You dont have javascript enabled! Please enable it! 1969.03.11 | সর্বজনীন ভোটাধিকার ও আঞ্চলিক স্বায়ত্তশাসনসহ ফেডারেল সরকার : গোলটেবিল বৈঠকে ডাক-এর দুদফা প্রস্তাব পেশ | দৈনিক পাকিস্তান - সংগ্রামের নোটবুক

দৈনিক পাকিস্তান
১১ই মার্চ ১৯৬৯
সর্বজনীন ভোটাধিকার ও আঞ্চলিক স্বায়ত্তশাসনসহ ফেডারেল সরকার :
গোলটেবিল বৈঠকে ডাক-এর দুদফা প্রস্তাব পেশ
(ষ্টাফ রিপোর্টার)

রাওয়ালপিণ্ডি, ১০ই মার্চ (এপিপি)।— ১২ দিন বিরতির পর আজ এখানে গোলটেবিল বৈঠক পুনরায় শুরু হলে কেন্দ্রীয় ডাকের আহ্বায়ক নওয়াবজাদা নসরুল্লাহ খান আঞ্চলিক স্বায়ত্তশাসন সহ ফেডারেল পার্লামেন্টারী পদ্ধতির সরকার এবং সরাসরি বয়স্ক ভোটে পরিষদসমূহের নির্বাচন এই দুই নীতির ভিত্তিতে শাসনতন্ত্র সংশোধনের প্রস্তাব দেন বলে এক যুক্ত ইশতেহারে বলা হয়েছে।
প্রেসিডেন্ট আইয়ুবের সভাপতিত্বে বৈঠক সকাল সোয়া দশটায় শুরু হয় এবং অধিবেশন দু’ঘন্টা চলার পর আগামীকাল পর্যন্ত মূলতবী হয়ে যায়। কাল সকাল দশটায় বৈঠক শুরু হলে মুসলিম লীগ সদস্যরা তাদের মতামত পেশ করবেন বলে জানা গেছে।
নওয়াবজাদা নসরুল্লাহ্ খান, শেখ মুজিবর রহমান, খান আব্দুল ওয়ালী খান, মুফতি মাহমুদ আহমদ, প্রফেসর মোজাফফর আহমদ, মওলবী ফরিদ আহমদ, বিচারপতি এস, এম, মুর্শেদ এবং এয়ার মার্শাল আসগর খান আজকের অধিবেশনে বক্তৃতা দেন।
বৈঠক শেষে প্রকাশিত যুক্ত ইশতেহারটিতে বলা হয় যে, অধিবেশনের শুরুতে মওলানা মুফতি মাহমুদ আহমদ কোরান তেলায়ৎ করেন। প্রেসিডেন্টের আহ্বানে সর্বপ্রথম বক্তৃতা দিতে উঠে নওয়াবজাদা নসরুল্লাহ খান দেশের বর্তমান পরিস্থিতি বিষেষ করে আইন শৃংখলা ছাত্র সমস্যা, শ্রমিক সমস্যা এবং দেশবাসীর অর্থনৈতিক অবস্থার উপর বিশেষ গুরুত্ব আরোপ করেন। তিনি এরপর আঞ্চলিক স্বায়ত্তশাসনসহ ফেডারেল পার্লামেন্টারী পদ্ধতির সরকার এবং বয়স্ক ভোটে পরিষদ সমূহের প্রত্যক্ষ নির্বাচনের ভিত্তিতে শাসনতন্ত্র সংশোধনের ডাকের প্রস্তাব পেশ করেন।

শেখ মুজিব
নওয়াবজাদার পর বক্তৃতা দেন ছ’দফাপন্থী আওয়ামী লীগ প্রধান শেখ মুজিবর রহমান। তিনি তার দলের ছ’দফা কর্মসূচী এবং ছাত্রদের এগার দফা কর্মসূচী, জনসংখ্যার ভিত্তিতে প্রতিনিধিত্ব, এক ইউনিট বিলোপ মুদ্রা ব্যবস্থা বৈদেশিক বাণিজ্য ও সাহায্য বৈদেশিক মুদ্রা উপার্জন এবং কর ব্যবস্থা সম্পর্কে তার দলের মতামত ব্যাখ্যা করেন। এসবের কয়েকটি বিষয়ের প্রতি ক্রিয়া কি হবে প্রেসিডেন্ট আইয়ুব সে সম্পর্কে শেখ মুজিবকে প্রশ্ন করেন।

ওয়ালী খান
রিকুইজিশনপন্থী ন্যাপ প্রধান খান আবদুল ওয়ালী খান শাসনতান্ত্রিক সমস্যা সমাধানের সময় পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তানে বিরাজিত বাস্তব অবস্থা বিবেচনার আহ্বান জানান। তিনি বলেন যে, পূর্ব পাকিস্তানের আঞ্চলিক স্বায়ত্ব শাসন এবং পশ্চিম পাকিস্তানের এক ইউনিট ভাঙ্গার দাবী বাস্তব অবস্থার আলোকেই বিচার-বিবেচনা করতে হবে।

মুফতি মাহমুদ
জমিয়ত উলামার ইসলাম প্রধান মওলানা মুফতি মাহমুদ আহমদ শাসনতন্ত্রে ইসলামী নীতি সমূহ অন্তর্ভুক্ত কার দাবী জানান।
বিচারপতি এস, এম, মুর্শেদ ও প্রফেসর মোজাফফর আহমদ শেখ মুজিবর রহমানের বক্তব্য সমর্থন করেন।
এয়ার মার্শাল আসগর খান ও মওলবী ফরিদ আহমদও সম্মেলনে বক্তৃতা দিয়েছেন।
সম্মেলনে সর্ব সম্মতিক্রমে দেশের বর্তমান আইন শৃংখলা পরিস্থিতিতে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়। তাঁরা কামনা করেন যে, স্বাভাবিক অবস্থা পূনঃপ্রতিষ্ঠার জন্যে এ সংশ্লিষ্ট সকল মহল প্রচেষ্টা চালিয়ে যাবে। তারা অভিমত প্রকাশ করেন যে, দেশের অর্থনীতি, স্থিতিশীলতা ও গোলটেবিল সম্মেলনের সাফল্য শান্তি বজায় রাখার উপরই নির্ভর করে।

সুত্র: সংবাদপত্রে বঙ্গবন্ধু: পঞ্চম খণ্ড ॥ ষাটের দশক ॥ চতুর্থ পর্ব ॥ ১৯৬৯