You dont have javascript enabled! Please enable it!

সংবাদ
১৯শে অক্টোবর ১৯৬৮
কুষ্টিয়া জেলা আঃ লীগ কাউন্সিল অধিবেশন
‘লিংগুয়া ফ্রাঙ্কা’র নামে নয়া চক্রান্তের নিন্দা

কুষ্টিয়া, ১৬ই অক্টোবর (নিজস্ব সংবাদদাতা)।— স্থানীয় বার লাইব্রেরী হলে কুষ্টিয়া জেলা আওয়ামী লীগের কাউন্সিল অধিবেশন অনুষ্ঠিত হয়। অধিবেশনে প্রধান অতিথির আসনগ্রহণ করেন পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক জাতীয় পরিষদের সদস্য জনাব মিজানুর রহমান চৌধুরী। প্রধান অতিথির ভাষণে জনাব চৌধুরী গণতন্ত্র, প্রাদেশিক স্বায়ত্তশাসন ও বাক-স্বাধীনতাসহ নাগরিক ও গণতান্ত্রিক অধিকার পুনরুদ্ধারের জন্য দুর্বার গণআন্দোলন গড়িয়া তোলার জন্য আওয়ামী লীগ কর্মীদের প্রতি আহ্বান জানান। তিনি জনগণের দাবী-দাওয়া আদায়ের জন্য সকল গণতান্ত্রিক শক্তির প্রতি সংগ্রাম ও ত্যাগের মনোভাব লইয়া ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আবেদন জানান। উপরোক্ত কাউন্সিল অধিবেশনে সভাপতিত্ব করেন জনাব আখতার হোসেন জোয়ারদার। জেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক জনাব আজিজুর রহমান আব্বাস সম্পাদকীয় রিপোর্ট পেশ করেন।
প্রায় শতাধিক কাউন্সিল ও ডেলিগেট উপরোক্ত সম্মেলনে যোগদান করেন। সম্মেলনে গৃহীত এক সর্বসম্মত প্রস্তাবে সম্পূর্ণ মানবিক কারণে মৃত্যুপথযাত্রী রুগ্না বৃদ্ধা মাতাকে শেষ বারের মত দেখার সুযোগদানের উদ্দেশ্যে সামরিক হেফাজতে রক্ষিত আওয়ামী লীগ প্রধান শেখ মুজিবর রহমানের প্যারোলে মুক্তির আবেদন জানানো হয়।
অপর এক বিশেষ প্রস্তাবে জনগণের হৃত অধিকার পুনরুদ্ধারের জন্য সত্যিকারের গণ-আন্দোলনের উদ্যোগ গ্রহণের উদ্দেশ্যে সকল বিরোধী দলের প্রতি ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানানো হয়।
গৃহীত অপর এক প্রস্তাবে আওয়ামী লীগ সম্পাদক জনার তাজুদ্দিন আহমেদ, খোন্দকার মোস্তাক আহমেদ, ওবায়দুর রহমান, ন্যাপ নেতা আব্দুল হালিম ও বেগম মতিয়া চৌধুরীসহ সকল রাজবন্দীর আশু মুক্তি দাবী করা হয়।
জরুরী অবস্থা প্রত্যাহার, পার্লামেন্টারী সরকার প্রবর্তন, প্রাপ্তবয়স্কদের ভোটাধিকার কায়েম, প্রতিরক্ষা আইন বাতিল প্রভৃতি দাবী করিয়াও কতিপয় প্রস্তাব গৃহীত হয়।
পূর্ব পাকিস্তানের বন্যা সমস্যাকে একটি জরুরী জাতীয় সমস্যা হিসেবে গণ্য করা এবং স্থায়ী বন্যা নিয়ন্ত্রণের জন্য এক বাস্তবমুখী মহাপরিকল্পনা প্রণয়ন ও তাহার আশু বাস্তবায়নের জোর দাবী জানাইয়া প্রস্তাব গ্রহণ করা হয়।
‘লিংগুয়া ফ্রাঙ্কা’র নামে সম্প্রতি একটি মুখচেনা মহল যেভাবে একটি ‘জাতীয় ভাষা’ সৃষ্টি তথা পাকিস্তানের বিভিন্ন ভাষাভাষীর জনগণের ভাষা, সাহিত্য ও সংস্কৃতির উপর হামলা করিবার নয়া চক্রান্তে মাতিয়া উঠিয়াছে সম্মেলনে তাহাদের তীব্র নিন্দা করা হয় এবং ভাষা ও সংস্কৃতির উপর যে কোন হামলাকে রুখিয়া দাঁড়াইবার দৃঢ় সংকল্প ঘোষণা করা হয়।
নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের মূল্যের উর্ধগতি রোধ, শ্রমিকদলন, ছাত্রদলন বন্ধ এবং শিক্ষা সংকোচন নীতি পরিহারের দাবী জানাইয়াও প্রস্তাব গৃহীত হয়৷
মোহিনী মিলের সাম্প্রতিক সংকটজনক পরিস্থিতির পরিপ্রেক্ষিতে মিলের সকল বিভাগ পূর্ণ উদ্যমে পুরাপুরি চালু করতঃ শ্রমিকদের ন্যায্য দাবী-দাওয়া মানিয়া লওয়ার জোর দাবী জানাইয়া এক প্রস্তাব গৃহীত হয়।
অপর এক প্রস্তাবে তাঁতশিল্পজীবীদের জীবনধারণের মানোন্নয়নের জন্য তাহাদেরকে স্বল্প হারে ঋণ মঞ্জুর করা এবং সুতা ও রং এর মূল্য বাধিয়া দেওয়া এবং বেকার বিড়ি শ্রমিকদের পূনর্বাসনের জোর দাবী জানানো হয়।
সম্মেলনে জেলা আওয়ামী লীগের নূতন কার্যকরী পরিষদ গঠিত হয়। আখতার হোসেন জোয়ারদার সভাপতি ও আজিজুর রহমান আক্কাস সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন।

জনসভা
সম্মেলন শেষে কুষ্টিয়া ঈদগাহ ময়দানে জেলা আওয়ামী লীগের উদ্যোগে এক জনসভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় মিজানুর রহমান চৌধুরী, শাহ মোয়াজ্জেম হোসেন ও আবুল কালামসহ বিভিন্ন বক্তা বক্তৃতা করেন।
জনাব মিজানুর রহমান চৌধুরী বিরোধী দলগুলি সম্পর্কে সরকারী অপপ্রচারের কঠোর সমালোচনা করেন। পূর্ব বাংলার স্বাধিকার প্রতিষ্ঠার আন্দোলন এবং বেলুচিস্তান ও সীমান্ত প্রদেশসহ পশ্চিম পাকিস্তানের সাবেক প্রদেশসমূহের স্বায়ত্তশাসনের আন্দোলন একই সূত্রে গ্রথিত বলিয়া তিনি মন্তব্য করেন।

সূত্র: সংবাদপত্রে বঙ্গবন্ধু চতুর্থ খণ্ড: ষাটের দশক ॥ তৃতীয় পৰ্ব ॥ ১৯৬৮

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!