সংবাদ
১০ই ফেব্রুয়ারি ১৯৬৮
সুনামগঞ্জ মহকুমা ন্যাপের দ্বিবার্ষিক সম্মেলন
সংখ্যালঘুদের সম্পত্তি হস্তান্তরের ক্ষমতা প্রদানের দাবী
সুনামগঞ্জ (সিলেট), ৮ই ফেব্রুয়ারী (সংবাদদাতা)।- সুনামগঞ্জ শহরে পূর্ব পাকিস্তান ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টির সুনামগঞ্জ মহকুমা শাখার দ্বিবার্ষিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। কাউন্সিল সভায় সভাপতিত্ব করেন মহকুমা ন্যাপের সহ-সভাপতি জনাব সনাওর আলী। সভায় সিলেট জেলা ন্যাপের সহ সাধারণ সম্পাদক জনাব তারা মিয়া বর্তমান রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক পরিস্থিতি এবং ন্যাপের আদর্শ উদ্দেশ্য ও আভ্যন্তরীণ মতভেদ সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করিয়া বক্তৃতা করেন। তিনি নিম্নতম কর্মসূচীর ভিত্তিতে সকল বিরোধী দলের একটি ঐক্যবদ্ধ ফ্রন্ট গঠনের আহ্বান জানান। উক্ত সভায় নিম্নলিখিত কর্মকর্তা ও সদস্যদের লইয়া সুনামগঞ্জ মহকুমা ন্যাপ কমিটি গঠন করা হয়ঃ
সভাপতি-জনাব সনাওর আলী এডভোকেট। সহ-সভাপতি- বাবু ক্ষিতিশ চন্দ্র নাগ, জনাব আবদুল জব্বার। সাধারণ সম্পাদক-জনাব আলী ইউনুছ এডভোকেট। সহ-সাধারণ সম্পাদক- জনাব শওকতুল ইসলাম (আজাদ) ও জনাব আবদুল বারী। কোষাধ্যক্ষ-বাবু বিভাষ কুমার সরকার।
সভায় সার্টিফিকেট প্রথা বাতিল, বর্ধিত খাজনা ও ট্যাক্স মওকুব, বকেয়া খাজনা ও ঋণ মওকুব, খাজনার হার কমান, সর্বত্র পূর্ণ রেশনিং প্রথা চালু এবং ২০ টাকা মণ দরে চাউল ও ১০ টাকা মণ দরে গম সরবরাহ, সুরমা, পদ্মা, কালনী, কংস প্রভৃতি নদী খনন করিয়া মহকুমার বন্যা নিয়ন্ত্রণ এবং ক্রুগ মিশনের সুপারিশ অনুযায়ী প্রদেশের বন্যা নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থা করা, নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের দাম কমান, তৃতীয় বিভাগে উত্তীর্ণ ছাত্র-ছাত্রীদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পড়াশুনার সুযোগ হইতে বঞ্চিত করার ঘৃণ্য ষড়যন্ত্রের প্রতিবাদ, সংখ্যালঘুদের সম্পত্তি হস্তান্তরের ক্ষমতা প্রদান, দেশরক্ষা আইন ও জরুরী অবস্থা প্রত্যাহার, জননেতা মনি সিং, ন্যাপ নেতা হাজী মোহাম্মদ দানেশ ও সৈয়দ আলতাব হোসেন, কৃষক নেতা হাতেম আলী ও জিতেন ঘোষ, মতিয়া চৌধুরী, পঙ্কজ ভট্টাচার্য, রাশেদ খান মেননসহ সকল রাজবন্দীর আশু মুক্তিদান, সুনামগঞ্জের প্রখ্যাত জননেতা শ্রী প্রসুন কান্তি রায় (বুরুণ বাবু), ছাত্রনেতা ফরহাদসহ সকল রাজনৈতিক নেতা ও কর্মীর উপর হইতে হুলিয়া ও গ্রেফতারী পরোয়ানা প্রত্যাহার, আওয়ামী লীগ নেতা শেখ মুজিবের প্রকাশ্য আদালতে বিচার, পূর্ব পাকিস্তানের পূর্ণ আঞ্চলিক স্বায়ত্তশাসন কায়েম ও পশ্চিম পাকিস্তানের এক ইউনিট বাতিল, সেন্টো- সিয়াটো ও পাক-মার্কিন সামরিক চুক্তি বাতিল, স্বাধীন ও নীরপেক্ষ পররাষ্ট্র নীতি কায়েম, প্রাপ্তবয়স্কদের সার্বজনীন ভোটাধিকার ও প্রত্যক্ষ নির্বাচনের ভিত্তিতে পূর্ণ গণতন্ত্র কায়েম এবং বাকব্যক্তি ও সংবাদপত্রের স্বাধীনতা প্ৰদান করা প্রভৃতি দাবী জানাইয়া এবং নিম্নতম কর্মসূচীর ভিত্তিতে সকল বিরোধী দলের ঐক্যবদ্ধ ফ্রন্ট গঠনের আহ্বান জানাইয়া প্রস্তাব গৃহীত হয়।
অপর এক প্রস্তাবে ভিয়েতনামের মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি পূর্ণ সমর্থন জ্ঞাপন করিয়া সরকারীভাবে মুক্তিযোদ্ধাদের সমর্থন জানানোর জন্য দাবী জানানো হয়। অন্য প্রস্তাবে রংপুর কাউন্সিল সভাকে অবৈধ ও অগণতান্ত্রিক ঘোষণা করিয়া পার্টির এই সংকটময় মুহূর্তে যে ১৪৯ জন কাউন্সিলার ঢাকার বিশেষ কাউন্সিল সভা আহ্বান করিয়া ন্যাপের সাম্রাজ্যবাদ, সামন্তবাদ ও স্বৈরাচার বিরোধী পতাকাকে সমুন্নত রাখিয়াছেন তাহাদের প্রতি অভিনন্দন জানানো হয়৷
সূত্র: সংবাদপত্রে বঙ্গবন্ধু চতুর্থ খণ্ড: ষাটের দশক ॥ তৃতীয় পৰ্ব ॥ ১৯৬৮