সংবাদ
১লা জুন ১৯৬৮
ডেপুটি স্পীকার কর্তৃক বৈধতার প্রশ্ন প্রত্যাখ্যান
বিশেষ ট্রাইব্যুনালের জন্য অর্থ মঞ্জুরী প্রাদেশিক পরিষদের এখতিয়ার বহির্ভূত: বিরোধীদল
(নিজস্ব বার্তা পরিবেশক)
গতকাল (শুক্রবার) বিরোধীদল কর্তৃক প্রাদেশিক পরিষদ ‘আগরতলা ষড়যন্ত্র’ মামলার বিচারের জন্য বিশেষ ট্রাইব্যুনালের ব্যয় নির্বাহের উদ্দেশ্যে ১৯৬৭- ১৯৬৮ সালের অতিরিক্ত বাজেটে ২ লক্ষ ৯৩ হাজার টাকা ব্যয় বরাদ্দের দাবীর বৈধতা চ্যালেঞ্জ করা হইলে উহার উপর উত্তেজনাপূর্ণ বিতর্ক শুরু হয়। ডেপুটি স্পীকার জনাব গমীরউদ্দীন প্রধান এইদিন পরিষদে স্পীকারের আসন গ্রহণ করেন।
বিরোধী দলেরনেতা জনাব আসাদুজ্জামান খান প্রথমে এই ব্যয় বরাদ্দের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করেন। তিনি বলেন যে, এই পরিষদে ইতিপূর্বে আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা সম্পর্কে এবং শেখ মুজিবর রহমানসহ সকল অভিযুক্ত ব্যক্তির ব্যাপারে বিস্তারিত বিবরণ ও তাঁহাদের কোথায় রাখা হইয়াছে উহা জানিতে চাওয়া হইলে সরকার এই ব্যাপারে সম্পূর্ণ নীরবতা অবলম্বন করেন।
পিপিআই জানাইতেছেন যে, সম্মিলিত বিরোধীদলের নেতা জনাব আবদুল মালেক উকিল শাসনতান্ত্রিক বিধানবলীর উল্লেখক্রমে এই ব্যাপারে স্পীকারের রুলিং দাবী করেন৷
সম্পূর্ণ কেন্দ্রীয় বিষয় হওয়ায় উক্ত খাতে প্রাদেশিক পরিষদের ব্যয় বরাদ্দ মঞ্জুরীর এখতিয়ার আছে কিনা, উক্ত মর্মে তিনি রুলিং দাবী করেন। তিনি বলেন যে, শাসনতন্ত্রের ৮৮ ধারা অনুযায়ী কেন্দ্রীয় সরকারের সহিত সংশ্লিষ্ট কোন বিষয়ে অর্থ মঞ্জুরী করা এই পরিষদের পক্ষে আইনসঙ্গত হইবে না।
পরিষদে বিরোধীদলের নেতা জনাব আসাদুজ্জামান খানও জনাব মালেকের দাবী সমর্থন করিয়া বলেন যে, ট্রাইব্যুনাল গঠন ও মামলার তদন্ত সব কিছুই কেন্দ্রীয় সরকারের দায়িত্বের অন্তর্ভুক্ত। তিনি বলেন যে, কেন্দ্রীয় বিষয়ের উপর ভোট প্রদান প্রাদেশিক সরকারের সম্পূর্ণ এখতিয়ার বহির্ভূত। তিনি আরও বলেন যে, প্রাদেশিক সরকার কেন্দ্রীয় সরকারে পক্ষে অর্থব্যয় করিতে পারেন, কিন্তু কেন্দ্রীয় বিষয়ের জন্য ব্যয় বরাদ্দের দাবী এই পরিষদে মঞ্জুরীর কোন ক্ষমতা নাই। প্রাদেশিক অর্থমন্ত্রী ডঃ এম এন হুদা উত্তরে দাবী করেন যে, প্রাদেশিক সরকারের এ ব্যাপারে নিরঙ্কুশ এখতিয়ার রহিয়াছে। তিনি বলেন, এ ব্যাপারে শাসনতান্ত্রিক কোন বিধিনিষেধ নাই এবং জনাব আবদুল মালেক শাসনতন্ত্রের যে উদ্ধৃতি প্রদান করিয়াছেন উহা বর্তমান দাবীর সহিত সঙ্গতিসম্পন্ন নহে। এই পর্যায়ে ডেপুটি স্পীকার বলেন যে, বিষয়টি সম্পূর্ণরূপে কেন্দ্রীয় সরকারের এখতিয়ারাধীন। এক্ষণে প্রশ্ন দেখা দিয়াছে এই ব্যাপারে কেন্দ্রীয় সরকারে পক্ষে অনুরূপ ব্যয় বরাদ্দের দাবী মঞ্জুর করার অধিকার এই পরিষদের আছে কিনা।
