You dont have javascript enabled! Please enable it!

আজাদ
৪ঠা অক্টোবর ১৯৬৮
প্রদেশে নয়া রাজনৈতিক তৎপরতা শুরু
ত্রিধাবিভক্ত আওয়ামী লীগকে ঐক্যবদ্ধ করিয়া শক্তিশালী ফ্রন্ট গঠনের প্রচেষ্টা
(রাজনৈতিক ভাষ্যকার)

ত্রিধাবিভক্ত আওয়ামী লীগকে পুনরায় ঐক্যবদ্ধ করায় সক্রিয় প্রচেষ্টা চলিতেছে এবং এই প্রতিষ্ঠানটিকে আন্দোলনের শক্তিশালী ফ্রন্ট হিসাবে গড়িয়া তুলিবার উদ্দেশ্যে একত্রীকরণে সম্ভাবনা দেখা দিয়াছে।
ইতিমধ্যেই কয়েকজন বিশিষ্ট ও প্রবীণ আওয়ামী লীগ নেতার সাবেক আওয়ামী লীগে প্রত্যাবর্তনের প্রশ্ন লইয়া ঢাকায় কয়েক দফা বৈঠক হইয়াছে। এই সমস্ত বৈঠকের সাথে সংশ্লিষ্ট বিশ্বস্তসূত্র হইতে প্রকাশ, সাবেক উজিরে আলা আতাউর রহমান খান, সাবেক কেন্দ্রীয় উজির আবুল মনসুর আহমদ ও জহিরুদ্দিন, সাবেক প্রাদেশিক উজির মশিউর রহমান (যশোর), পিডিএমপন্থী আওয়ামী লীগের সাবেক সেক্রেটারী মুজিবর রহমান এবং আরও উল্লেখযোগ্য সংখ্যক সাবেক আওয়ামী লীগপন্থী নেতৃস্থানীয় ব্যক্তি সম্ভবতঃ সাবেক আওয়ামী লীগে ফিরিয়া আসিবেন।
‘উপযুক্ত পরিবেশের ভিত্তিতে পিডিএমপন্থী আওয়ামী লীগের সভাপতি মওলানা তর্কবাগীশ ও প্রাদেশিক পিডিএম এর সভাপতি জনাব সালাম খান ঐক্যবদ্ধ আওয়ামী লীগে যে যোগদান করিতে চাহেন না তাহা নহে৷
সংশ্লিষ্ট মহলের মতে মামলায় জড়িত পূৰ্ব্ব পাকিস্তান আওয়ামী লীগের (ছয় দফা পন্থী) সভাপতি শেখ মুজিবর রহমান সাবেক ও প্রবীণ আওয়ামী লীগ নেতা ও কর্মীদের সমন্বয়ে পুনর্গঠিত শক্তিশালী আওয়ামী লীগের পক্ষে। তদুপরি তিনি রাজনৈতিক কর্ম্মসূচী হিসাবে “ছয়-দফাকে” একদিকে যেমন গ্রহণযোগ্য মনে করেন, অপরদিকে তেমনই ‘অপরিবর্তনীয়’ বলিয়া মনে করেন না। তাহার প্রতিষ্ঠানের বর্তমান ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক এম এন এ মিজানুর রহমান চৌধুরী বিশেষ করিয়া জাতীয় পরিষদের বাজেট অধিবেশনের পর হইতে বিভিন্ন আওয়ামী লীগকে ঐক্যবদ্ধ করার উদ্দেশ্যে অগ্রণী হইয়াছেন বলিয়া প্রকাশ।
আগামীকাল শনিবার ছয়-দফা পন্থী আওয়ামী লীগের ওয়ার্কিং কমিটির এক জরুরী বৈঠক হইবে। এই বৈঠকে ঐক্যবদ্ধ আওয়ামী লীগ গড়িয়া তোলা সম্পর্কে আলোচনা হইবে বলিয়া জানা যায়। সম্ভবতঃ কমিটির এক প্রস্তাবে সাবেক ও প্রবীণ আওয়ামী লীগ পন্থীদের পুনরায় ঐক্যবদ্ধ এক আওয়ামী লীগে যোগদানের আহ্বান জানান হইবে। কেহ কেহ মনে করেন যে, উক্ত বৈঠকে এই প্রতিষ্ঠানের বাহিরের আওয়ামী লীগপন্থীদের সাথে একত্রীকরণ সম্পর্কিত আলোচনার জন্য কয়েকজন সদস্যবিশিষ্ট একটি সাবকমিটি গঠিত হইতে পারে। প্রতিষ্ঠানের আগামী ১৯শে ও ২০শে অক্টোবর অনুষ্ঠিতব্য কাউন্সিল অধিবেশনেও এই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি প্রেরিত হইবার সম্ভাবনা রহিয়াছে।
