You dont have javascript enabled! Please enable it!

সংবাদ
২৪শে জুন ১৯৬৮
প্রতিরক্ষা বন্দীর মামলার শুনানী সমাপ্ত
(নিজস্ব বার্তা পরিবেশক)

গত শনিবার ঢাকা সেন্ট্রাল জেল গেটে পাকিস্তান প্রতিরক্ষা বিধি অনুযায়ী শেখ ফজলুল হকের (মনী) বিরুদ্ধে আনীত সুনির্দিষ্ট মামলার শুনানী সমাপ্ত হয়। ১৯৬৬ সালের ১৩ই মে ঢাকার আউটার ষ্টেডিয়ামে আপত্তিকর বক্তৃতাদানের অভিযোগে এই মামলা আনয়ন করা হয়।
শেখ মুজিবর রহমানের ভাগিনা শেখ ফজলুল হক (মনী) বর্তমানে পাকিস্তান প্রতিরক্ষা বিধি অনুযায়ী ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে আটক রহিয়াছেন।
প্রথম শ্রেণীর ম্যাজিষ্ট্রেট জনাব এম, এস, আলীর কোর্টে এই মামলা চলিতেছে। এডভোকেট আনওয়ারুল হক এইদিন অভিযুক্ত ফজলুল হক মনীর পক্ষে সওয়াল জবাব করেন। পক্ষান্তরে এসিসট্যান্ট পাবলিক প্রসিকিউটর জনাব মেসবাহউদ্দীন আহমদ সরকার পক্ষে সওয়াল জবাব করেন। অভিযোগের বিবরণে প্রকাশ, বিগত ১৯৬৬ সালের ১৩ই মে ঢাকার আউটার ষ্টেডিয়ামে খাদ্য সমস্যার উপর আলোচনা করার জন্য পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী লীগ কর্তৃক আয়োজিত এক জনসভায় অভিযুক্ত শেখ ফজলুল হক (মনী) আপত্তিকর বক্তৃতা করেন। সরকার পক্ষে উক্ত সভায় সভার ‘লং হ্যাণ্ড’ নোটের মাধ্যমে গৃহীত কার্যবিবরণী অনুযায়ী এই মামলা দায়ের করা হয়। কতিপয় সাক্ষী ইতিপূর্বে সাক্ষ্যদান ও অভিযোগ প্রমাণ করেন। অভিযুক্ত ব্যক্তির পক্ষে এডভোকেট আনওয়ারুল হক সরকার পক্ষের সাক্ষীদের জেরা করেন এবং সওয়াল জবাবকালে বলেন যে, বাদীপক্ষ অভিযুক্ত ব্যক্তির বক্তৃতায় অংশবিশেষের উপর ভিত্তি করিয়া বর্তমান মামলা দায়ের করেন। তিনি বলেন যে, অভিযুক্ত ব্যক্তির সমগ্র বক্তৃতা একত্রে বিবেচনা করিলে তাঁহার বিরুদ্ধে ক্ষতিকর বক্তৃতাদানের অভিযোগ আদৌ টিকে না।
সরকারপক্ষ অভিযুক্ত ব্যক্তির বক্তৃতা সরকারের বিরুদ্ধে ঘৃণা সৃষ্টি বা উহাকে উচ্ছেদ করার প্ররোচনামূলক কিছুই প্রমাণ করিতে পারেন নাই। অভিযুক্ত ব্যক্তি তাঁহার বক্তৃতায় সরকারের কাজের ন্যায়সঙ্গত সমালোচনা করিয়াছেন এবং এই সমালোচনা করার অধিকার তাঁহার রহিয়াছে। শাসনতন্ত্রের বিধিবলেও সরকারের কাজের সমালোচনা করার অধিকার দেওয়া হইয়াছে।
এডভোকেট হক আরও বলেন যে, সরকারের বিভিন্ন কর্মসূচী এবং অর্থনীতির সমালোচনা করার অর্থ সরকারের বিরুদ্ধে ঘৃণা বা সরকারকে উচ্ছেদের প্ররোচনা বা উস্কানি প্রমাণ করে না। উপরন্তু অভিযুক্ত ব্যক্তির দেশের আইন সঙ্গত রাজনৈতিক দল হিসাবে আওয়ামী লীগের ৬ দফা কর্মসূচীর সমর্থনে বক্তৃতা করার সম্পূর্ণ অধিকার রহিয়াছে।
জনাব আনওয়ারুল হক আরও বলেন যে, ১৯৬২ সালের রাজনৈতিক দল আইনেও স্বীয় দলের পক্ষে প্রচার এবং সরকারী কাজের সমালোচনার অধিকার দেওয়া হইয়াছে। পূর্বাহ্নে সরকার পক্ষের কৌসুলী বলেন যে, অভিযুক্ত ব্যক্তি সরকার নীতির সমালোচনা করিতে পারেন কিন্তু সরকারের সমালোচনা করার কোন অধিকার তাহার নাই। উহার উত্তরে এডভোকেট আনোয়ারুল হক বলেন যে, সরকারী নীতির সহিত সরকারকে বিচ্ছিন্ন করিয়া দেখার উপায় নাই। কেননা সরকারী নীতির সমালোচনার অর্থ হইল সরকারের সমালোচনা করা আর সরকার হইল একটি প্রতিষ্ঠান। উহা পরিচালিত হয় কতিপয় এজেন্সীর মাধ্যমে। জনাব হক সরকারী সাক্ষীদের সমালোচনা করিয়া বলেন যে, ২টি ক্ষেত্র ছাড়া আর সব কয়জন সরকারের সহিত সংশ্লিষ্ট। তিনি বলেন যে, যে ২টি বেসরকারী সাক্ষী বর্তমান ক্ষেত্রে উপস্থিত করা হইয়াছে উহার মধ্যে একটি হইল কোন এক হোটেলের বয়। দ্বিতীয় সাক্ষী আমীর হোসেনকে সরকার এক ডজনের উপর বিভিন্ন রাজনৈতিক মামলার সাক্ষী হিসাবে পেশ করিয়াছেন। সরকার পক্ষ দাবী করিতেছেন যে, অভিযুক্ত ব্যক্তির বক্তৃতার ফলে সরকারের বিরুদ্ধে হাজার হাজার লোকের মধ্যে উত্তেজনা সৃষ্টি করা হইয়াছে। কিন্তু সাক্ষীদের সাক্ষ্যদানকালে উহা প্রতিফলিত হয় নাই৷
এই মামলার রায় আগামী ২০শে জুলাই অবধি স্থগিত রাখা হইয়াছে। অভিযুক্ত ব্যক্তির প্রধান কৌসুলীকে সাহায্য করেন এডভোকেট এএফএম আবদুল হক।

সূত্র: সংবাদপত্রে বঙ্গবন্ধু চতুর্থ খণ্ড: ষাটের দশক ॥ তৃতীয় পৰ্ব ॥ ১৯৬৮

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!