You dont have javascript enabled! Please enable it!

সংবাদ
৩রা এপ্রিল ১৯৬৮
ময়মনসিংহ জেলা আওয়ামী লীগ কাউন্সিল অধিবেশন
‘শোষণমুক্ত সমাজ ব্যবস্থাই আওয়ামী লীগের লক্ষ্য’

ময়মনসিংহ, ১লা এপ্রিল (নিজস্ব সংবাদদাতা)।- পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি জনাব সৈয়দ নজরুল ইসলাম বলেন, নির্যাতিত মানুষের দাবী-দাওয়া লইয়া যাহারাই আগাইয়া আসিবে তাহাদের সহিত একযোগে আওয়ামী লীগ আন্দোলন করিতে বদ্ধপরিকর।
ময়মনসিংহ জেলা আওয়ামী লীগ নির্বাচনী কাউন্সিল অধিবেশনে জনাব সৈয়দ নজরুল ইসলাম বক্তৃতা করিতেছিলেন।
পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদিকা মিসেস আমেনা বেগম বক্তৃতা প্রসঙ্গে বলেন, যত অত্যাচার নির্যাতন আসুক না কেন আওয়ামী লীগ ৬-দফা দাবী ত্যাগ করিবে না।
সভাপতির ভাষণে জনাব সৈয়দ নজরুল ইসলাম আরো বলেন, ৬ দফা এখন আর শুধু আওয়ামী লীগের একার দাবী নহে, ৬-দফা এখন ১১ কোটি পাকিস্তানীর দাবী। ৬-দফা বিচ্ছিন্নতার প্রতীক নয়, ৬-দফা পাকিস্তানের ঐক্য, সংহতি ও প্রগতির প্রতীক।
তিনি আওয়ামী লীগের অর্থনৈতিক কর্মসূচীর ব্যাখ্যাদান করিয়া বলেন, সমাজতন্ত্রের মাধ্যমে শোষণহীন সমাজব্যবস্থা কায়েমই আওয়ামী লীগের উদ্দেশ্য। সৈয়দ সাহেব শেখ মুজিবর রহমানের অবস্থান ও স্বাস্থ্যের অবস্থা সম্পর্কে অনতিবিলম্বে সরকারী প্রেসনোটে প্রকাশের দাবী জানান। মিসেস আমেনা বেগম শেখ মুজিবর রহমানের আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগসহ দেশের নিয়মিত বিচারালয়ে প্রকাশ্যে বিচার অনুষ্ঠানের দাবী জানাইয়া বলেন, শেখ মুজিব যদি দেশদ্রোহী হয় তাহা হইলেও দেশবাসীর তা জানার অধিকার আছে।
সম্মেলনে আওয়ামী লীগ নেতা জনাব আবুল কালাম, জনাব রফিক উদ্দিন ভূঁইয়া ও জনাব আবদুল মান্নান বক্তৃতা করেন।
জনাব সৈয়দ নজরুল ইসলামকে সভাপতি, জনাব রফিকউদ্দিন ভূঁইয়াকে সম্পাদক, জনাব খোন্দকার আবদুল মালেককে সাংগঠনিক সম্পাদক, জনাব শামসুল হককে প্রচার সম্পাদক, জনাব কমরুদ্দিনকে শ্রম সম্পাদক, জনাব আবুল মনসুর আহমদ এডভোকেটকে সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সম্পাদক, জনাব নাজিম উদ্দিন এডভোকেটকে দপ্তর সম্পাদক, জনাব আবদুর রহমান সিদ্দিক (দেশরক্ষা আইনে বন্দী) কে সহ-সম্পাদক ও কোষাধ্যক্ষ পদে নির্বাচিত হইয়াছেন জনাব আমিনুর রহমান এডভোকেট। এতদ্ব্যতীত ৬ জন সহ-সভাপতি ও আরও ৫ জন সহ-সম্পাদক এবং ১৮ জন কার্যকরী সংসদের সদস্য নির্বাচিত হইয়াছেন।
ময়মনসিংহ জেলা আওয়ামী লীগ সম্মেলনে গৃহীত প্রস্তাবলীতে ৬-দফার আশু বাস্তবায়ন, শেখ মুজিবের অবস্থান ও স্বাস্থ্যের অবস্থা সম্পর্কে অনতিবিলম্বে সরকারী প্রেসনোট প্রকাশের দাবী, আওয়ামী লীগ নেতা খোন্দকার মোশতাক আহমদ, জনাব তাজুদ্দিন আহমদ, জনাব আবদুল মোমেন, জনাব আবদুর রহমান সিদ্দিক, ছাত্রলীগ নেতা জনাব আবদূর রাজ্জাক, জনাব আল মুজাহিদী, জনাব আব্দুল লতিফ সিদ্দিকী, ছাত্র ইউনিয়নের প্রাক্তন সভানেত্রী বেগম মতিয়া চৌধুরী ও শ্রমিক নেতা জনাব আবদুল মান্নানসহ সকল রাজবন্দীর মুক্তি, জরুরী আইন প্রত্যাহার, নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যাদির মূল্য হ্রাস, ট্যাক্স খাজনা বৃদ্ধির তীব্র নিন্দা ও সার্টিফিকেটযোগে খাজনা আদায় রহিত, ময়মনসিংহ, মুক্তাগাছা ও কিশোরগঞ্জে জারীকৃত ১৪৪ ধারা প্রত্যাহার, মুক্তাগাছায় ছাত্রলীগ কর্মী মনজু খোন্দকার ও লুৎফরসহ ৪২জনের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত মামলা প্রত্যাহার, ‘৭০ সন হইতে তৃতীয় বিভাগে উত্তীর্ণ ছাত্রদের কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি না করার সরকারী সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার এবং ‘ইত্তেফাক’-এর পুনঃপ্রকাশ দাবীসহ আরো কতিপয় প্রস্তাব গৃহীত হয়।
ময়মনসিংহ জেলা আওয়ামী লীগ সম্মেলনে আওয়ামী লীগ নেতা এডভোকেট এম, এ, রব ও জনাব ময়েজউদ্দিন আহমদের অকাল মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করা হয় এবং এক মিনিট নিরবে দণ্ডায়মান হইয়া মরহুমের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধাঞ্জলি অর্পণ করা হয়।

সূত্র: সংবাদপত্রে বঙ্গবন্ধু চতুর্থ খণ্ড: ষাটের দশক ॥ তৃতীয় পৰ্ব ॥ ১৯৬৮

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!