংবাদপত্রে বঙ্গবন্ধু: পঞ্চম খণ্ড ॥ ষাটের দশক ॥ চতুর্থ পর্ব ॥ ১৯৬৯