You dont have javascript enabled! Please enable it!

সংবাদ
১৮ই নভেম্বর ১৯৬৮
পল্টন জনসভার প্রস্তাব
(নিজস্ব বার্তা পরিবেশক)

গতকাল (রবিবার) ন্যাপের উদ্যোগে আয়োজিত বিরাট জনসভায় গৃহীত এক প্রস্তাবে পাকিস্তান প্রতিরক্ষা বিধি ও পশ্চিম পকিস্তান জনশৃঙ্খলা রক্ষা অর্ডিন্যান্সে ন্যাপ, পিপলস পার্টি ও অন্যান্য বিরোধীদলীয় নেতৃবৃন্দ, ছাত্র ও জাতীয় পরিষদের বিরোধীদলীয় সদস্যদের ব্যাপক ধরপাকড়ের তীব্র নিন্দা জ্ঞাপন করা হয়। সম্প্রতি পাকিস্তান ন্যাপ প্রধান খান আবদুল ওয়ালী খান, পিপলস পার্টি প্রধান জুলফিকার আলী ভুট্টো, পাকিস্তান ন্যাপের সেক্রেটারী জেনারেল মাহমুদুল হক ওসমানী ও যুগ্ম-সম্পাদক আজমল খাটক, পশ্চিম পাক ন্যাপের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক আজিজুল্লাহ, সিন্ধু ন্যাপের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি হাফিজ কোরেশী ও সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ বাকের শাহ, সরহাদ ন্যাপের সভাপতি আরবাব সিকান্দার খান, জাতীয় পরিষদের সদস্য মমতাজ আলী ভুট্টো ও গোলাম মোস্তফা খানসহ বিরোধীদলীয় নেতৃবৃন্দ ও ছাত্রদের গ্রেফতার করা হয়।
প্রস্তাবে আটক সকল নেতা ও কর্মীর অবিলম্বে মুক্তিদানের জন্য দাবী করা হয়। প্রস্তাবে পশ্চিম পাকিস্তানে সংগ্রামী ছাত্র ও জনসাধারণের প্রতি পূর্ণ সমর্থন এবং তাঁহাদের সহিত ঐক্যমত ঘোষণা করা হয়। পশ্চিম পাকিস্তানে পুলিসী নির্যাতনেরও নিন্দা করা হয় এবং বেপরোয়া গুলীবর্ষণ দ্বারা ছাত্র হত্যা, অন্যান্য নির্যাতনমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ এবং সরকার কর্তৃক ত্রাসের রাজত্ব কায়েমের উল্লেখক্রমে অবিলম্বে এই সকল নির্যাতনমূলক কার্যক্রম হইতে বিরত থাকার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানান হয়।
সভায় গৃহীত প্রস্তাবে আরও অভিমত প্রকাশ করা হয় যে, পশ্চিম পাকিস্তানের সাম্প্রতিক গোলযোগের দ্বারা নিঃসন্দেহে প্রমাণিত হইতেছে যে, বর্তমান কলঙ্কিত সরকার দেশের কোন অংশেই গণ-সমর্থন ভোগ করে না।
সরকার এক্ষণে ক্ষমতা আঁকড়াইয়া থাকার জন্য মরিয়া হইয়া উঠিয়াছেন এবং নির্যাতনের হাতিয়ারসহ বিরোধীদলীয় বিরোধীদলীয় নেতৃবৃন্দের উপর ঝাঁপাইয়া পড়িয়াছেন। সভায় সরকারের এই নীতির চুড়ান্ত পরিণতি সম্পর্কে তাহাদের সতর্ক করিয়া দেওয়া হয়।
অপর প্রস্তাবে বলা হয় যে, বর্তমান অগণতান্ত্রিক ব্যবস্থাধীনে সরকারের নির্যাতনমূলক কাজের প্রেক্ষিতে কোন রাজনৈতিক দলের পক্ষেই যেকোন জনপ্রিয় দাবীর ভিত্তিতেই হউক না কেন এককভাবে সকল আন্দোলন গড়িয়া তোলা অথবা বৰ্ত্তমান ব্যক্তি স্বাধীনতার পরিপন্থী সরকার ও শাসনব্যবস্থাকে বাতিল করিয়া তদস্থলে একটি গণতান্ত্রিক সরকার কায়েম করা সম্ভব নহে। এই সভা মনে করে যে, গণআন্দোলনই বর্তমান রাজনৈতিক অচলাবস্থা অবসানের একমাত্র উপায় এবং উহারই প্রেক্ষিতে সকল বিরোধী রাজনৈতিক দল ও সংস্থাকে যুক্তফ্রন্ট গঠন এবং স্বীকৃত সর্বনিম্ন কর্মসূচীর ভিত্তিতে সংগ্রামী গণ-আন্দোলন গড়িয়া তুলিতে হইবে।
উপরোক্ত প্রস্তাবগুলি ছাড়াও পার্লামেন্টারী গণতন্ত্র পুনর্বহাল, প্রাপ্তবয়স্কদের ভোটে প্রত্যক্ষ নির্বাচন, পুর্ব পাকিস্তানের জন্য পূর্ণ স্বায়ত্তশাসন, পশ্চিম পাকিস্তানে এক ইউনিট বাতিল, পূর্ব পাকিস্তানের বন্যা সমস্যার স্থায়ী নিরোধের জন্য পর্যাপ্ত ব্যবস্থা গ্রহণ, পূর্ব পাকিস্তান ন্যাপের যুগ্ম-সম্পাদক আবদুল হালিম, সদস্য মনিকৃষ্ণ সেন, মনি সিং, শেখ মুজিবর রহমান, হাতেম আলী খান, মিসেস মতিয়া চৌধুরী, তাজুদ্দিন আহমদ, খোন্দকার মুশতাক আহমদ, শেখ ফজলুল হক মনি, ছাত্রনেতা আলী হায়দার খান, পংকজ ভট্টাচার্য, শফি আহমদ, আবদুর রাজ্জাক, রাশেদ খান মেনন, শ্রমিক নেতা আবদুল মান্নানসহ সকল রাজনৈতিক বন্দীর আশুমুক্তি, সকল রাজনৈতিক মামলা ও গ্রেফতারী পরোয়ানা প্রত্যাহার, দেশ হইতে জরুরী অবস্থা ও দেশরক্ষা বিধি প্রত্যাহার, খাদ্য ও নিত্যব্যবহার্য দ্রব্যাদির মূল্যহ্রাস, খাজনা ও করুহাস, খাজনা আদায়ের সার্টিফিকেট প্রথা বাতিল, সকল ট্রেড ইউনিয়ন, সংস্থা ও উহার কার্যক্রমের উপর হইতে বিধিনিষেধ প্রত্যাহার, শ্রমিকদের বাঁচার মত মজুরী, স্বাধীন ও নিরপেক্ষ বৈদেশিক নীতি অবলম্বন এবং সিয়াটো, সেন্টো এবং পাক-আমেরিকান সামরিক চুক্তি বাতিল, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলিতে শিক্ষার পরিবেশ ফিরাইয়া আনা এবং অবিলম্বে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় পুনরায় খোলার দাবীতে বহুসংখ্যক প্রস্তাব গৃহীত হয়।

সূত্র: সংবাদপত্রে বঙ্গবন্ধু চতুর্থ খণ্ড: ষাটের দশক ॥ তৃতীয় পৰ্ব ॥ ১৯৬৮

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!