You dont have javascript enabled! Please enable it! 1969.03.07 | লাহোরে শেখ মুজিব : পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তানের মধ্যে সংহতি রক্ষার দৃঢ়সংকল্প ঘোষণা | দৈনিক পয়গাম - সংগ্রামের নোটবুক

দৈনিক পয়গাম
৭ই মার্চ ১৯৬৯
লাহোরে শেখ মুজিব : পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তানের মধ্যে সংহতি রক্ষার দৃঢ়সংকল্প ঘোষণা

লাহোর, ৬ই মার্চ।— আওয়ামী লীগ প্রেসিডেন্ট শেখ মুজিবর রহমান আজ এখানে বলেন যে, তিন হাজার দ্বীপ সমন্বয়ে গঠিত ইন্দোনেশিয়া যদি ঐক্যবদ্ধ থাকিতে পারে তাহা হইলে দুই অংশ লইয়া পাকিস্তান কেন ঐক্যবদ্ধ থাকিতে পারিবে না?
ডাকের কেন্দ্রীয় কমিটির বৈঠকে যোগদানের উদ্দেশ্যে লাহোর পৌঁছার অব্যবহিত পরেই সাংবাদিকদের সহিত আলোচনাকালে শেখ সাহেব উপরোক্ত মন্তব্য করেন।
শেখ মুজিব বলেন, আমরা একে অপরের মনোভাব এবং স্বার্থ উপলব্ধি করিতে পারি। আমরা যদি শান্তিতে বাস করিতে না পারি তাহা হইলে বিপর্যয় অবধারিত। দেওয়া এবং নেওয়ার ভিত্তিতেই ঐক্য গড়িয়া উঠিতে পারে— এই ফর্মুলা তিনি মানিয়া চলিবেন কিনা এই মর্মে জনৈক সাংবাদিক তাঁহাকে প্রশ্ন করিলে শেখ মুজিব বলেন, ‘বাংলা একের পর এক অনেক কিছুই দিয়াছে, এখন আর দেওয়ার কিছুই নাই।’ ১৯৫৫ সালে গণপরিষদের মারী অধিবেশনে জনসংখ্যার ভিত্তিতে পূর্ব পাকিস্তান জনপ্রতিনিধিত্বের অধিকার ত্যাগ করিয়া সংখ্যাসাম্য মানিয়া লইয়াছিল। কিন্তু সবক্ষেত্রে কি পূর্ব পাকিস্তান সংখ্যা সাম্যের অধিকার পাইয়াছিল? তিনি প্রশ্ন করেন।
শেখ সাহেব বলেন, তিনি দৃঢ় বিশ্বাস করেন যে, পূর্ব পাকিস্তানের জনগণ শোষিত হউক পশ্চিম পাকিস্তানের জনগণ তাহা চাননা এবং পূর্ব পাকিস্তানী জনগণের দাবির প্রতি তাহাদের পূর্ণ সহানুভূতি রহিয়াছে।
শেখ মুজিবর রহমান বলেন, দুঃখের বিষয় দেশের ২০টি ধনী পরিবারই হইতেছে পশ্চিম পাকিস্তানের অধিবাসী। দেশের উভয় অংশের শোষণকারীরা একই শ্রেণীর অন্তর্ভুক্ত সাবেক এয়ার মার্শাল আসগর খান এই মর্মে পূর্ব পাকিস্তান হাইকোর্ট যে বক্তৃতা দিয়াছিলেন উহার উল্লেখ করিয়া জনৈক সাংবাদিক শেখ মুজিবের দৃষ্টি আকর্ষণ করিলে তিনি উল্লেখিত মন্তব্য করেন।
তিনি আরও বলেন, পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তানের মধ্যে প্রকৃত ঐক্য পূর্ব হইতেই বিদ্যমান রহিয়াছে। ১৯৬৫ সালে পাক-ভারত যুদ্ধে যখন লাহোর আক্রান্ত হইয়াছিল তখন পূর্ব পাকিস্তানের ৬ কোটি মানুষ লাহোরের পশ্চাতে আসিয়া দাঁড়াইয়াছিল।
কিন্তু শোষক আমলাতন্ত্র এবং কিছুসংখ্যক লোকই পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তানের জনগণের মধ্যে বিভেদ জিয়াইয়া রাখিতে প্রয়াস পায়।
কোন কোন মহল হইতে গোলটেবিল বৈঠকে গণপরিষদ গঠন করা সম্ভব হইবে না এবং জনসংখ্যার ভিত্তিতে প্রতিনিধিত্বের দাবী এবং এক ইউনিট সম্পর্কে এই মুহূর্তে কোন আলোচনা অনুষ্ঠিত হইবে না বলিয়া যে কথা বলা হইতেছে, সে সম্পর্কে জনৈক সাংবাদিক তাহার দৃষ্টি আকর্ষণ করিলে শেখ মুজিব বলেন, আমরা অবশ্যই এক সঙ্গে বসিয়া উপরোক্ত প্রশ্ন সমূহের শেষ সমাধান করিতে বদ্ধপরিকর। অন্ততঃ আমাদেরকে সমাধানের জন্য চেষ্টা চালাইয়া যাইতে হইবে- যাহাতে এইসব বিষয় স্থগিত রাখার ফলে জনগণের মনে কোনরূপ ভুল বোঝাবুঝির সৃষ্টি না হয়।

লাহোর উপস্থিতি
আওয়ামী লীগ প্রধান শেখ মুজিবর রহমান আজ অপরাহ্নে ঢাকা হইতে লাহোর আসিয়া পৌছিলে বিমান বন্দরে তাঁহাকে আন্তরিক সম্বর্ধনা জ্ঞাপন করা হয়। একই বিমানে জনাব কামরুজ্জামান, জনাব নজরুল ইসলাম, খোন্দকার মুস্তাক এবং জনাব শফিকুল ইসলামও লাহোর আসিয়াছেন।
বিশিষ্ট ব্যক্তিদের মধ্যে সরদার শওকত হায়াত খান, এয়ার মার্শাল আসগর খান এবং লেঃ জেনারেল আজম খান বিমান বন্দরে শেখ মুজিবর রহমানকে সম্বর্ধনা জানান।
শেখ মুজিব রানওয়েতে আসিয়া অবতরণ করিলে অপেক্ষমান এক বিরাট জনতা তাহার বিমানটি ঘিরিয়া ধরে এবং শেখ মুজিবর রহমান জিন্দাবাদ, পাকিস্তান জিন্দাবাদ, রাজনৈতিক দলের ঐক্য জিন্দাবাদ প্রভৃতি শ্লোগান দেয়। -এপিপি

সুত্র: সংবাদপত্রে বঙ্গবন্ধু: পঞ্চম খণ্ড ॥ ষাটের দশক ॥ চতুর্থ পর্ব ॥ ১৯৬৯