You dont have javascript enabled! Please enable it!

সংবাদ
৯ই অক্টোবর ১৯৬৮
মূল ন্যাপকে আমন্ত্রণ না জানাইবার দরুন-
আওয়ামী লীগ কর্তৃক ভাসানী আহূত সম্মেলনে যোগদান না করার সিদ্ধান্ত
(নিজস্ব বার্তা পরিবেশক)

জনাব ওয়ালী খানের নেতৃত্বাধীন ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টিকে আমন্ত্রণ না জানাইবার কারণে পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী লীগ মওলানা ভাসানী আহূত নেতৃ সম্মেলনে অংশগ্রহণ না করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করিয়াছেন।
গত সোমবার মগবাজারে অনুষ্ঠিত প্রাদেশিক আওয়ামী লীগ কার্যকরী কমিটির শেষদিনের অধিবেশনে গৃহীত এক প্রস্তাবে মওলানা ভাসানীর আমন্ত্রণ গ্রহণে অপারগতার জন্য দুঃখ প্রকাশ করা হয়। প্রস্তাবে বলা হয় যে, ওয়ালী খান নেতৃত্বাধীন ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টির অনুপস্থিতিতে ঐক্যের মূল উদ্দেশ্য তথা সকল বিরোধী গণতান্ত্রিক শক্তির সমন্বয়ে ঐক্যবদ্ধ গণআন্দোলন গড়িয়া তোলার কাজ ব্যাহত হইতে বাধ্য।
উল্লেখযোগ্য যে, মওলানা ভাসানী আগামী ১১ই অক্টোবর টাঙ্গাইলের সন্তোষে এক নেতৃ সম্মেলনে যোগদানের জন্য আওয়ামী লীগ নেতাদের প্রতি আমন্ত্রণ জানাইয়াছিলেন।
সভায় গৃহীত অপর এক প্রস্তাবে “গণতান্ত্রিক শক্তিসমূহের ঐক্য” প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্যে প্রয়োজনীয় আলাপ-আলোচনা চালাইবার জন্য ভারপ্রাপ্ত সভাপতিকে ইতিপূর্বেই প্রদত্ত দায়িত্বের পুনরুনুমোদন করা হয়।

দাবীর ভিত্তিতে ঐক্যের আহ্বান
আগামী সাধারণ নির্বাচন প্রশ্নে দীর্ঘ আলাপ-আলোচনায় গৃহীত এক প্রস্তাবে প্রাপ্তবয়স্কের প্রত্যক্ষ ভোটাধিকার কায়েম, পার্লামেন্টারী গণতন্ত্রের পুনঃপ্রবর্তন, জরুরী আইনের আশু অবসান, প্রেস অর্ডিন্যান্স বাতিল, নিউনেশন প্রিন্টিং প্রেসের বাজেয়াফতি আদেশ প্রত্যাহার, সকল রাজবন্দীর মুক্তি, সকল রাজনৈতিক মামলার প্রত্যাহার দাবী করা হয়। উপরোক্ত দাবীসমূহের ভিত্তিতে ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনে সামিল হওয়ার জন্য দেশের সকল গণতান্ত্রিক শক্তির প্রতি আহ্বান জানান হইয়াছে।
উপরোক্ত দাবীসমূহ সম্পর্কিত প্রস্তাবে আরও বলা হয় যে, যেহেতু প্রত্যক্ষ ভোটাধিকারের অবর্তমানে জনমতের সত্যিকার প্রতিফলন কখনই সম্ভব হইতে পারে না এবং যেহেতু দেশরক্ষা বিধির প্রয়োগে বিরোধী শক্তিকে ইচ্ছামত নির্যাতন করার জন্য জরুরী অবস্থা বহাল রাখা হইতেছে, যেহেতু বাকস্বাধীনতা ও সমাবেশের অধিকার সংকুচিত করা হইতেছে, যেহেতু প্রেস অর্ডিন্যান্সের প্রয়োগে সংবাদপত্রের স্বাধীনতা হরণ করা হইতেছে এবং একই সঙ্গে প্রেস ট্রাষ্ট মারফত বিরোধীদলের বিরুদ্ধে লাগামহীন মিথ্যা প্রচারণা চালান হইতেছে, যেহেতু অসংখ্য দেশপ্রেমিককে কারাগারে পুরিয়া তাঁহাদের জীবনীশক্তি তিলে তিলে ক্ষয় করা হইতেছে, যেহেতু বিরোধীদলের বিরুদ্ধে নির্যাতন চালান হইতেছে এবং নিকৃষ্ট ধরনের “টোটালিটেরিয়ালিজম” ও রেজিমেন্টেশন” চালান হইতেছে সেইহেতু এই সভার দৃঢ় অভিমত এই যে, বৰ্ত্তমান ব্যবস্থায় গৃহীতব্য আসন্ন নির্বাচন কখনই সুষ্ঠু ও নির্বাদ হইতে পারে না এবং এই নির্বাচনে কখনই জনমতের সত্যিকার প্রতিধ্বনি হইতে পারে না।