কোন বিধি বিধান সংশোধন করা যায় না
এই পর্যায়ে ডঃ হুদা পুনরায় দণ্ডায়মান হইয়া বলেন যে, প্রেসিডেন্ট কেন্দ্ৰীয় সরকারের পক্ষে প্রাদেশিক সরকারকে উক্ত খাতে ব্যয় মঞ্জুরীর ক্ষমতা প্রদান করিয়াছেন এবং উহা সম্পূর্ণরূপে আদায়যোগ্য।
অতঃপর জনাব আবদুল মালেক উকিল স্পীকারকে বিষয়টি অত্যন্ত সতর্কতার সহিত বিবেচনার জন্য অনুরোধ জানান এবং বিষয়টি শাসনতন্ত্রের সহিত সম্পর্কযুক্ত বিধায় এই ব্যাপারে রুলিং দানের জন্য পর্যাপ্ত সময় গ্রহণের অনুরোধ জানান।
কিন্তু ডেপুটি স্পীকার আর সময় ক্ষেপণ না করিয়া তাঁহার রুলিং দান করেন এবং বলেন যে, কেন্দ্রীয় সরকারের পক্ষে ব্যয় মঞ্জুরীর পূর্ণ অধিকার এই পরিষদের। অতিরিক্ত বাজেটের উপর সাধারণ আলোচনা অসমাপ্ত থাকায় ডেপুটি স্পীকার আজ (শনিবার) সকাল ৯টা পর্যন্ত পরিষদের অধিবেশন মূলতবী ঘোষণা করেন।
আইনমন্ত্রী জনাব আবদুল হাই এই পর্যায়ে পরিষদের অধিবেশন কিছুক্ষণের জন্য মুলতবী রাখার প্রস্তাব করেন। অতঃপর পরিষদের অধিবেশন পুনরায় শুরু হইলে আইনমন্ত্রী শাসনতন্ত্রের কতিপয় বিধির উদ্ধৃতি দান করিয়া দাবী করেন যে, কেন্দ্রীয় সরকারের পক্ষে ব্যয় বরাদ্দ মঞ্জুরী করার এখতিয়ার এই পরিষদের রহিয়াছে এবং অর্থ আদায়যোগ্য।
আহমদুল কবীর
বিরোধীদলের বলিষ্ঠ সদস্য জনাব আহমদুল কবীর আইনমন্ত্রীর অভিমতের বিরুদ্ধে ততোধিক বলিষ্ঠ যুক্তি খাড়া করেন। তিনি বলেন, শাসনতন্ত্রের বিধি অনুযায়ী অনুরূপ কোন দাবী বিবেচনা করার অধিকার এই পরিষদের নাই। তিনি শাসনতন্ত্রের বিভিন্ন ধারায় উদ্ধৃতি দিয়া প্রমাণ করেন যে, বাজেটের উল্লেখযোগ্য যে, গতকাল ডাঃ আজাহারউদ্দীন আহমদ (পিডিএম বরিশাল) বিরোধীদলের পক্ষেই আলোচনার সূত্রপাত করেন। জনাব এ, এস, ওয়াহিদ খানও (পিডিএম, কিশোরগঞ্জ) অতিরিক্ত ব্যয় বরাদ্দের দাবীর বিরোধিতা করেন। পক্ষান্তরে সরকারপক্ষে জনাব আসগর হোসেন ব্যয় বরাদ্দের দাবীর প্রতি অকুণ্ঠ সমর্থন জ্ঞাপন এবং প্রাদেশিক গভর্ণর জনাব আবদুল মোনায়েম খান ও প্রেসিডেন্ট আইয়ুবের প্রতি আনুগত্য প্রদর্শন ও তাঁহাদের নেতৃত্বে আস্থা প্রকাশ করেন। সরকারপক্ষে জনাব সরওয়ার জান মিয়া অবশ্য সরকারের সকল দফতরে দুর্নীতির প্রসার ও উহার প্রতিকারের দাবী জানান। তিনি সরকারী তহবিলের যথাযথ ব্যবহারের উপর গুরুত্ব আরোপ করেন এবং উন্নয়নখাতে বরাদ্দকৃত অর্থের যাহাতে সদ্ব্যবহার হয় তাহার দাবী জানান।
সূত্র: সংবাদপত্রে বঙ্গবন্ধু চতুর্থ খণ্ড: ষাটের দশক ॥ তৃতীয় পৰ্ব ॥ ১৯৬৮