সংবাদ
১৯শে জুন ১৯৬৮
আজ ‘আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা’র বিচার শুরু
(নিজস্ব বার্তা পরিবেশক)
অদ্য (বুধবার) সকাল ৯টায় ঢাকা ক্যান্টনমেন্টে ৩ সদস্যবিশিষ্ট বিশেষ ট্রাইব্যুনালে আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা নামে পরিচিত রাষ্ট্র বনাম শেখ মুজিব ও অন্যান্যের মামলায় বিচার শুরু হইবে। সুপ্রীম কোর্টের প্রাক্তন প্রধান বিচারপতি জনাব এস, এ, রহমানের নেতৃত্বাধীনে এই ট্রাইব্যুনালের অপর দুইজন সদস্য হইতেছে বিচারপতি জনাব এম, আর, খান ও বিচারপতি জনাব মকসুমুল হাকিম।
আওয়ামী লীগ প্রধান শেখ মুজিবর রহমানসহ ৩০ জন সামরিক ও বেসামরিক অফিসার এবং বেসরকারী ব্যক্তি যাঁহাদের বিরুদ্ধে “পূর্ব পাকিস্তানকে বিচ্ছিন্ন করার ষড়যন্ত্রের ও সামরিক বাহিনীর লোকজনের আনুগত্য বিনষ্টের অভিযোগ আনয়ন করা হইয়াছে আজ তাঁহাদিগকেই ট্রাইব্যুনালের সম্মুখে উপস্থিত করা হইবে। অভিযুক্তদের মধ্যে শেখ মুজিবর রহমান ছাড়া আর বেসরকারী ব্যক্তিগণ হইতেছেন চট্টগ্রামের ডঃ সাইদুর রহমান, শ্রী ভূপতি ভূষণ চৌধুরী ও শ্রী বিধান কৃষ্ণ সেন, ও দিনাজপুরের জনাব আলী রেজা। অভিযুক্ত সি এস পি অফিসারত্রয় হইতেছেন মেসার্স রুহুল কুদ্দুস, আহমদ ফজলুল রহমান এবং শামসুর রহমান খান।
এ পি পি পরিবেশিত এক খবরে বলা হয় যে, আগরতলা ষড়যন্ত্র গত ডিসেম্বর মাসে উদঘাটিত করা হয়। পরবর্তীকালে আওয়ামী লীগ প্রধান শেখ মুজিবের বিরুদ্ধে এই ষড়যন্ত্রের পরিকল্পনা ও পরিচালনার অভিযোগ আনয়ন করা হয়।
প্রসঙ্গতঃ উল্লেখযোগ্য যে, গত ৬ই জানুয়ারী সরকারী প্রেসনোটে যে ২৮ জনের গ্রেফতারের ঘোষণা প্রকাশ করা হয়, উহাতে শেখ মুজিবর রহমানের নাম ছিল না।
১৮ই জানুয়ারীতে প্রকাশিত অপর এক প্রেসনোটে দেশরক্ষা বিধিবলে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে আটক আওয়ামী লীগ নেতা শেখ মুজিবকে এই ব্যাপারে অভিযুক্ত করা হয়।
পরবর্তীকালে জনাব শামসুর রহমান খান সিএসপিকেও একই অভিযোগে অভিযুক্ত করা হয়। ৬ই জানুয়ারীতে প্রকাশিত সরকারী প্রেসনোটে বলা হয় যে, অভিযুক্তদের মধ্যে কেহ কেহ আগরতলা গমন করিয়া ভারতীয় সামরিক অফিসারদের সহিত যোগাযোগ স্থাপন করিয়াছিলেন এবং অর্থ ও অস্ত্রশস্ত্র যোগাড়ে তৎপর হইয়াছিলেন। ঘোষণায় আরও অভিযোগ করা হইয়াছিল যে, অভিযুক্তরা প্রচুর পরিমাণে অর্থ সংগ্রহে সক্ষম হইয়াছিলেন এবং তাঁহাদের কেহ কেহ ঢাকাস্থ ভারতীয় ডেপুটি হাই কমিশনের ফার্ষ্ট সেক্রেটারী মিঃ ওঝার সহিত যোগাযোগ করিয়াছিলেন। ইহার পরপরই মিঃ ওঝাকে পাকিস্তান ত্যাগ করিতে হয়।
পরবর্তী সময়ে সরকার ‘আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলার’ বিচারের উদ্দেশ্যে ট্রাইব্যুনাল গঠন করেন।
সরকারপক্ষে মামলা পরিচালনা করিবেন মেসার্স মনজুর কাদির, টি, এইচ, খান, এ আলিম, খাকমে বাবর ও গ্রুপ ক্যাপটেন আসলাম।
অভিযুক্তদের পক্ষে কৌসুলী হিসাবে উপস্থিত হইবেন মেসার্স খান বাহাদুর মোঃ ইসমাইল, আবদুস সালাম খান, আবু হোসেন সরকার, আতাউর রহমান খান, মীর্জা গোলাম হাফিজ, সৈয়দ আজিজুল হক, জহিরুদ্দীন, আনোয়ারুল হক, মোল্লা জালালুদ্দিন, আমিনুল হক, দেওয়ান মাহবুব আলী, কে, এম, আলম, খোন্দকার দেলওয়ার হোসেন, আবদুল হক প্রমুখ ৫০ জন আইনজীবী। মামলার পরবর্তী পর্যায়ে পশ্চিম পাকিস্তানের কতিপয় খ্যাতনামা আইনজীবীর অংশগ্রহণের সম্ভাবনা রহিয়াছে বলিয়া জানা গিয়াছে।
সূত্র: সংবাদপত্রে বঙ্গবন্ধু চতুর্থ খণ্ড: ষাটের দশক ॥ তৃতীয় পৰ্ব ॥ ১৯৬৮