২০শে অক্টোবর জনসভা
সভায় গৃহীত এক প্রস্তাবে আসন্ন কাউন্সিল অধিবেশন শেষে ২০শে অক্টোবর ঢাকায় একটি জনসভা অনুষ্ঠানের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।

৬-দফা ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের অন্তরায় নয়
সভায় ৬-দফার প্রতি দৃঢ় সমর্থন জ্ঞাপন করিয়া বলা হয় যে, ৬ দফা কর্মসূচী ইস্যুভিত্তিক ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের পথে কোন অন্তরায় নয়। ওয়ার্কিং কমিটি গত ৪ঠা অক্টোবর পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী লীগ প্রধানের অভিমত ৬-দফা কর্মসূচী এবং অন্যান্য বিষয় সংক্রান্ত জল্পনা-কল্পনামূলক যে খবর কতিপয় সংবাদপত্রে প্রকাশিত হইয়াছে তাহার সত্যতা অস্বীকার করিয়া সামরিক হেফাজতে থাকাকালীন রাজনৈতিক ব্যাপারে শেখ মুজিবের উদ্ধৃতি প্রদান হইতে বিরত থাকার জন্য সংবাদপত্রসমূহের প্রতি অনুরোধ জানায়।
সভায় পূর্ব কর্মসূচী অনুযায়ী ১৯শে ও ২০শে অক্টোবর পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী লীগের দ্বিবার্ষিক কাউন্সিল অধিবেশন অনুষ্ঠানের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়। এই মর্মে ইতিপূর্বে স্বতন্ত্র নোটিশ প্রেরণ সত্ত্বেও জেলা ও মহকুমা নেতৃবৃন্দের প্রতি ইহাকে নোটিশ হিসাবে গ্রহণের অনুরোধ করা হইয়াছে।
সভায় মামলা পরিচালনা কমিটি পরিচালিত হিসাব পরীক্ষা করিয়া অর্থ সংগ্রহের পরিমাণ সন্তোষজনক না হওয়ায় অর্থ-সংগ্রহ তৎপরতা জোরদার করার আহ্বান জানানো হয় এবং কাউন্সিল অধিবেশনের পূর্বে ইতিমধ্যে সংগৃহীত অর্থ প্রেরণ করার জন্য বলা হয়।
ওয়ার্কিং কমিটি পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী লীগ প্রধানের বৃদ্ধা মাতার মরণাপন্ন অবস্থায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করিয়া মাতাকে দেখার জন্য মানবতার খাতিরে শেখ মুজিবর রহমানকে ‘প্যারোলে’ মুক্তি দেওয়ার জন্য সরকারের প্রতি আবেদন জানায়।

রাষ্ট্রভাষার প্রশ্নে বিতর্ক সৃষ্টি না করার আহ্বান
সভায় গৃহীত এক প্রস্তাবে প্রথমতঃ ভাষা এবং দ্বিতীয়তঃ আঞ্চলিক সংস্কৃতি ও ‘লিঙ্গুর ফ্রাঙ্কা’ প্রসংগের অবতারণা করিয়া দেশের উভয়াঞ্চলের জনসাধারণের মধ্যে কতিপয় মহল বিভেদ ও অনৈক্য সৃষ্টির যে প্রচেষ্টা চালাইতেছে তাহার নিন্দা করা হয়। সভায় কতিপয় মহল কর্তৃক মীমাংসিত রাষ্ট্রভাষা প্রশ্নে পুনরায় গোলযোগ সৃষ্টির প্রচেষ্টার প্রতিবাদ করিয়া বলা হয় যে, বাংলা ভাষাকে রাষ্ট্রভাষার মর্যাদা হইতে অপসারণের যে কোন প্রচেষ্টা বাংলাভাষী জনসাধারণ প্রতিহত করিবে।

সূত্র: সংবাদপত্রে বঙ্গবন্ধু চতুর্থ খণ্ড: ষাটের দশক ॥ তৃতীয় পৰ্ব ॥ ১৯৬৮

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!