সংবাদ
১১ই মার্চ ১৯৬৯
গোলটেবিল বৈঠকে ‘ডাক’ নেতৃবৃন্দের সর্বসম্মত প্রস্তাব : আঞ্চলিক স্বায়ত্তশাসন ও প্রাপ্ত বয়স্কদের ভোটাধিকার ভিত্তিক ফেডারেল পার্লামেন্টারী সরকার গঠনের দাবী : শেখ মুজিব কর্তৃক ৬-দফা ও ১১-দফা পেশ : অধ্যাপক মোজাফফর ও জাষ্টিস মুর্শেদের সমর্থন : পূর্ণ আঞ্চলিক স্বায়ত্তশাসন ও এক ইউনিট বাতিলের উপর খান ওয়ালী খানের গুরুত্ব আরোপ
(নিজস্ব বার্তা পরিবেশক)
রাওয়ালপিণ্ডি, ১০ই মার্চ (এপিপি/পিপিআই)।— গণতান্ত্রিক সংগ্রাম পরিষদের আহ্বায়ক নওয়াবজাদা নসরুল্লাহ খান অদ্য গোলটেবিল বৈঠকে আঞ্চলিক স্বায়ত্তশাসন সহ ফেডারেল পদ্ধতির সরকার এবং প্রাপ্ত বয়স্ক প্রত্যক্ষ ভোটাধিকারের ভিত্তিতে পরিষদ সমূহের নির্বাচনের প্রস্তাব পেশ করেন। এই দুইটি বিষয়ে গণতান্ত্রিক সংগ্রাম পরিষদের মধ্যে মতৈক্য রহিয়াছে।
নওয়াবজাদা নসরুল্লাহর পর শেখ মুজিবর রহমান তাঁহার দলের ৬ দফা ও ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের ১১ দফা পেশ করেন। অধ্যাপক মোজাফফর আহমদ এবং জাষ্টিস মুর্শেদ তাহার বক্তব্য সমর্থন করেন।
শেখ মুজিবের বক্তব্য সমাপ্ত হইলে প্রেসিডেন্ট আইয়ুব তাহাকে কতিপয় প্রশ্ন করেন এবং তিনি উহার জবাব দেন। এই ব্যাপারে বৈঠক শেষে প্রকাশিত যুক্ত ইশতেহারে আর কোন কিছু উল্লেখ করা হয় নাই। ইহার পর খান আবদুল ওয়ালী খান পূর্ব পাকিস্তানের আঞ্চলিক স্বায়ত্তশাসন ও পশ্চিম পাকিস্তানের এক ইউনিট বাতিলের দাবীর উপর জোর দিয়া বক্তব্য পেশ করেন।
উল্লেখ্য যে, ১২ দিন বিরতির পর অদ্য সকাল ১০টা ১৫ মিনিটে গোলটেবিল বৈঠক শুরু হয়। ২ ঘণ্টা চলার পর ১২টা ১৫ মিনিটে অদ্যকার বৈঠকের পরিসমাপ্তি ঘটে। আগামীকাল সকাল ১০টায় বৈঠক পুনরায় শুরু হইবে।
অদ্যকার বৈঠকে নওয়াবজাদা নসরুল্লাহ ছাড়াও শেখ মুজিবর রহমান খান, আবদুল ওয়ালী খান, মুফতি মাহমুদ আহমেদ, অধ্যাপক মোজাফফর আহমদ, জনাব ফরিদ আহমদ, জাষ্টিস মুর্শেদ ও এয়ার মার্শাল আসগর খান বক্তৃতা করেন।
বৈঠক শেষে প্রকাশিত যুক্ত ইশতেহারে বলা যে, ‘ডাক’ আহ্বায়ক নওয়াবজাদা নসরুল্লাহ তাঁহার বক্তৃতায় দেশে বিরাজমান আইন ও শৃঙ্খলাজনিত পরিস্থিতি, ছাত্রসমস্যা, শ্রমিক সমস্যা এবং জনগণের অর্থনৈতিক অবস্থার উপর জোর দেন।
নওয়াবজাদা নসরুল্লার বক্তৃতার পর শেখ মুজিবর রহমান গোল টেবিলে বক্তৃতা করেন; তিনি তাঁহার দলের ৬ দফা ও ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের ১১ দফা কর্মসূচী ব্যাখ্যা করেন। তাঁহার বক্তৃতায় জনসংখ্যার ভিত্তিতে প্রতিনিধিত্ব, এক ইউনিট বাতিল, মুদ্রা, বৈদেশিক বানিজ্য ও সাহায্য বৈদেশিক মুদ্রা, অর্জন ট্যাক্স প্রভৃতি বিষয়ের উপর জোর আরোপ করা হয়।
শেখ মুজিবুর রহমানের পর খান আবদুল ওয়ালী খান বৈঠকে প্রদত্ত তাঁহার বক্তৃতায় শাসনতান্ত্রিক সমস্যাবলী সমাধানের ক্ষেত্রে পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তানের বাস্তব অবস্থা বিবেচনা করিয়া দেখার আহ্বান জানান। তিনি বলেন, পূর্ব পাকিস্তানে আঞ্চলিক স্বায়ত্তশাসন ও পশ্চিম পাকিস্তানে এক ইউনিট বাতিলের দাবীটি বাস্তব অবস্থার আলোকেই বিচার করিতে হইবে।
মওলানা মোহাম্মদ মুফতী বলেন যে, শাসনতন্ত্রে ইসলামী নীতি সংযোজিত হওয়া উচিত।
যুক্ত ইশতেহারে বলা হয় যে এয়ার মার্শাল আজগর খান এবং জনাব ফরিদ আহমদও বৈঠকে বক্তৃতা করেন। তবে, তাহারা কি বলিয়াছেন, ইশতেহারে উহার কোন উল্লেখ করা হয় নাই।
আগামীকল্য সকাল ১০টায় গোলটেবিল বৈঠক পুনরায় শুরু হইলে সরকার পক্ষীয় বক্তব্য পেশের পূর্বে বিরোধীপক্ষের আরও কয়েকজন প্রতিনিধি বক্তৃতা করিবেন বলিয়া মনে করা হইতেছে।
বৈঠক শেষে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী খাজা শাহাবুদ্দিন ও জনাব এস, এম, জাফর গোলটেবিলেই ছিলেন। মনে করা হইতেছে যে, তাহারা নওয়াবজাদা নসরুল্লাহ, জনাব মাহমুদ আলী ও খোন্দকার মোশতাক আহমদের সহিত এক সঙ্গে মিলিয়া অদ্যকার যুক্ত ইশতেহার চূড়ান্ত করিতেছিলেন।
সুত্র: সংবাদপত্রে বঙ্গবন্ধু: পঞ্চম খণ্ড ॥ ষাটের দশক ॥ চতুর্থ পর্ব ॥ ১৯৬৯