You dont have javascript enabled! Please enable it! 1968.02.13 | ঢাকা জেলা ন্যাপ সম্মেলনে ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের ডাক | সংবাদ - সংগ্রামের নোটবুক

সংবাদ
১৩ই ফেব্রুয়ারি ১৯৬৮
ঢাকা জেলা ন্যাপ সম্মেলনে ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের ডাক

ঢাকা, ১১ই ফেব্রুয়ারী (সংবাদদাতা)।- স্থানীয় বার লাইব্রেরী হলে অনুষ্ঠিত ঢাকা জেলা ন্যাপ সম্মেলনে গৃহীত মূল রাজনৈতিক প্রস্তাবে জনগণের জরুরী দাবী, প্রত্যক্ষ নির্বাচন, পার্লামেন্টারী গণতন্ত্র, পূর্ণ আঞ্চলিক স্বায়ত্তশাসন, রাজবন্দী মুক্তি, জরুরী অবস্থা প্রত্যাহার, সস্তায় খাদ্য প্রভৃতি ইস্যুর উপর ঐক্যবদ্ধ গণআন্দোলনে শামিল হওয়ার জন্য সকল বিরোধী দলের প্রতি আহ্বান জানান হয়। এই প্রস্তাবে দেশের বিরাজমান অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক পরিস্থিতির বিশদ বিশ্লেষণপূর্বক বর্তমান অগণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থার অবসান এবং জনগণের সকল প্রকার গণতান্ত্রিক অধিকার প্রতিষ্ঠার প্রতি বিশেষ গুরুত্ব আরোপ করা হয়।

স্বায়ত্তশাসন ও এক ইউনিট
সভায় গৃহীত এক প্রস্তাবে অবিলম্বে পূর্ব পাকিস্তানকে পূর্ণ আঞ্চলিক স্বায়ত্তশাসন প্রদানের এবং পশ্চিম পাকিস্তানে এক ইউনিট বাতিলের দাবী জানান হইয়াছে। উক্ত প্রস্তাবে বলা হইয়াছে যে, জাতিসমূহের স্বায়ত্তশাসনের অধিকার হরণ করিয়া সাম্রাজ্যবাদ, সামন্তবাদ ও একচেটিয়া পুঁজিবাদী মহলের স্বার্থে সমগ্র পাকিস্তানে এক ইউনিটারী ব্যবস্থা চালু রাখিয়া যাহারা জাতীয় সংহতি রক্ষায় চিন্তা করিতেছেন তাঁহারা ভ্রাস্ত।

