দৈনিক পূর্বদেশ
২০শে অক্টোবর ১৯৬৮
শেখ মুজিবকে প্যারোলে মুক্তিদান প্রশ্ন
রাষ্ট্র বনাম শেখ মুজিবর রহমান ও অন্যান্যদের মামলায় পয়লা নম্বর অভিযুক্ত ব্যক্তি শেখ মুজিবকে বিশেষ ট্রাইব্যুনাল বিচার চলাকালে প্যারোলে মুক্তি দানের নির্দেশ দিতে সক্ষম নন বলে চেয়ারম্যান বিচারপতি এস.এ. রহমান গত সোমবার বিবাদীপক্ষের প্রধান কৌসুলীকে জানান। কারণ অর্ডিন্যান্স অনুযায়ী বিচার শেষ না হওয়া পর্যন্ত অভিযুক্তদের সামরিক তত্ত্বাবধানে রাখতে হবে। সামরিক কর্তৃপক্ষের উপর তার আটকের দায়িত্ব রয়েছে। গুরুতররূপে অসুস্থ বৃদ্ধা মাতাকে দেখবার উদ্দেশ্যে প্যারোলে মুক্তির জন্য সম্প্রতি শেখ মুজিবর রহমানের পক্ষ থেকে একটা দরখাস্ত করা হয়। গত সোমবার বিবাদীপক্ষের কৌসুলী জনাব সালাম খান দরখাস্তের কথা উল্লেখ করলে ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান উক্ত মন্তব্য করেন। মুক্তির নির্দেশ দানের অক্ষমতা প্রকাশ করে বিচারপতি জনাব রহমান বলেন যে, আমি দরখাস্তটি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নিকট ফরওয়ার্ড করেছি। ইহাই কেবল করতে পারি। অভিযুক্তগণ সামরিক কর্তৃপক্ষের তত্ত্বাবধানে রয়েছেন। আমি কোন মন্তব্য করতে পারি না। অভিযুক্তকে মুক্তি দেয়া হবে কি হবে না, তা উক্ত কর্তৃপক্ষ স্থির করবেন। তিনি অর্ডিন্যান্সের সংশ্লিষ্ট অংশ উল্লেখ করেন। জনাব সালাম খান বলেন যে, অভিযুক্ত ব্যক্তি জুডিশিয়াল কাষ্টডিতে আটক রয়েছেন। সেইজন্য ট্রাইব্যুনাল এই জাতীয় আবেদনদৃষ্টে মুক্তির ব্যবস্থা করতে পারেন। তিনি আরও বলেন যে, সম্প্রতি একজন রাজসাক্ষী মাতাকে দেখবার অনুমতি পেয়েছেন। বিচারপতি রহমান অর্ডিন্যান্সের বিধানদৃষ্টে জনাব সালাম খানের সাথে একমত হতে পারেননি। এবং বলেন যে, অর্ডিন্যান্স মোতাবেক ফরওয়ার্ড করা ছাড়া মুক্তির নির্দেশ দেওয়া যায় না। অতঃপর এই বিষয়টির প্রতি জনাব খান বাদীপক্ষের প্রধান কৌসুলী জনাব মঞ্জুর কাদেরের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। জনাব কাদের বলেন, “এ ব্যাপারটি সম্পর্কে কি করতে পারি, তা আমি দেখব।” ইতিপূর্বে দুই-একটি কেসে এরূপ করা হয়েছে। আমি মনে করি, কিছু একটা করা যেতে পারে। বিচারপতি রহমান বাদীপক্ষের কৌসুলী জনাব কাদেরের প্রতি লক্ষ্য করে বলেন, “মানবতার দিক থেকে বিষয়টি আপনারা বিবেচনা করে দেখতে পারেন।
সূত্র: সংবাদপত্রে বঙ্গবন্ধু চতুর্থ খণ্ড: ষাটের দশক ॥ তৃতীয় পৰ্ব ॥ ১৯৬৮