ইতিপূর্ব্বে কাউন্সিল অধিবেশনেই পিডিএমপন্থী আওয়ামী লীগারদের প্রতিষ্ঠান হইতে বহিষ্কার করা হইয়াছিল। সেই ক্ষেত্রে হয়ত কাউন্সিলকেই উক্তসদস্যদের সাথে ঐক্যবদ্ধ হইবার চূড়ান্ত রায় দিতে হইবে।
ছয়-দফাপন্থী ও পিডিএমপন্থী উভয় আওয়ামী লীগেরই বিশিষ্ট নেতৃবর্গের মতে দেশে গণতন্ত্রের পুনরুদ্ধার এবং জনগণের ন্যায্য দাবী আদায়ের জন্য শক্তিশালী নিয়মতান্ত্রিক আন্দোলন গড়িয়া তুলিতে হইলে ব্যাপক ভিত্তিক প্রতিষ্ঠানের প্রয়োজন এবং ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র দলের দ্বারা বর্ত্তমানে একা অগ্রসর হওয়া সম্ভব নহে। সেই কারণেই তাঁহারা প্রতিষ্ঠানের একত্রীকরণের কথা বিশেষভাবে উপলব্ধি করিতেছেন।
তাঁহাদের মতে জনগণের সাথে যোগসূত্র রক্ষাকারী অপর প্রতিষ্ঠান ন্যাপ (চীনপন্থী) ও ভবিষ্যতের বৃহৎ আওয়ামী লীগ উভয়ের গ্রহণযোগ্য কর্ম্মসুচীর ভিত্তিতে ঐক্যবদ্ধ গণতান্ত্রিক আন্দোলন গড়িয়া তুলিতে সক্ষম হইলে দেশে একটি সুপরিচালিত গণজাগরণ আনয়ন করা সম্ভব হইবে।
প্রকাশ কোন একটি মহল হইতে এই ব্যাপারে প্রাথমিক আলোচনার জন্য ইতিমধ্যেই ন্যাপ নেতার সাথে যোগাযোগের চেষ্টা হইয়াছে। সম্ভবতঃ আগামী শনিবার ন্যাপ-এর জনৈক নেতার মাধ্যমে মওলানা ভাসানীর সাথে যোগাযোগ করা হইবে।
পিডিএমপন্থী আওয়ামী লীগের জনৈক প্রবীণ নেতা গতরাত্রে স্বীকার করেন যে, দ্বিধাবিভক্ত আওয়ামী লীগকে একত্র করার প্রশ্নটি লইয়া সংশ্লিষ্ট মহলে আলোচনা হইতেছে। তবে এই জাতীয় ঐক্যের বিষয় বিবেচনা করিতে হইলে দুই দলের প্রতিনিধিদের সাথে আনুষ্ঠানিক বৈঠক হওয়া বাঞ্ছনীয়।
সম্প্রতি ঐক্য সম্পর্কে ঘরোয়া বৈঠকে যে আলোচনা হইয়াছে, আওয়ামী লীগের শনিবারের ওয়ার্কিং কমিটির সভায় তাহারই বাস্তব প্রস্তাব আসিতে পারে।
উল্লেখ্য যে, দেশের বিভিন্ন রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠানের পুনরুজ্জীবনের সময় জনাব আতাউর রহমান খানসহ বেশ কিছুসংখ্যক আওয়ামী লীগ নেতা প্রতিষ্ঠানে ফিরিয়া আসেন নাই। পুনরায় আওয়ামী লীগ ছয় দফার প্রশ্নে দ্বিধাবিভক্ত হয়। গত বছর পার্টি প্রধান শেখ মুজিব কারাগারে অবস্থানকালে পার্টি ভাগ হইয়া যায় এবং একটা অংশ পিডিএম-এ যোগদান করে।

সূত্র: সংবাদপত্রে বঙ্গবন্ধু চতুর্থ খণ্ড: ষাটের দশক ॥ তৃতীয় পৰ্ব ॥ ১৯৬৮

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!