রাজবন্দী মুক্তি
সভায় গৃহীত অপর এক প্রস্তাবে বিনাবিচারে আটক রাখার সরকারী নীতির তীব্র নিন্দা করা হইয়াছে। দেশরক্ষা ও নিরাপত্তা আইনে আটক পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তানের দেশপ্রেমিকের একটানা আটকাবস্থার গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়। প্রস্তাবে দেশরক্ষা বিধিবলে কারারুদ্ধ প্রাদেশিক ন্যাপ সম্পাদক জনাব সৈয়দ আলতাফ হোসেন, যুগ্ম সম্পাদক জনাব আবদুল হালিম, কেন্দ্ৰীয় কমিটির সদস্য শ্রী মনিকৃষ্ণ সেন, জনাব হাতেম আলী খান, শ্রী জীতেন ঘোষ, জনাব শামসুল হক, জনাব আবদুল হাই, শ্রী রমেন্দ্র নারায়ণ সাহা, জনাব আলমাস, শ্রী সত্যেন সেন, বাবু রণেশ দাসগুপ্ত, বেগম মতিয়া চৌধুরী এবং নিরাপত্তা আইনে আটক শ্রদ্ধেয় জননেতা শ্রী মনি সিং, শ্রী সুধাংশু বিমল দত্ত, শ্রী মন্মথ নাথ দে, শ্রী সন্তোষ ব্যানার্জী এবং পশ্চিম পাকিস্তানের বেলুচ ন্যাপ নেতা প্রিন্স আবদুল করিম ও আবদুস সামাদ আচকলাই সহ সকল রাজবন্দীর অবিলম্বে বিনাশর্তে মুক্তি দাবী করা হইয়াছে। মুক্তি প্রদান সাপেক্ষ দেশরক্ষা বন্দীদের শ্রেণী বিভাগ বিলোপের দাবী করা হইয়াছে।
অপর এক প্রস্তাবে জনাব হারুনর রশীদ চৌধুরী, জনাব মোঃ ফরহাদ, জনাব নাসিম আলী, শ্রী জ্ঞান চক্রবর্ত্তীসহ সকল দেশপ্রেমিকের উপর আরোপিত হুলিয়া প্রত্যাহারের এবং সকল রাজনৈতিক মামলা ও দণ্ডাদেশ প্রত্যাহারের এবং পশ্চিম পাকিস্তানের ন্যাপ নেতাদের বাজেয়াফতকৃত সম্পত্তি প্রত্যর্পণের দাবী জানান হইয়াছে।
সভায় গৃহীত অপর এক প্রস্তাবে বিচ্ছিন্নতাবাদী ষড়যন্ত্রের অভিযোগে গ্রেফতারকৃত শেখ মজিবর রহমান ও অপর ২৮ জনের বিচার প্রকাশ্যে দেশের প্রচলিত স্বাভাবিক আইন অনুযায়ী অনুষ্ঠানের দাবী জানান হইয়াছে। উক্ত প্রস্তাবে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ প্রমাণসাপেক্ষ ও বিষয়টি বিচারাধীন হওয়া সত্ত্বেও মহল বিশেষের পক্ষ হইতে ইহাকে উপলক্ষ করিয়া বিরোধীদলীয় নেতৃত্ব সম্পর্কে যে অপপ্রচার চালানো ও হুমকি প্রদর্শন করা হইতেছে, উহার প্রতিবাদ জানান হয়। প্রস্তাবে শেখ মুজিবর রহমানের অবস্থান ও স্বাস্থ্যের অবস্থা সম্পর্কে সরকারী প্রেসনোট প্রকাশেরও দাবী জানান হইয়াছে।
অপর এক প্রস্তাবে জেলার ধ্বংসমুখী তাঁতশিল্পকে রক্ষার যথাযথ কার্যকরী ব্যবস্থা গ্রহণের দাবী জানান হইয়াছে। প্রস্তাবে বলা হইয়াছে যে, জেলার প্রায় দশ লক্ষ লোক এই তাঁত শিল্পের উপর নির্ভর করিয়া জীবন ধারণ করিয়া থাকে। সুতরাং রং ও অন্যান্য কেমিক্যালস জাতীয় দ্রব্যমূল্যের উচ্চমূল্য ও নাইলনের সহিত অসম প্রতিযোগিতার সম্মুখীন হইয়া এই শিল্প বর্তমানে ধ্বংসের সম্মুখীন এবং এই শিল্পের উপর নির্ভরশীল ব্যক্তিগণ আজ প্রায় সকলেই বেকার।
ইরিধান উৎপাদনে ব্যর্থতার কারণ হিসাবে সরকারি সেচ ব্যবস্থায় উদাসিনতাকে দায়ী করা হয় এবং উপদ্রুত ব্যক্তি আইন প্রত্যাহার, আলু ও পাটচাষীদের স্বার্থরক্ষায় যথাযথ কার্যকরী ব্যবস্থা গ্রহণ, দ্রব্যমূল্য হ্রাসের ব্যবস্থার দাবী প্রভৃতি আরও কতিপয় প্রস্তাব গ্রহণ করা হয়।
আগামী দুই বৎসরের জন্য নিম্নোক্ত ব্যক্তিদের জেলা কমিটিতে নির্বাচন করা হয়।
সভাপতি জনাব আহমদুল কবীর, সহ-সভাপতি খন্দকার দেলোয়ার হোসেন, বাবু জীতেন ঘোষ, বিকল্পে সফিউদ্দিন আহমদ, আবদুল হাই, বিকল্পে মিয়া সিরাজুল হক, আবদুল হামিদ খান, মজলি নিজামুদ্দিন খান৷
সাধারণ সম্পাদক মীর মাহবুব আলী, যুগ্ম-সম্পাদক ধীরেন্দ্র কুমার মণ্ডল, আবদুর রহমান ঠাকুর, কোষাধ্যক্ষ জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী, সদস্য মিয়া সিরাজুল হক, বিজয় ভূষণ চ্যাটার্জি, সফিউদ্দিন আহমদ, আবদুল খালেক মৃধা, আনোয়ার আলী, নজিবর রহমান, ওয়ারেশ উদ্দিন, নরুল ইসলাম, বাবুর আলী, নূরুর রহমান, হাবিবুল্লাহ বাহার, মোসলেহ উদ্দিন ভুইয়া, মোঃ ইউনুস, আবুল হাশেম, ইউনুস তালুকদার, মনিন্দ্র গোস্বামী, মিজানুর রহমান, ওহিদুল হক।

সূত্র: সংবাদপত্রে বঙ্গবন্ধু চতুর্থ খণ্ড: ষাটের দশক ॥ তৃতীয় পৰ্ব ॥ ১৯৬৮