সংবাদ
৫ই মার্চ ১৯৬৮
করাচী প্রাদেশিক আওয়ামী লীগের সভা
বিভিন্ন স্থানে ১৪৪ ধারা জারী বন্ধের দাবী
করাচী, ৪ঠা মার্চ।- করাচী প্রাদেশিক আওয়ামী লীগের এক প্রেস রিলিজে প্রকাশ, গত ২রা মার্চ শনিবার সন্ধ্যা ৬টায় আওয়ামী লীগ অফিসে করাচী প্রাদেশিক আওয়ামী লীগের এডহক কমিটির এক সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় সভাপতিত্ব করেন জনাব আবু আসিম এডভোকেট।
সভায় ৩ ঘণ্টা আলাপ-আলোচনার পর সর্বসম্মতিক্রমে নিম্নোক্ত প্রস্তাবাবলী গৃহীত হয়: (১) করাচী প্রাদেশিক আওয়ামী লীগের এডহক কমিটি গভীর উদ্বেগের সহিত ভিয়েতনাম পরিস্থিতি লক্ষ্য করিয়া এই মর্মে সুচিন্তিত অভিমত প্রকাশ করিতেছে যে, ভিয়েত্নাম হইতে অবিলম্বে বিদেশী রাষ্ট্রসমূহের সকল সৈন্য প্রত্যাহৃত হওয়া উচিত এবং ভিয়েতনামী জনগণকে তাহাদের ভাগ্য তাহাদের নিজেদেরকেই নির্ধারণ করিতে দেওয়া উচিত। (২) করাচী প্রাদেশিক আওয়ামী লীগের এ্যাডহক কমিটি সংক্রান্ত রোয়েদাদটি বিবেচনা করিয়া দেখিয়াছে। ইহা এই মর্মে দৃঢ় মত পালন করে যে, উক্ত রোয়েদাদটির প্রকৃতি বিচার বিভাগীয় অপেক্ষা অধিকতর রাজনৈতিক। এই সভা পাকিস্তানকে স্বচ্ছ ভূখণ্ডের এক দশমাংশ এবং ভারতকে, ন্যায়সঙ্গতভাবে যাহা ছিল পাকিস্তানের অংশ, সেই নয় দশমাংশ বরাদ্দ করার ফলে অসন্তোষ প্রকাশ করিতেছে।
(৩) শেখ মজিবুর রহমান এবং অন্যান্যদের যে আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলায় গ্রেফতার করা হইয়াছে তৎসংক্রান্ত ব্যাপারে সরকার যে ব্যবস্থা গ্রহণ করিয়াছেন, করাচী প্রাদেশিক আওয়ামী লীগের এডহক কমিটি তাহা বিবেচনা করিয়া দেখিয়াছে এবং উহাতে গভীরভাবে উদ্বিগ্ন বোধ করিতেছি। সভা এই মত পোষণ করেন যে, উক্ত মামলায় জড়িত ব্যক্তিদের দেশের স্বাভাবিক আইনকানুন অনুযায়ী প্রকাশ্য আইন আদালতে বিচার করা উচিত। এই সভা বিচারাধীন একটি বিষয় সম্পর্কে সরকারের দায়িত্বশীল ব্যক্তিদের তড়িৎ মন্তব্য প্রদানজনিত আচরণে ক্ষোভও প্রকাশ করিতেছে। সরকারকে আমরা শেখ মুজিবর রহমানের অবস্থান ও শারীরিক অবস্থা সম্পর্কে বিবৃতি প্রদানের জন্যও জোর তাগিদ প্রদান করিতেছি।
(৪) করাচী প্রাদেশিক আওয়ামী লীগের এডহক কমিটি দেশের বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি পর্যালোচনা করিয়া দেখিয়াছে এবং গভীর উদ্বেগের সহিত লক্ষ্য করিয়াছে যে, দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতির দ্রুত অবনতি ঘটিয়া চলিয়াছে। এই সভা তাই ইহার পূর্বোখিত দাবীসমূহ পুনরায় এই মর্মে ধ্বনিত করিতেছে যে:
(ক) পূর্ব পাকিস্তানের জনাব তাজুদ্দীন, খন্দকার মুশতাক আহমদ, জনাব ওবায়দুর রহমান, জনাব আবদুল মোমিন, জনাব আবদুর রাজ্জাক, হাজি দানেশ, সৈয়দ আলতাফ হোসেন, লাহোরের জনাব মীর্জা ইব্রাহিম, সিন্ধুর জনাব হায়দার বখস জাতোই ও জনাব গোলাম মোহাম্মদ লেঘারী, করাচীর ছাত্রনেতা শাহান শাহ হোসেন এবং পাকিস্তানের প্রখ্যাত নেতা জনাব জি এম সৈয়দসহ সকল রাজবন্দীকে অবিলম্বে মুক্তি দেওয়া হউক।
(খ) দৈনিক ইত্তেফাক ও সাপ্তাহিক ঢাকা টাইমস শর্তহীনভাবে পুনঃপ্রকাশের অনুমতি দেওয়া হউক;
(গ) সংবাদপত্রের স্বাধীনতা খর্বকারী সকল আইন রদ করা হউক;
(ঘ) অবিলম্বে জরুরী অবস্থা প্রত্যাহার করা হউক;
(ঙ) দেশব্যাপী ১৪৪ ধারা জারী অবিলম্বে বন্ধ করা হউক;
(চ) দেশরক্ষা আইন ও অন্যান্য কালাকানুন এই মুহূর্তে প্রত্যাহার করা হউক;
(ছ) করাচী প্রাদেশিক আওয়ামী লীগের এ্যাডহক কমিটি দৃঢ়ভাবে ঘোষণা করিতেছে যে, দেশের সংহতি ও ঐক্যের স্বার্থে জাতীয় জীবনের বিভিন্ন স্তরে ক্রমবর্ধমান আন্তঃআঞ্চলিক বৈষম্য ৬-দফার ভিত্তিতে নিরসন করা দরকার।
সূত্র: সংবাদপত্রে বঙ্গবন্ধু চতুর্থ খণ্ড: ষাটের দশক ॥ তৃতীয় পৰ্ব ॥ ১৯৬৮